শেখ আসাদুল্লাহ আহদেম (আপন), ষ্টাফ রিপোর্টারঃ বিনা পারিশ্রমিকে ১২০০তম কিডনি প্রতিস্থাপন করে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত কিংবদন্তি চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর শ্যামলীতে নিজের প্রতিষ্ঠিত সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (সিকেডি) হাসপাতালে এক রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে তিনি এই মহৎ কীর্তি গড়েছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১২০০তম ওই রোগীর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ডি ঘর গ্রামে। তার দুটো কিডনিই বিকল হয়ে যাওয়ায় গত এক বছর যাবৎ তিনি কিডনি রোগে ভুগছিলেন। ওই রোগীর বয়স ৫১ বছর। রোগীর স্ত্রী ওই কিডনি তাকে দান করেন।
সফলভাবে ১২০০তম কিডনি প্রতিস্থাপনের পর সোমবার রাত ৯টায় সংবাদ মাধ্যমকে অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, এটা আসলে আল্লাহর রহমতেই হয়েছে। তিনিই আসলে আমাকে দিয়ে এই কাজটি করিয়েছেন, এজন্য তিনিই আমাকে এই মেধা ও শক্তি দিয়েছেন। আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন আমৃত্যু মানুষের সেবায় কাজ করতে পারি।
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম আরও বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে ডেডিকেশনটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় সব চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের বেশিরভাগই প্রথম থেকেই এখানে ধারাবাহিকভাবে কাজ করছেন। যার কারণে এখানে একটা টিম গড়ে ওঠেছে। এজন্যই মূলত আমরা ধারাবাহিক সাফল্য পাচ্ছি।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা হাসপাতালেই পড়ে থাকি। এজন্য বিয়ে বা কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাই না। আমি রোগীদের সুস্থ করে, তাদের কষ্ট লাঘব করে আমি আনন্দ পাই।
প্রসঙ্গত, অধ্যাপক কামরুল ইসলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজের কে ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। ১৯৮২ সালে তখনকার ৮টি মেডিকেল কলেজের সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস অব এডিনবার্গ থেকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবা আমিনুল ইসলাম পাকশী ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করার ‘অপরাধে’ স্থানীয় রাজাকার ও বিহারীরা তাকে হত্যা করে।
অধ্যাপক কামরুল ১৯৯৩ সালে স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন। তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। প্রথমবারের মতো সফলভাবে কিডনি প্রতিস্থাপনের কাজ করেন ২০০৭ সালে। ২০১১ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে প্রতিষ্ঠা করেন সিকেডি হাসপাতাল। তিনি ৩ কন্যা সন্তানের জনক।