নিজস্ব প্রতিনিধিঃ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর আমির ডা. শফিকুর রহমান মন্তব্য করেছেন, একাত্তরে যদি জামায়াত কোনো ভুল করে থাকে এবং তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়, তাহলে দলটি জাতির কাছে ক্ষমা চাইবে।
মঙ্গলবার পূর্ব লন্ডনের একটি রেস্টুরেন্টে যুক্তরাজ্যে বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এ মন্তব্য করেন।
ডা. শফিকুর রহমান ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “এই অভ্যুত্থানে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ অংশগ্রহণ করেছে, এমনকি প্রবাসী বাংলাদেশিরাও তাদের সাধ্য অনুযায়ী আমাদের সংগ্রামে সহায়তা করেছেন।” প্রবাসীদের রেমিটেন্সের ভূমিকা তুলে ধরে জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসীরা শুধু অর্থনৈতিক সহায়তা নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তাও প্রদান করতে পারেন। আমি তাদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, যেন তারা শুধু আর্থিক নয়, বরং ‘ইন্টেলিজেন্স রেমিটেন্স’ পাঠানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নেও অবদান রাখেন। এতে করে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রবাসীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন।”
বিগত সরকারের ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ডা. শফিক বলেন, “যতটা উন্নয়ন হতে পারত, বাস্তবে তা হয়নি। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে যে ব্যয় দেখানো হয়েছে, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো একই ধরনের প্রকল্পের জন্য এর তিন ভাগের এক ভাগ ব্যয়ে কাজ সম্পন্ন করেছে। আমাদের দেশে কোনো প্রকল্প সময়মতো শেষ হয়নি, বরং একের পর এক প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে এবং সেই সঙ্গে ব্যয়ও বাড়ানো হয়েছে। এভাবে দেশটি লুটপাট করে নিঃস্ব করা হয়েছে।”
একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীের ভূমিকা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. শফিক বলেন, “যদি একাত্তরে জামায়াতে ইসলামী কোনো ভুল করে থাকে এবং তা সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, আমি জাতির কাছে ক্ষমা চাইব।” ব্রিটেনের আদালতে চৌধুরী মাইনুদ্দিনের বিরুদ্ধে রায় সম্পর্কিত আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “এখানে বিচারকদের পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের ব্যাপারে তারা ‘জেনোসাইড অব জাস্টিস’ মন্তব্য করেছেন।” তিনি আরও বলেন, “১৫ বছর আমাদেরকে আমাদের অফিসে বসতে দেওয়া হয়নি, কথা বলতে দেওয়া হয়নি, র্যালি করার অনুমতি ছিল না। আমরা সাংবাদিকদের মাধ্যমে জাতির কাছে পৌঁছাতে পারিনি।”
ডা. শফিক আরও বলেন, “জাতিগতভাবে অনৈক্য এবং দুর্নীতির কারণে আমরা জাতি হিসেবে এগিয়ে যেতে পারিনি। দুর্নীতি আমাদের জন্য একটি জাতীয় লজ্জার বিষয়। যুক্তরাজ্য নিজেদের দুর্নীতিমুক্ত রাখতে পারায় বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছেছে। কিন্তু আমরা সেই পথ অনুসরণ করতে পারিনি। যারা সমাজ পরিচালনা করবেন, তারা যদি পরিচ্ছন্ন না হন, তাহলে সমাজ পরিচ্ছন্ন হবে না।”