স্টাফ রিপোর্টারঃ মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আট বছর বয়সী শিশুটি মারা গেছে। আজ ১৩ মার্চ ২০২৫ রোজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের শিশুরোগের চিকিৎসাসংক্রান্ত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ) চিকিৎসা চলছিল শিশুটির। এর আগে বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারবার ও বৃহস্পতিবার আরও দু‘বার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ (আকস্মিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ) হয় শিশুটির।
আট বছরের শিশুটি ৫ মার্চ মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গভীর রাতে ধর্ষণের শিকার হয়। শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার রাতে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার রাতে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে শনিবার (৮ মার্চ) বিকেলে শিশুটিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসা চলছিল। ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে চারজনের নামে মামলা করেন। ধর্ষণের অভিযোগে শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব (১৮), সজীবের ভাই রাতুল (১৭), তাদের বাবা হিটু মিয়া (৪২) ও মা জাবেদা বেগমকে (৪০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সেনাবাহিনীর শোক: ধর্ষণের শিকার শিশুটির মৃত্যুতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শোক প্রকাশ এবং বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছে। আইএসপিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শিশুটির শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। যেকোনো প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে সেনাবাহিনী।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে যে, মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটি বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। সিএমএইচ এর সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশুটির আজ সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে, দুইবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃদস্পন্দন ফিরে আসেনি। ৮ মার্চ শিশুটিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা সিএমএইচ-এ ভর্তি করা হয়।
শিশুটির চিকিৎসায় সিএমএইচের প্রধান সার্জনকে প্রধান করে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। বোর্ডে ছিলেন সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, প্লাস্টিক সার্জন, শিশু নিউরোলজি বিভাগ, অ্যানেসথেসিয়া, শিশু হৃদ্রোগ বিভাগ, শিশু বিভাগের সার্জন, ইউরোলজি বিভাগ, থোরাসিক সার্জন বিভাগের চিকিৎসকেরা।
ধর্ষণের ঘটনার ব্যাপারে শিশুটির বড় বোন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘বুধবার রাতে আমার স্বামী ও ছোট বোনকে নিয়ে একই কক্ষে ঘুমাই। সেহরি খাওয়ার আগে ঘুম থেকে উঠে দেখি, ছোট বোন মেঝেতে কাঁপছে আর কাঁদছে। আমি ভেবেছি, শীতের কারণে কাঁপছে। আর সেও তখন ভয়ে কিছু বলেনি। পরে সকালে ঘুম থেকে উঠে ছোট বোন ঘটনার বিস্তারিত আমাকে জানায়।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘রাতে আমার শ্বশুর তাকে (ছোট বোন) ঘুম থেকে তুলে অন্য কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ধর্ষণ করে এবং ভয়ভীতি দেখায়। আমার স্বামীই দরজা খুলে দেয়। শাশুড়িও ঘটনা জানে। ঘটনা বলে দেওয়ার কথা বলায় তাকে (শিশুকে) মারধরও করে। পরে তাকে আমার কক্ষে দিয়ে যায়।’
শিশুটির বোন বলেন, ‘সকালে আমার স্বামী ও শাশুড়িকে ঘটনা বললে তারা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বলেন। আমাকে মারধরও করেন। এতে আশপাশের লোকজন জানতে পারে এবং তার (ছোট বোন) শারিরীক অবস্থাও খারাপ হতে থাকে। পরে আমার শাশুড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এর মধ্যে আমার বাবাকে ফোন করে অসুস্থতার কথা জানায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘চার মাস আগে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের দুই মাস পরই শ্বশুর আমাকেও শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনা স্বামীকে বললে তিনি তা বিশ্বাস করতে চাননি। আমার পরিবারকেও জানিয়েছিলাম। কিন্তু মানসম্মানের ভয়ে তখন বিষয়টি নিয়ে আর কিছু বলা হয়নি।’