এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজাঃ
১৯৭৫ থেকে ৮১ সনের দুর্দিনের কথা এখন অনেকেই বলেন না, হয়তো অনেকেই ভুলে গেছেন অথবা অনেকেই জানেন না। অনেকেই এখন নেই এবং যারা দুয়েকজন আছেন,তারাও বলতে চান না। সবাই কেমন জানি হয়ে গেছেন। আগের পর্বে লিখেছিলাম, যে কয়েকজন, সেই দুর্দিনের এখন দায়ীত্বপুর্ণ অবস্থানে আছেন, তারাও কেমনজানি চিনতে পারেন না। আসলে ৭৫ পরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতি ছিল অন্য এক মাত্রায়, যা এখন অনুভব করা যাবে না। যখন সামরিক স্বৈরাচার জিয়ার কড়া সামরিক শাষন, তখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোন হলে পুলিশ ঢুকতো না, ভিসির পারমিশন ছাড়া। তারপরও সব সময় আমরা আতংকে থাকতাম। কতো অন্দোলন, সংগ্রামের ইতিহাস, সেক্রিফাইসের ইতিহাস । সেই গোলাম সরোয়ার ভাই, খ ম জাহাঙ্গীর ভাই, কাজী ইকবাল ভাই, নুর মোহম্মদ শরিফ ভাই, শাহ নেয়াজজামান চৌধুরী আজাদ ভাই, টাঙ্গাইলের সফিক ভাই,দিজেন দা, মহিবুর রহিম বাবুল ভাইদের এখন আর দেখিনা। কতো দিন, কত রাত কেটেছে তাদের সাথে তার হিসেব আমার কাছে নেই। সেই জহিরুল হক হল, জগন্যাথ হল, পুরাতন ঢাকার সলিমুল্লা কলেজ, টি এস সি,শহিদুল্লাহ হল, কবি জসিমউদ্দিন হলে এখন যেতে হয় না। শুধু এটুক মনে আছে, অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষার জন্য ২ মাস করে ৪ মাস অনেক পড়াশুনা করেছি। আমার নেতারাও আমাকে সুযোগ দিয়েছেন। ৭৫ থেকে ৮১ পর্যন্ত, জীবনের কত ঘন্টা ছাত্রলীগের রাজ্নীতীতে কেটেছে, তার হিসেব আমার উপরোক্ত নেতারা, যারা এ ধরাধাম থেকে চিরতরে চলে গেছেন, যাদের জন্য সব সময় দোয়া করি, তারা ভালো বলতে পারতেন। যদিও এখন যারা আল্লাহর রহমতে বেচে আছেন, আমাদের প্রিয় নেতা, কাদের ভাই, জালাল ভাই, রবিউল মোক্তাদির ভাই, চুন্নু ভাই, নানক ভাই, মুকুল বোস দা, রকিবুর রহমান ভাই, মানিকগঞ্জ এর মহিউদ্দিন ভাই, সালাম ভাই, ড: আব্দুস সোবহান গোলাপ ভালো বলতে পারবেন। অথচ এখন আমার হাতে অনেক সময়, রাজনীতির সংগঠনে নেই। রাজ্নীতীর জন্য ওকালতিটাও ভালভাবে করতে পারিনি। আবার এখন করোনা মহামারী, প্রতিমুহুর্তে মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিচ্ছেন, অনেক কাছের মানুষ। অথচ সেই মোহতারেমা মিস ফতেমা জিন্নাহর, বরিশাল অশ্বিনীকুমার টাউন হলের নির্বাচনী জনসভায়ও আমি ছিলাম। জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বের হয়ে, পটুয়াখালীতে জুবিলী হাই স্কুলের মাঠে জনসভা করেন এবং ভোলা যাওয়ার পথে, আমাদের আদালত পাড়া বাসায়ও গিয়েছিলেন এবং আমাদের বাসার সামনে মাঠে বসে চা খেয়েছেন, তাও আমার এখনো ঢের মনে আছে। এক সময়ের পুর্ব পাকিস্থান আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক, আমেনা বেগম, পটুয়াখালীতে একটি জনসভায় আসেন এবং আমাদের আদালত পাড়ার বাসায় ওঠেন এবং পটুয়াখালী কলের পুকুর পাড়ে জনসভা করেন। তখন পটুয়াখালীতে মেয়েরা কেউ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে ছিল না। তখন আমার বোন ডাক্তার জাহান আরা বেগমই, নেত্রী আমেনা বেগমের সাথে পটুয়াখালীর পুরো সময়টায় ছিলেন । আর এসব কিছুই আমার পিতা মরহুম আব্দুল আজিজ খন্দকার এর জন্য। যিনি ১৯৫৮ সনে, রাজনীতির জন্য এবং তার মায়ের জন্য ই পি সি এস ক্যাডারের চাকুরি ছেড়ে, ঢাকা থেকে, পটুয়াখালীতে আইন পেশা শুরু করেন এবং ঐ সময় পটুয়াখালী মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হন এবং পরে পটুয়াখালী জেলা হলে, পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ এ এম পি এ এবং ১৯৭৩ এ এম পি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুর মনোনয়নে। পটুয়াখালী অঞ্চলে তিনি কত বড় রাজ্নীতীবিদ ছিলেন, তা বঙ্গবন্ধু খুব ভালো জানতেন। জানতেন, তাজউদ্দিন সাহেব, রব সের্নিয়াবাদ সাহেব, বেগম জোহরা তাজউদ্দিন , মালেক উকিল সাহেব, মিজান চৌধুরী সাহেব, আব্দুর রাজ্জাক ভাই সহ ঐ সময়ের সকল নেতারাই। বর্তমান সময়ের জাতীয় নেতা জনাব আমির হোসেন আমু ভাই, তোফায়েল আহমেদ ভাই, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ভাই, নানক ভাই সহ অনেকেই তাকে জানাতেন ব্যক্তিগত ভাবে। আর জননেত্রী শেখ হাসিনা খুব ভালো করে জানতেন বলেই হয়তো, ২০১২ সনে বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কনভেনশন হলে, সভা শুরু আগে অনেককে ডেকে, কানে কানে কিছু কথা বলেন। আমাকেও ডেকে শুধু বললেন, তুমিতো আব্দুল আজিজ খন্দকার এর ছেলে। শুধু এটুকুই। বিকেলে যখন জননেত্রী আমাকেই বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক ঘোষনা করলেন, তখন বুঝলাম, আমার পিতার জন্যই হয়তো আমাকে নেত্রী সিলেক্ট করেছেন। সম্ভাবত আমার আব্বার কারনেই আমাদের পটুয়াখালী বাউফলের বড় ভাই, এম পি, সাবেক হুইপ, সাবেক চীফ হুইপ এবং বর্তমামে একটি সংসদীয় কমিটির প্রধান। অথচ বড় ভাইয়ের, সে বিষয়টি এখন আর স্মরণ নেই। স্মরণ নেই ৯৬ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য আমাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ার জন্য সমঝোতা পত্র প্রস্তত এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে তা জমা না দেয়া। কত আগের বিষয়,এখন মনে নাথাকারই কথা । সেই কবে, ১৯৭৯ সনের আমার পিতার মনোনয়ন সেক্রিফাইস বা ১৯৯৬ তে আমার বরাবরে মনোনয়ন সমঝোতা, এতোদিন পর তার মনে থাকার কথা না বা ৯৬ এর নির্বাচনে বাউফলের রাজাপুর নামক কেম্দ্রে উপ নির্বাচন, সেই বড় ভাইর সাথে স্পিডবোটে ধুলিয়া যাওয়ার পথে, আমার চাপেই রাজপুরের ভোট বন্ধ এবং পরে উপ নির্বাচনে, ২৯ ভোটের ব্যবধানে বিজয়, এগুলো বড় ভাইর মনে রাখার বিষয়ও না, মনে রাখলে তারই ক্ষতি। তাইতো এতদিন পর, বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এবং উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবে, নতুন করে পুরাতন সত্য কাসুন্দি শুনাতে চান । তিনিও ভালো করে জানেন, ওগুলো অনেকের কাছেই এখন বস্তাপচা গল্পের মত মনে হয়। সেজন্য ইদানিং অনেকে নব্য আওয়ামী লীগার, সুবিধাবাদী, হাইব্রিড, বি এন পি জামাতের অনুপ্রবেশকারী নিয়ে অনেক কথা বলেন। কিন্তু বস্তুত ওতে কেউ কান দেন না, যেমনটি বাউফলের মোতালেব ভাই, ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট এর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নৃশংস হত্যাহত্যাকাণ্ডের পরও, বরিশালের যে জঘন্য আনন্দ মিছিলের বিষয় এনেছেন তাতেও অনেকেই কান দেবে না। কেননা সময়টা অনেক গড়িয়ে গেছে। তিনি এখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, সময়টা বড় ভাইয়ের হাতের নাগালে। বাউফলের আব্দুল গফুর মিয়া, আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া, সিদ্দিক ফরাজী, হেমায়েত মিয়া, এডভোকেট ইউনুস মিয়া, জসিমউদ্দিন ফরাজী, বাবু পুণ্য চন্দ্র মজুমদার এর মত আপনিও হয়তো একদিন হারিয়ে যাবেন এবং সবকিছু আগের মত ফক ফক করতে থাকবে, শুধু ফর্মুলাটা ভিন্ন হবে !।( ক্রমশঃ) এডভোকেট খোন্দকার শামসুল হক রেজা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক লীগ। ২২ জুলাই’ ২০২১।