বাঙালি জাতির গর্বিত নারী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মজিব, স্বাধীনতার পেছনের অগ্রনী ভুমিকায়
রিপোর্টারের নাম
আপডেট সময় :
Sunday, August 1, 2021
276 Time View
গোপালগঞ্জ থেকে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর। বাংলার গনজাগরণের পেছনে, জাতির জনকের রাজনৈতিক জীবনে,বাংলার মুক্তির সংগ্রামে জীবনের সুখ ছন্দ বিষর্জন দিয়ে যে নারী বঙ্গমাতার উপাধী অর্জন করেছেন। তিনি জাতির জনকের সহধর্মীনি বেগম ফজিলাতুন্নেছা মজিব। মাত্র ছয় বছর বয়সে জীবন সংগ্রামে সংসার জীবন গ্রহন করেন। খেলার ছলে শশুর শাশুড়ীর ছায়া তলে বেরে উঠা বাঙালির জীবনধারাকে সম্মানের সহিত গ্রহন করা। স্বামীর রাজনৈতিক জীবনের সকল যন্ত্রণাকে নিরবে বুকে ধারন করে রাজনীতি কে এগিয়ে নেওয়া। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বাংলার স্বাধীনতা অর্জনে ভুমিকা রাখা একজন নারীর পক্ষে সহজ ছিলো না। স্বাধীনতা উত্ত বাংলাদেশের ফাসলেডী বেগম মজিবকে দেখেছি অতি সাধারন একটি কাপরে। বাঙালি নারী,কৃষকের বধু, মমতাময়ী মায়ের রূপে। কাঁচা মরিচ, লাউ কুমড়া, হাস মুরগী। কবুতর, গরু পালন হতো ৩২ নম্বরে। এখনো কবুতরের ঘর ও পাকের ঘর সংরক্ষিত। প্রধান মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির বাড়ী থেকে লেকের পাড়ের ফেরীওয়ালারা পানি আনার দৃশ্য ধারন করেছি এই অন্তরে। এখন কল্পনার অতিত। জ্বল চৌকির উপর বসে রান্নার আয়োজন, প্রতিদিন রাষ্ট্রীয় কাজে নারীর অসহায়ত্ব, মানুষের সহায়তার তালিকা নির্ধারন। বঙ্গবন্ধুর খুনী ডালিম, রশিদ, নুরের বিবিরা চাটুকারের আশা বেগম মজিবের পাকের ঘরে আনাগোনা দেখেছি। দেখেছি বেগম খালেদা জিয়াকে তার দ্বিতীয় সংসার জীবন রক্ষার আবেদন নিয়ে পাকের ঘরে হাজির হতে। বাংলার আনাচে কানাচের পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা নারীদের আত্ন নাথ বেগম মজিবের সমাধানের অসামান্য অবদানের চিত্র ধারন করেছি এই মনের আয়নায়। জাতির জনকের রত্ন গর্ভা মায়ের ছুয়ায় ৬ বছরের বেগম মজিব একদিন হাসুর মা হয়ে উঠেন। কামাল, জামাল,রেহানা, রাসেলের মা হয়েও বাঙালি জাতির কাছে বঙ্গমাতা। এই উপাধি কারো দয়ার দান নয়,অর্জন করতে হয়েছে জাতির মন জয়ের মাধ্যমে । আমার জীবনের একটি ছোট্ট ঘটানার মাধ্যমে বেগম মজিবকে আবিস্কার করতে চাই। ৭০ নির্বাচনে নৌকার মিছিলে তৎকালিন সুলতানগঞ্জ ইউনিয়ন আঃলীগের সভাপতি নাসিরউল্লাহ সাহেবে নেতৃত্বে রায়ের বাজার থেকে যাত্রা শুরু। হাইস্কুল ট্যানারী মোর, জিগাতলা, সায়েন্স ল্যাবেটারী কলাবাগান শুক্রাবাদ হয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়ীর সামনে দিয়ে ৮ নম্বর ব্রিজ হয়ে আবহনী ক্লাব মাঠে পরিসমাপ্তি হয়েছিলো মিছিলের।