পর্ব ৩৪ :- ”যে ইতিহাসটি বলা দরকার” : এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজা
রিপোর্টারের নাম
আপডেট সময় :
Monday, September 20, 2021
220 Time View
এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজা
রাজ্নীতীর দাবা খেলা ! আমার অব্বাকে ঐ দাবা খেলতে কখনো দেখিনি। এমন কি তা খেলতেও না। চা খাওয়া ছাড়া, কোন কিছু খেতে দেখিনি । কোন দিন কোন মিথ্যে কথা বলতে শুনিনি। ওকালতি পেশা বা ঢাকার ভাড়ার আয় বা নিজস্ব কৃষি জমির আয় ব্যতীত কোন ভিন্ন আয় করতেও দেখিনি। ভালো ইংরেজি, অংক জানতেন। কোর্টের আরগুমেনটে খুব একটা হারতে দেখিনি।আবার বাসার বাজারেও কোন কৃপণতা দেখিনি আবার আহামরিও কিছু করতে দেখিনি। ধর্মীয় কুসংস্কারও দেখিনি, আবার সময় পেলে জামাতে নামাজ পড়েননি, এমনটিও দেখিনি । আব্বা আমাদের সব সময় মসজিদে জামায়েতে নামাজ পড়ার তাগিদা দিতেন। মাঝে মাঝে আমাদের বলতেন, ক্লাস ফাইব এর পর, তার নামাজ কবে বাদ গেছে , তার মনে নেই। পাকিস্থান আমলে, আব্বা আদালত পাড়ার বড় জামে মসজিদে, সব সময় নামাজ পড়তেন। আমরাও যেতাম । বড় মসজিদের ইমাম সাহেব খুব ভালো বয়ান করতেন। বাংলাদেশে তার মত, ভালো বয়ান করা হুজুর কমই ছিলো। শুক্রবার মসজিদের বাহিরে আদালতের মাঠেও অনেক লোক হতো । ঐ মসজিদে নামাজ না পড়লে শান্তি পেতাম না। অথচ আমার আব্বা, স্বাধীনতার পর, এক ওয়াক্ত নামাজও ঐ বড় মসজিদে পড়েন নি, আমরাও পড়িনি। হয়তো অনেকেই কারনটা জানেন না। আব্বাও বলেননি কাউকে । আমরা জানতাম। ৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধের সময়, পাক আর্মির মেজর নাদের পারভেজ, এক হিন্দু বাড়ি দখল করে, ওই ইমাম সাহেব কে,সেই বাড়িতে থাকতে দিয়েছিল এবং ঐ ইমাম সাহেব ৭১ সনে ঐ বাসায় থেকেছেন। আর ঐ কারনে আব্বা জীবিত কালীন, ঐ ইমাম সাহেবের পিছনে নামাজ পড়েন নি। সেই আব্দুল আজিজ খন্দকার এর ছেলে, রাজ্নীতীর দাবা খেলা শেখবে কোথায়। আমার ছোট ছেলে আরিফ, এই করোনার মাঝে, আমার সাথে দাবা খেলতে চায়। আসলে আমি ভাল পারি না। তাও একদিন খেললাম। কিন্তু আমি হেরে গেলাম। আসলে সবার জীবন এক রকম যায় না। যেই কোরবান আলি সাহেবের সাথে সকালে,বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে মিটিং করলাম, সেই কোরবান আলি সাহেব, বিকেলে এরশাদ সরকারের মন্ত্রী হয়। এটাই কি দাবা খেলা। আব্বা যদি দাবা খেলা জানতেন , তাহলে হয়তো, ১৯৭৯ সনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও,আ স ম ফিরোজ ভাই বরাবরে, সেক্রিফাইস করতেন না। বা করলেও তাকে হারাবার ফন্দি করতেন । বা আব্বা যদি দাবা খেলা জানতেন, আর আমাকে শিখিয়ে যেতেন, তাহলে আমিও হয়তো ১৯৯৬ সনে, আ স ম ফিরোজ ভাইর, আমার বরাবরের নমিনেশন সেক্রিফাইস রেজুলেশন আ স ম ফিরোজ ভাই বা জনাব, শাহজাহান মিয়ার হাতে না দিয়ে, আমি সরাসরি মাননীয় নেত্রীর হাতে দিতাম, বা আবুল কালাম খান, ছোট নিজাম খান, গিয়াসউদ্দিন মৃধা, নুরু মৃধা ভাইদের কথা মত, ৯৬ এর নির্বাচন থেকে বিরত থাকতাম,বা আবুল কালাম খান, গিয়াসউদ্দিন মৃধা ভাই সহ বহু ভাইদের কথা মত রাজাপুর সেন্টারের উপনির্বাচনে