মাওলানা সাইফুল ইসলাম সালেহী||
যখন রমজানের আগমন ঘটে তখন মুমিন বান্দারা খুশি হয়ে যায়, রমজানের বাতাশ লেগে যায় শিশুদের গায়ে৷ শিশুরা একসাথে দল বেঁধে মসজিদে যায়। ভোরে বেলায় পাখিরা ডাক দেয়, ভোরের ঠান্ডা বাতাশ মুগ্ধ করে। কি সুন্দর পরিবেশ রমজান মাসে সৃষ্টি হয়, আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার সুযোগ এই রমজাসে মাসে। আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, যখন রমযান মাস আসে তখন আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়।
(বুখারী শরীফ, খন্ড-১ম, পৃষ্ঠা ৬২৬,হাদীস নং-১৮৯৯) এই রমজান দিবে পরকালে শান্তি ও সুখ, সকল নবীদের মাথার তাজ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যাকে বলা হয় রাইয়ান । কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে রোযাদারগণ প্রবেশ করবে। অন্য কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। রোযাদারগণ প্রবেশ করলে এ দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে আর কেউ সেখান দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (সহীহ বুখারী, হাদীস-১৭৯৭ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস - ২৭৬৬ ) কিছু মানুষ সারা বছর অন্যায় অপরাধ ও জুলুম করে, কিন্তু দুংখের বিষয় হচ্ছে রমজান মাসেও তাঁরা এই সব অন্যায় অপরাধ ও জুলুম করে৷ তাঁরা এই রমজান মাসেও ভাল হতে চায় না ও রমজানের শিক্ষা গ্রহন করতে চায় না। তাঁরা সবসময় ঝড়গা ও খারাপ ব্যবহার করে, তাঁদের ব্যবহার ফেরাউন ও নমরুদের মতো৷ আমাদের প্রিয় নবীজী (সাঃ) বলেন, যখন তোমাদের কোন ব্যক্তি রোজা রাখে তখন সে যেন কোন অশ্লীল কথাবার্তা বা ঝগড়া বিবাদ না করে। যদি অন্য কোন ব্যক্তি তাকে গালি দেয় তাহলে সে (রোজাদার) যেন (তার উত্তরে গালি না দেয় বরং সে বলবে) আমি রোজাদার। (সহিরবুখারি, হাদিস -১৯০৪, সহি, মুসলিম হাদিস-১১১৫, সুনানে আবু দাউদ হাদিস-২৩৬৩, সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস- ৬৮২,৬৮৩) তাঁরা সারা বছর মিথা কথা বলে, রমজানেও তাঁরা মিথ্যা কথা বলে, প্রিয় নবীজী (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা এবং অন্যায় কাজ করা থেকে বিরত থাকবে না তাহলে তার সারা দিন পানাহার থেকে বিরত থাকা আল্লাহ তায়ালার কোন প্রয়োজন নেই। (সহি, বুখারী হাদিস -১৯০৪, সুনানে তিরমিজি হাদিস-৭০৭, সুনানে আবু দাউদ হাদিস -২৩৬২, সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস-১৬৮৯) তাঁরা সারা বছর সমালোচনা ও নিন্দা করে, রমজানেও তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও নিন্দা করে৷ আল্লাহ বলেন, প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ, (সূরা হুমাযাহ, আয়াত-১) এই আয়াতে বিস্তারিত আলোচনা তাফসীরে জালালাঈন শরীফে বলা হয়েছে, সমালোচনাকারী ও নিন্দুকেরা হুতামা জাহান্নামে থাকবে তাঁদেরকে লোহার সিন্ধুকের ভিতরে ভরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তখন তাদের চিৎকার কোন কাজে আসবে না৷ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সারা বছর খাদ্য ভেজাল ও ওজনে কম দেয়। রমজানে মাসে ক্রেতা বেশী থাকে, তাঁরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরো বেশী খাদ্য ভেজাল করে ও ওজনে কম দেয়। অথচ ওজনে কম দেওয়ার কারণে আল্লাহ তায়ালা মাদইয়ান জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে৷ খাদ্য ভেজাল করা ও ওজনে কম দেওয়া এটা মারক্তক অপরাধ৷ এই সব অসাধু ব্যবসায়ীদের আল্লাহ দুংখ কষ্ট ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবে৷ আল্লাহ বলেন, যারা মাপে কম করে, তাদের জন্যে দুর্ভোগ, যারা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণ মাত্রায় নেয় এবং যখন লোকদেরকে মেপে দেয় কিংবা ওজন করে দেয়, তখন কম করে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে।
সেই মহাদিবসে, যেদিন মানুষ দাঁড়াবে বিশ্ব পালনকর্তার সামনে। এটা কিছুতেই উচিত নয়, নিশ্চয় পাপাচারীদের আমলনামা সিজ্জীনে আছে। আপনি জানেন, সিজ্জীন কি?
এটা লিপিবদ্ধ খাতা।
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের,
যারা প্রতিফল দিবসকে মিথ্যারোপ করে।
প্রত্যেক সীমালংঘনকারী পাপিষ্ঠই কেবল একে মিথ্যারোপ করে। (সূরা মুতাফফীফিন,আয়াত-১,থেকে ১২) যাদের উপর যাকাত ফরয হয়েছে, তাঁদেরকে অবশ্য যাকাত দিতে হবে৷ আল্লাহ বলেন, হে মুমীনগণ, তোমরা তোমাদের পবিত্র উপার্জন থেকে খরচ কর (যাকাত প্রদান কর) এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা বের করেছি তা থেকে (যাকাত প্রদান কর) (সূরা বাকারা, আয়াত-২৬৭) অথচ এই রমজান মাসে যাদের যাকাত দেওয়ার সামর্থ্য আছে তাঁরা অনেকে যাকাত দেয় না, এটা খুব মারক্তক অপরাধ ও মিসকিন হক নষ্ট করা। আল্লাহ বলেন, ধ্বংস মুশরিকদের জন্য, যারা যাকাত প্রদান করে না, আর যারা আখেরাতে অবিশ্বাস করে। (সূরা ফুসসিলাত,আয়াত-৬) আসুন আমরা রমজানে এই সব অন্যায় অপরাধ করবো না, আমরা এই রমজান মাসে তাওবা করে ও আমল করে যেন আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারি, আমিন।