সকালে মিছিলের আয়োজন হলেও ১০ টা পর্যন্ত একজন মাঝির অপেক্ষায় মিছিল শুরু হচ্ছিল না। বিশাল আকৃতির একটি নৌকা কাগজ ও বাশ দিয়ে তৈরি ঠেলাগাড়ীর উপর উঠিয়ে নাসিরউল্লাহ সাহেব, রমিজ চাচা, নাদের খান, বর্তমান এমপি আলহাজ্ব মোঃ সাদেক খান, গফুর ভাই, খোরশেদ আলম, বাচ্চু, বুলবুল, মুনসুর কোম্পানি সহ শত শত মানুষ অপেক্ষায়। জনতার সাড়ীতে আমিও ছিলাম। রশিদ চাচা আমাকে দরে নিয়ে তুলো দিয়ে দাড়ীমুছ বানিয়ে হুক্কা হাতে দিয়ে নৌকা মাঝী করা হলো। বেনপাটিতে জয় বাংলার জয়, হবে নৌকার জয়। মিছিল এগিয়ে চলছে। ৩২ নম্বর আসতেই বঙ্গবন্ধুর বাড়ীর অপরপ্রান্ত আমার নৌকার ঠেলাগাড়ি থেমে গেলো। রমিজ চাচা, নাসিরউল্লাহ সাহেব গাড়ীর দুই পাশে দ্বারিয়ে। বঙ্গবন্ধু বেগম মজিব বাড়ীর বেলকুনিতে। মিছিল এগিয়ে চলছে, ব্যাদের তালে তালে আমার শরিলের নানা অঙ্গভঙ্গি ও হুক্কার টানে কখন মজিবকে আক্রশন করেছিলো, বুঝতে পারিনি। এক পলকে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো মজিব-বেগম মজিব। মিছিল শেষ হতেই রমিজ চাচাকে হুকুম দিলেন ঐ ছেলেটাকে নিয়ে বাড়ীর ভিতরে আয়। তখনো আমার শরিলের অঙ্গভঙ্গি থামানো যায় নাই। মজিবের ভাড়ী কণ্ঠ: হাসুর মা, ছেলেটাকে একগ্লাস দুধ দিয়। বেগম মজিব স্বশ্নেহে দুধ নিয়ে হাজির। আমি কিছুতেই দুধ খাবো না, অনেকেই চেষ্টা করলেন, দমক দিলেন। কোনো কাজ না হওয়াতে। শেখ মজিব আবারো গর্জে উঠলেন। আরে তোরা নেতাগ্রিরি করবি কেমনে,মানুষের মনের কথা বুঝতে না পারলে। ওর দাড়ীমুছ খুলে দেয়, এমনিতেই খাইবো। কথা মত আমার দাড়ীমুছ খুলতেই চিক্কাক দিয়ে উঠলাম। বেগম মজিব হাসতে হাসতে দুধ নিয়ে আমার সামনে হাজির, দুধ খাইলে সব লাগিয়ে দেওয়া হবে। একটানে দুধ খাওয়া হলো, আমার দাড়ীমুছ লাগানো হলো। আমি আমার আপনভুবনে, অক্ট্রহাসিতে বঙ্গবন্ধুর ভবন। এখনো সেই ভবনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় চোখে পরে বেলকুনি,বাঙালির অর্জিত সেই অসাধারণ মানুষ দুইটি চোখে পরে না।চোখে জল আসে ভাবলে, ৮ আগষ্ট বেগম মজিবের জন্মদিন, ১৫ আগস্ট মৃত্যু বার্ষিকী। মনের আয়নায় বেদনার প্রতিছবি, বাংলার মায়ামহনীর একজন নারীর আচলের ছায়া হারিয়েছে বাঙালি। কৃতজ্ঞ চিত্রে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কে আমরা স্মরণ করছি, করবো এ দেহে যতদিন প্রান আছে।আমরা অনেকেই রাজনীতির কথা বলি, ত্যাগের কথা বলি। বলি সততার কথা, পাওয়া না পাওয়ার হিসেবের কথা। ১৫, ২১ আগস্টের জীবনদানকারী,স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে আত্নদানকারীদের হিসেব করলে, মনে হয় আমরাই লাভবান হয়েছি,একটি স্বাধীন জীবনের অধিকারী। রাজনীতিতে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব যারা করেন। তারা ফজিলাতুন্নেছা মজিবের জীবন থেকে কিছু নিতে পেরেছেন ? মানুষকে,দেশকে ভালোবেসে যারা অকাতরে জীবন দান করেছেন, তাদের জন্য কিছু করতে পেরেছেন ? না-কি হেলেনা জাহাঙ্গীর হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ?
লেখকঃ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব রবিউল আলম।