না যেতাম, তাহলে হয়তো ফলাফল অন্যরকম হতে পারতো । তাহলে কি সবাই বলতেন, আমি দাবা খেলা বুঝি, রাজ্নীতী ভাল বুঝি। আসলে আমদের সময়টা কি এমনি ! কিন্তু বিপরীত কথাও তো আছে। মানুষ কত দিন বাচে ?। আমরাও বা কতদিন বাঁচব। নিশ্চয়ই অনাদিকাল না। আর সে জন্য বলছি, সেই সাবেক উপজিলা চেয়ারম্যান, মজিবর ভাই এখনো বেচে আছেন। ২০১৪ সনের পরের উপজিলা নির্বাচনের নমিনেশন মিটিং এর শুরুতে, তিনি বগাবন্দরের একটি মসজিদে বসে বলেছিলেন, “রেজা ভাই,এবারে আওয়ামী লীগে আপনি, উপজিলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হন। আমি আপনার প্রস্তাবক হব। আমি তার কথা অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করেছি। তাইতো উনি আমাকে অন্তর দিয়ে রেজা ভাই ডাকেন। অনেক ভালো লাগে। অথচ ফিরোজ ভাইর সমর্থনে মজিবর ভাই ২ বার উপজিলা চেয়ারম্যান হলেন ! । সেই ফিরোজ ভাই কে, তিনি এখন কি বলে ডাকেন ! । সেই এডভোকেট মো শাহজাহান সাহেব ওনাকে এখন কি বলে সম্বোধন করেন। শেষে, আ স ম ফিরোজ ভাইকে উদ্দেশ্যে একটা কথা বলে, শেষ করবো। যানিনা, ওনার নলেজে যাবে কিনা। তবুও বলছি, ফিরোজ ভাই, ১৯৯৬ সনের ১২ জুন নির্বাচনের দিন, দুপুরে সেই রাজাপুর সেন্টারের কাছে, খালের মাঝে, একটি সাকোর নিচে স্পিডবোটে বসে, যে কথা হয়েছিল, বা কি ভাবে রাজাপুর সেন্টারের ভোট বন্ধ হলো, বা রাজাপুর সেন্টারের ভোট গণনার সময়টা, বা আপনি রাজপুর সেন্টারের নির্বাচনে, মাত্র ২৯ ভোটে এম পি হলেন, বা ২০০১ এর নির্বাচনে সেই শহিদুল আলম তালুকদার এর কাছে ১৮ হাজারের কাছাকাছি ভোটে হারলেন। সেটা অনেক দিন আগের। এতদিন পর সেটা আপনার মনে নাও থাকতে পারে। কিন্তু ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনের পরের দিন, আমার বাড়ীর কাছে, আয়লা হাই স্কুলের সামনে, সংবর্ধনার সময় বলেছিলেন, “রেজা এটা আমার শেষ নির্বাচন, এর পর তুমি সংসদ নির্বাচন করবে ” । তারপর আপনি বগা হয়ে লঞ্চে ঢাকা গেলেন । সেটা কি আপনার মনে আছে ফিরোজ ভাই ! । অথবা ২০০৯ সনের জানুয়ারী মাসে উপজিলা নির্বাচনের সময়, সূর্যমুনির মিটিং এর পর রাতে, আমার মোটর সাইকেল বহরে রামদা হামলা হয়েছিল,অথবা ঐ উপজিলা নির্বাচনের ৩ দিন পূর্বে গোলাবাড়ীর মোরে, আমরা, যখন পরস্পরে গাড়িতে ক্রস করছিলাম, তখন গাড়ির গ্লাস নামিয়ে আপনি, আমাকে বলেছিলেন ” রেজা তুমি উপজিলা নির্বাচন থেকে উইথড্র হও” । তখন আমি বলেছিলাম, ” ফিরোজ ভাই নির্বাচন মাত্র ৩ দিন বাকি, আপনি এবং আপনার দলের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব হাওলাদার নিষেধ করলে, আমি উপজিলায় মনোনয়ন ফাইলই করতাম না। আর এখন,উইথড্র হওয়ার সময় নেই। আর এখন নির্বাচন থেকে বশে গেলে, কেউ বলবে, আমি টাকার বিনিময় বসে গেছি। আব্দুল আজিজ খন্দকারের ছেলে ১ ভোট পেলেও নির্বাচন করবে। আপনাকেও বলে রাখি, আপনার মৃত্যর পর ——————“। আসলে আমরা কেউ থাকবো না। থাকবে আমাদের অতীত। যা সময় থাকতে আমরা করে দেখাতে পারলাম না। এটাই আমাদের নিয়তি।( ক্রমশঃ) এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজা, সবেক সাধারন সম্পাদক,বাংলাদেশ কৃষক লীগ। ২১ জুন ‘২০২০