May 4, 2024, 7:01 pm
শিরোনামঃ

জিলানী বাহিনী’র মূলহোতা সহ, ৩জন কে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট সময় : Thursday, April 21, 2022
  • 333 Time View

মোহাম্মদ ইরফান।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে হত্যা মামলায় স্বাক্ষী দেওয়ার ঘটনায় স্থানীয় ভূমিদস্যু চক্রের ‘জিলানী বাহিনী’র মূলহোতা আব্দুল কাদের জিলানীকে দুই সহযোগীকে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে একের পর হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এমন কি হত্যা মামলায় স্বাক্ষী দেওয়ায় হত্যা করে তারা।

সংস্থাটি বলছে, চক্রটি স্থানীয় কৃষকদের জমিদখল করে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে আসছিল। এর প্রতিবাদ করায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাষ্টার ও রফিকুল ইসলামকে হত্যা করে। এই হত্যা মামলা থেকে বাঁচার তারা আরও একটি হত্যাকান্ড ঘটায়।

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

কমান্ডার মঈন বলেন, ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার জামতলী গ্রামে গত( ১৪ এপ্রিল) রাতে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা আবুল কালাম ও তার দুই ভাতিজাকে বাড়ির সামনে হত্যার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে আবুল কালাম (৫৮) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এই ঘটনায় নিহতের ভাতিজা বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় এলাকাবাসী হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব-১৪’র একটি দল উক্ত হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত আব্দুল কাদের জিলানী (৪৭) ও তার ভাই আব্দুস সোবহান ও জিলানীর ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২৭) কে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আব্দুল কাদের জিলানীর বাঁশ ঝাড় থেকে হত্যায় ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে।

স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, নিহত আবুল কালামের ভাতিজা মো. সোহাগ নিহত রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলার সাক্ষী ছিলেন। সেই মামলায় সোহাগ আদালতে স্বাক্ষী দেওয়ায় জিলানী ও তার সহযোগীরা তাকে মারধর করে ও হত্যার হুমকি দেয়। এরই জের ধরে গত ( ১৪ এপ্রিল) রাতে মামলার বাদী সোহাগ স্থানীয় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে আব্দুল কাদের জিলানীর পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী হত্যার উদ্দেশ্যে তার উপর সশস্ত্র আক্রমণ চালায় সন্ত্রাসীরা। পরবর্তীতে তার চিৎকারে তার চাচা আবুল কালামসহ তার ছোট ভাই ও চাচাতো ভাই তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসলে আব্দুল কাদের জিলানী, লাল মিয়া এবং রাকিবুল ইসলামসহ নয় জন তাদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। ঘাতকরা আবুল কালামের মাথায়, মুখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপুরি আঘাত করে এলাকা ত্যাগ করে। পরবর্তীতে সবাইকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে আবুল কালাম আজাদ এর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পরে গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়। জিলানী ও রাকিব ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার কান্দানিয়া এলাকার একটি বাড়িতে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে গাজীপুর সদর থানার পিরোজালিতে অবস্থান নিলে সেখান থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। লাল মিয়া প্রথমে ভালুকায় আত্মগোপন করে পরবর্তীতে গাজীপুর চান্দীনা এলাকার একটি বাড়িতে অবস্থান নেয়। সর্বশেষ গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় অবস্থান নিলে সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়।

র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, মূলত বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাষ্টার হত্যা মামলা এবং রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলা থেকে বাঁচার জন্য তারা এ হত্যাকান্ড ঘটায়। জিলানীর নেতৃত্বে চক্রটি জালিয়াতির মাধ্যমে এলাকার কৃষকদের জমি দখল করে বিভিন্ন কোম্পানীর কাছে অতিরিক্ত মুনাফায় বিক্রয় করত। বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টার ঐ এলাকার একজন গন্যমান্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ১৯ বছর ধরে একটি রাজনৈতিক দলের ওয়ার্ড সভাপতি ছিলেন। প্রায় ৮ বছর ধরে তিনি স্থানীয় দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি ছিলেন। এলাকার বিভিন্ন গরিব মানুষকে প্রায়ই বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করতেন। গ্রামের গরিব মানুষেরা বিভিন্ন সময়ে তার কাছে অভিযোগ নিয়ে আসত। তিনি তাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতেন এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। তাদের এই কাজের প্রতিবাদ করায় ২০১৮ সালে ৪ জুলাই রাত ১২ টার দিকে মতিন মাস্টারকে হত্যা করে তার গলা কাটা লাশ পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে ফেলে রাখে আব্দুল কাদের জিলানী ও তার বাহিনী। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হলে তদন্তে আদুল কাদের জিলানীর ভাই তোফাজ্জল হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন ও তার আরেক সহযোগী মো. মোবারক হোসেনসহ আট জনের নামে আদালতে চার্জশীট দেয় পুলিশ। পরবর্তীতে এই মামলা থেকে নিজের ভাই ও সহযোগীদের বাঁচাতে এবং স্থানীয়ভাবে ভীতি সঞ্চার করার উদ্দেশ্যে স্থানীয় কাউকে হত্যা করে মতিন মাস্টার হত্যা মামলার সাক্ষীদের ভয় দেখিয়ে হাজিরা থেকে বিরত রাখার পরিকল্পনা করে। রিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল রাত ১১ টার দিকে স্থানীয় একটি স্কুলের দপ্তরি রফিকুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। এই রফিকুল মতিন মাস্টার হত্যার বিচারের দাবিতে মিছিল মিটিং করে আসছিলেন। দপ্তরি রফিকুল ইসলাম হত্যায় জিলানীসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশীট দেয় পুলিশ। এই রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলার সাক্ষী মো. সোহাগকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এই দুই মামলার সাক্ষীদের হত্যা কিংবা হাত পা কেটে ফেলার পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সাক্ষী সোহাগকে ঘটনার দিন রাতে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হলে তার চাচা নিহত আবুল কালাম তাকে বাঁচাতে এসে নির্মমভাবে খুন হন।

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, আব্দুল কাদের জিলানী এলাকায় সন্ত্রাসী, ভূমি দখল ও বিভিন্ন অপকর্মের জন্য ২০ থেকে ২৫ জনের একটি বাহিনী গড়ে তুলে। সে এলাকায় বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে কৃষকদের জমি জোরপূর্বক দখল করে বিভিন্ন কোম্পানীর কাছে অতিরিক্ত মুনাফায় বিক্রয় করত।

শেয়ার করুন
More News Of This Category

Dairy and pen distribution

ডিজাইনঃ নাগরিক আইটি ডটকম
themesba-lates1749691102