প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ৭, ২০২৪, ১০:১২ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অগাস্ট ১৪, ২০২২, ৬:৪২ পি.এম
স্মৃতির পাতায় ১৫ আগস্ট, আজ জাতীয় শোক দিবশ, বিনম্র শ্রদ্ধা শহিদের প্রতি
রাত চারটা, ফজর নামাজের আজানের কিছু সময় আগে, পঁচিশে মার্চের কালো রাতের পুনরাবৃত্ত ঘটল কামানের গুলিতে। মা হটাৎ চমকে উঠলো, বাবা, দাদা, দাদী কাচুমাচু করছে ভয়ে। ৩২ নম্বর ধানমন্ডি থেকে আমাদের বাড়ী মাত্র এক কিলো মিটার হতে পারে। মুহু মুহু বিকট শব্দে আমিও জেগে উঠলাম। কিছু বুজে উঠার আগেই রাস্তায় লোকজন বেরিয়ে আসলো। আকাশে কিছু আগুনের গোলা দেখা যায়,পরে জানতে পারি মোহাম্মদপুর কালানের গোলা পরেছিল।১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুখোরুচ গল্প আছে, বিপদগামী সৈনিকরা নাকি গোলা ছাড়া টেঙ্ক নিয়ে এসেছিলো। মোহাম্মদপুর কামানের গোলায় নিহত পরিবার প্রমান বহন করে, তারা পুরপুরি সশস্ত্র ছিলো। কিছুটা সময় ভয়ে আতঙ্কিত হলেও ভোরে আর ঘরে বসে থাকার উপয় ছিলো না। ৩২ নম্বর চিনা বাদামের দোকান থাকায়, তখনো বুঝতে পারিনি, দেশে কি হচ্ছে। কিছুটা সম্পদ রক্ষার তাগিদে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর যাওয়ার পথে শংকর দিয়ে আবাহনী ক্লাব ওয়াসার পাম্প পর্যন্ত যাওয়ার পরেই সেনাবাহিনী গতিরোধ করলো। ফিরে আসার সময় জানতে পারলাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। আমি বাড়ী না গিয়ে ততকালীন আওয়ামীলীগ নেতা নাসির উল্লাহ সাহেবের বাড়ীতে গেলাম, বাড়ীর মেইনগেট বন্ধ, খোরশেদ আলম, গফুর ভাই সহ অনেক নেতার বাড়ীতে কেউ নাই। আমি কিছুটা হতাশ হয়েই রায়ের বাজার, বাজারের মেইনগেটে একটা রিকশার উপরে বসে বসে ভাবছি, বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর জানাতে পারলাম না। ততক্ষণে পৃথিবী জুরে খবর হয়ে গেছে।বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে অনেকে আত্নগোপন করেছে এবং তখনো আত্নগোপনের প্রকৃয়া চলছে, আমার বুঝতে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। কিছুখন পরেই আব্দুর রাজ্জাক, ডঃ কালাম হোসেন সহ অনেক নেতা বোরকা পড়ে পালানো পথ বেছে নিয়েছে রায়ের বাজারকে। রায়ের বাজার শহর ও গ্রামের সেতু বন্ধন ছিলো। স্বাধীনতা সংগ্রামেও অনেক মুক্তিযোদ্ধা পালিয়ে যাওয়ার পথ রায়ের বাজারকে বেছে নিয়েছিলো। রায়ের বাজার ঘাট থেকে বসিলা হয়ে আটির বাজার, জিন জিরা, কেরানীগঞ্জের অনেক স্থানে যাওয়া যেতো। নদী পথ না থাকলেও এখনো যাওয়া যায় বসিলা ব্রিজ হওয়াতে। এলাকার যুব সমাজের অনেকের সাথে আলহাজ্ব মোঃ সাদেক খান এমপি, সাজাহান ভাইরা নৌকা ঠিক করে আত্নগোপনে সহায়তা করছেন। বেলা দুইটার সময় খবর পেলাম, ট্যানারী মোর হয়ে একটি প্রতিবাদ মিছিল হয়েছিল বাচ্চু ভাই এর নেতৃত্বে। ঢাকা কলেজ থেকে সৈয়দ নুরের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিলে সায়েন্স ল্যারেটারীতে সেনাবাহিনী ব্রাশ ফায়ার করে। নুর ঘটনাস্থলে প্রান হারায়। হায়ানার দল এতটাই বেপরোয়া ছিলো, মানবতার সব সীমা অতিক্রম করে আতঙ্ক ছরিয়ে ছিলো। জীবন কতটা মুল্যবান নেতাদের, নীতির কাছে, ১৫ আগস্ট স্ব চোখ না দেখলে বুজা কঠিন হতো। সে থেকে জীবনে মরনে আমি তোমারই রবো, গানের কথা বিশ্বাস করি না। রায়ের বাজার, মধু বাজার, শংকর, ১৫ নম্বর ধানমন্ডি রাস্তায় অনেক লোকের সমাগম ছিলো। বেলা ৩ দিকে সেনাবাহিনীর গাড়ী টহল দেওয়ার সাথে সাথে মানব শূন্য হয়ে পরে। আমিও পেটের খুধায় বাড়ীতে। খাওয়ার পরে আর বসে থাকতে পারছিলাম না। মনের আয়নায় কত না দৃশ্য ধারন করে চলেছি। নিজের পেশাগত অভিজ্ঞতা, চিনাবাদাম বিক্রির সময় বঙ্গবন্ধুকে কাছে পাওয়া, কাছে থেকে দেখা। এখনো ৩২ নম্বর যাওয়া হয়। আগের সেই ৩২ নম্বরের প্রানচাঞ্চল্য দেখতে পাই না। পাইনা প্রানের ছুয়া। এখনো অনেক লোকের সমাগম হয়, ফুল নিয়ে ধাক্কাধাক্কি হয়, পেশীশক্তির প্রদর্শন হয়। বঙ্গবন্ধুর সুমধুর ডাক নাই। ভাই এরা, তোরা আইছো, কইবার পারমু না, দাবাইয়া রাখতে পারবানা ইত্যাদি কতনা মধু আঞ্চলিক ভাষা মানুষকে বসিকরন করতে পারতো বঙ্গবন্ধু। এমন একজন মানুষকে হায়ানার দল সপরিবারে হত্যা করলো। বাংলার স্বাধীনতার মোহন বাঁশীর সুর তুলেছিল ৭ মার্চের ভাষণে। বাঙালির মুক্তির বার্তা দিয়েছিল, পরাধীনতার শিকল মুক্ত করেছিলো। আজ সেই মানুষটাই জীবন দিতে হলো দেশের মাটিতে, বাঙালির হাতে। এই ইতিহাস লেখে কি আর শেষ করা যাবে ? পুরন করা যাবে, দেশ ও জাতির পিছিয়ে পরা দিনগুলো ? ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকদিবস পালন করা হয়। চাঁদাবাজির হিরিক পরে, নীতি ও আদর্শহীন রাজনীতি চলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একার পক্ষে লুটেরা শ্রেনীকে আটকানো সম্বব নয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বংশধর'রা এখনো আওয়ামীলীগ সহ একাধিক রাজনৈতিক দলে, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, শিড়ায় শিড়ায় প্রবাহিত হচ্ছে। তবুও চলছে বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনীতি। তিন ট্রাম ক্ষমতায় থাকার পরেও বুঁজে পইলাম না।
লেখকঃ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত সভাপতি জনাব রবিউল আলম।
Copyright © 2024 খাস খবর বাংলাদেশ. All rights reserved.