মোঃ ইব্রাহিম হোসেনঃ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী ইতিহাসের রাখাল রাজা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আদর্শের সৈনিক, বাউফল উপজেলার কৃতি সন্তান ১৯৭০-১৯৭৩ সালের পটুয়াখালী (২) বাউফল উপজেলার দু’বারের সাবেক সংসদ সদস্য, ১৯৬৯ সালে পটুয়াখালী জেলার আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সাবেক সফল সাধারণ
সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাএলীগের সাবেক মেধাবী ছাত্র নেতা আলহাজ্ব এডভোকেট খোন্দকার শামসুল হক রেজার পিতা মরহুম এডভোকেট আবদুল আজিজ খন্দকারকে (মরণোত্তর)মাতৃভাষা আন্দোলনের স্বীকৃতি স্বরূপ “ভাষা সৈনিক” “সম্মাননা স্মারক” পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রোজ সোমবার প্রদান করা হয়েছে।
সাবেক গণ পরিষদ সদস্য সাবেক এম.পি. এডভোকেট মরহুম আবদুল আজিজ খন্দকার এর সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্তঃ
মরহুম আবদুল আজিজ খন্দকার ১৯২৩ সনে (১৯২৩-১৯৯১) পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানাধীন কনকদিয়া ইউনিয়নের বৌলতলী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। মাত্র ৫ বছর বয়সে তাঁর পিতা মরহুম মোবারক আলী খন্দকার মৃত্যুবরণ করেন। বাউফলের বীরপাশা স্কুল থেকে ১ম শ্রেণীতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং বরিশাল বি.এম. কলেজ থেকে ১ম শ্রেণীতে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করেন এবং বরিশাল বি.এম. কলেজ থেকে ডিষ্টিংশান সহ বি.এস,সি ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৪৬ সনে ভারত সরকার অধীন সেন্ট্রাল সিভিল সার্ভিসে কোলকাতায় চাকুরীতে যোগদান করেন।১৯৪৭ সনে দেশ বিভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সচিবালয়ে যোগ দেন। চাকুরীরত অবস্থায় ১৯৫৪ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এলএলবি ডিগ্রী নেন। ১৯৫৭ সনে পূর্ব পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (ই.পি.সি,এস)প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হলেও ক্যাডার সার্ভিসে যোগ না দিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে হাজার ১৯৫৮ সনে পটুয়াখালী মহাকুমা শহরে আইন পেশা শুরু করেন।
আইন পেশার শুরুতে তিনি আওয়ামী লীগের সক্রীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর হিসেবে কাগমারী সম্মেলনে যোগদান করেন এবং পটুয়াখালী মহাকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীকালে পটুয়াখালী জেলা গঠিত হলে তিনি পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং তৎকালীন সময় বৃহত্তর পটুয়াখালী জেলায় আওয়ামী লীগ সংগঠিত করার বিষয় বিরাট ভূমিকা পালন করেন। ৬৯ গণআন্দোলনে এবং পরবর্তীকালে ৭১ এর মার্চের অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের তিনি এম.পি নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সনের স্বাধীনতা সংগ্রামের বৃহত্তর পটুয়াখালী জেলায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। পাকিস্তান সরকার তার অনুপস্থিতিতে তাকে যাবৎজীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন এবং সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে এবং পাক সেনারা তার বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে।
স্বাধীনতার পরবর্তীতে ১৯৭২ সনে গণপরিষদ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানে তিনি অন্যতম স্বাক্ষরকারী। ১৯৭৩ সনের নির্বাচনে তিনি পুনরায় আওয়ামী লীগের এম.পি নির্বাচিত হন।
১৯৭৩ সনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাকে পটুয়াখালী জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কমিটি এবং পটুয়াখালী জেলা প্রাথমিক স্কুল বাস্তবায়ন ও শিক্ষক নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন।
১৯৭৫ সনে ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে এবং সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সর্বাত্বক ভূমিকা পালন করেন।
৭৫ সনে খুনি মোস্তাক বঙ্গভবনে সংসদ সদস্যগণের বৈঠক ডাকলে যে কয়জন এম.পি সংসদ উক্ত বৈঠকে যোগদানে বিরত থাকেন তার মধ্যে তিনি অন্যতম।
৫২-৬৬, ৬৯ ও ৭১ স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ১৯৭৫ পরবর্তীতে ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তার অবদান ছিল উল্লেখ করার মতো। শত অন্যায় অত্যাচার নিপীড়নের পরও তিনি কখনও নীতির প্রশ্নে আপস করেনী এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতি তিনি ছিলেন আপোষহীন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাকে পটুয়াখালী আওয়ামী লীগের প্রান বলে উল্লেখ করতেন।
ব্যক্তিগত জীবনে মরহুম আবদুল আজিজ খন্দকার ছিলেন সৎ, নির্ভীক, সাহসী এবং ধর্ম পরায়ন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও দেশের মুক্তি আন্দোলনে তিনি ছিলেন কমিটেড। দলমত নির্বিশেষ সকলের আস্থাভাজন ছিলেন তিনি।
বর্তমান রাজনীতির যে ধারা চলছে তা থেকে তিনি ছিলেন আলাদা। তিনি সব সময় দেশ জাতি ও দলকেই প্রাধান্য দিতেন। তার রাজনৈতিক উদারতা একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে ১৯৭৯ সনের সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের নমিনেশন পেয়েও ৩ দিন পর আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য অপর প্রার্থীর অনুরোধে তার পক্ষে মনোনয়ন সেক্রিফাইস করেন এবং তার পক্ষে কাজ করে উক্ত প্রার্থীর বিজয় লাভের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেন এবং উক্ত প্রার্থী এম.পি নির্বাচিত হন।
রাজনীতির বাহিরে তিনি বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ অবদান রাখেন। আইনজীবি হিসেবেও তিনি ব্যাপক প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। পটুয়াখালীতে বারে তিনি ১৯৭৫-৭৬ ও ৭৭-৭৮ সনে দুবার সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৬২ সনে পটুয়াখালী পৌরসভা নমিনেটেড মেম্বার হয়। দীর্ঘ দিন তিনি পটুয়াখালী জেলা সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। পটুয়াখালী কলেজ গভার্নিং বডির নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও সদস্য ছিলেন।
১৯৯১ সনে ঢাকা থেকে সাদিয়া লঞ্চ যোগে পটুয়াখালী যাওয়ার পথে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে শ্বাসকষ্টে তিনি মৃত্যুবর করেন।