স্বাধীনতার পর আমি তখন আইডিল কলেজের ছাত্র। আমরা বিকালে ছাত্র সংসদের অফিসে ক্রামবোর্ড, দাবা, লুডু খেলতাম বড়রা লনে ভলিবল, বাস্কেট বল, ব্যাড মিন্টন ইত্যাদি খেলতেন, তাদের পর আমরা খেলতাম।
কামাল ভাই সাংগঠনিক, সাংস্কৃতিক কাজে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যাওায়র প্রাক্কালে তার বন্ধু এবং ছাত্রলীগের ধানমন্ডি শাখা ও কখোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু দের নিয়া (একটা নিল জিপ গাড়ি, হুড ছাড়া, সাথে ২/৩ টা হোন্ডায় ও ছাত্রলীগের অনেকে থাকতেন) মাঝে মাঝে বিকালে আইডিয়াল কলেজের সংসদ অফিসে আসতেন। আমরা তাই ক্লাস সেরে বাসায় গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে বিকালে আবার কলেজর সংসদ অফিসে আসতাম সেখানে বিভিন্ন প্রগ্রাম, জাতীয় দিবস সমূহ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ছাত্র লীগের সদস্য সংগ্রহ এসব বিষয়ে কাজ কর্ম হতো। কামাল ভাই আমাদের বলতেন কি ভাবে ছাত্র লীগের কার্যক্রম এগিয়ে নিয় যেতে হবে। আগে দেশ পাকিস্তানের কলোনি ছিলো আর এখন স্বাধীন দেশ এখন ছাত্র লীগের দায়ীত্ব অনেক, আজকের ছাত্র আগামী দিনের দেশের নেতা, পরিচালক, ক্যাডার সার্ভিস ও প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্বাধীন দেশের রাজনীতিক, দেশ পরিচালক হবে। তাই তাদের এখন নিজেদের গড়তে হবে, বেশী কাজ করতে হবে, লেখা পড়ায় ভালো করতে হবে, বিশ্বের উন্নত দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আমরা তাদের আপ্যায়নের জন্য ফল ফলাদি এনে পরিবেশন করতাম। একদিন কামাল ভাই জিজ্ঞেস করলেন তোমরা এত ফল কেনার পয়সা পাও কই, আমরা বলতাম আমরা সবাই কন্ট্রিবিউট করি। উত্তরে কামাল ভাই বললেন আমরা গরীব দেশ আমাদের বাবা মা এরা অনেক কষ্ট করে আমাদের লেখা পড়ার খরচ দেন। আমার জন্য তোমাদের দামী ফল কেনার দরকার নাই, আমি চা আর টোষ্ট বিস্কেট খাই, আমার জন্য চা আর টোষ্ট বিস্কেট হলেই চলবে, বেশী খরচ করবে না মাসের শেষ তোমরা চলতে পারবেনা। আমরা তাকে দেখে তার কথা শুনে বিশ্মিত হতাম, তিনি ছিলেন একজন মুক্তি যোদ্ধা, একজন(অবঃ) সামরিক ক্যাপটেন, একজন সংগঠক, একজন ছাত্র, একজন খেলোয়ার, ছাত্র নেতা, একজন অভিনেতা, শিল্প সাংস্কৃতিক সংগঠক, আবাহনী ক্রীড়া চক্রের প্রতিষ্ঠাতা ও আধুনিক ফুটবলের উদ্যোগতা, সল্প ভাষি উদিয়মান জাতীয় নেতা, কি গুন ছিলো না তার ভিতরে! ৭৪ এর ফেব্রুয়ারী মাসে বাংলা একাডেমির মঞ্চে বিকেলে বিদগ্ধ জনের বক্তৃতা, রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে যেতাম। মাতৃ ভাষা, সংস্কৃতি, ভাষা সহিদের মাস, সেই সংগে বাংলা সংস্কৃতির ও মাস। বাংলা একাডেমির আমন্ত্রণে একদল ভারতীয় সাহিত্যিক, শিল্পি, বুদ্ধি জীবি, অভিনেতাদের একটা বড় দল ঢাকায় এসেছে, ভারত বাংলাদেশের যৌথ অভিনয়ে পাক বাহীনির তারা খেয়ে হিন্দু মুসলিম, খৃষ্টান, বৌদ্ধ সর্বস্তরের জনতার স্বরনার্থী হওয়ার কাহিনী নিয়ে লেখা ও অভিনীত নাটক, বাংলা একাডেমি মঞ্চে। আমরা অভিভূত হয়ে নাটক দেখছিলাম। নাটক শেষে ২ দেশের বিচারকদের সমন্বয়ে পুরুস্কার দেয়া হল। কামাল ভাই বয়সের ভারে গুজা দেয়া এক বৃদ্ধ সরনার্থীর অভিনয় করছিলেন, তাকে পশ্চাতে ফেলে সবাই আগে আগে চলে গেছে, বৃদ্ধ লাঠি হাতে গুজা দিয়ে গ্রামের পথে হাটছেন আর সামনে যে বাড়ি পরে তাদের খোজ নেন বেশী ক্লান্ত হলে আবার একটু জিরিয়ে নেন এভাবে তার পথ চলা আর নানা ডায়লগ বলা। নাটক শেষে দেখি মানুষের বিবেক, দাদা নানাদের মত বিপদে সবার খোজ নেয়া সেই বৃদ্ধ প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন আমরা খুশি হলাম, পুরুস্কার যথার্থ হয়েছে, ড্রেস খুলে ১ম পুরুস্কার নিতে এলেন কামাল ভাই। কামাল ভাই থিয়েটারের সাথে জরিত জানতাম কিন্তুু সে যে এত ভালো অভিনয় করে তা এই প্রথম দেখলাম। একজন জাতির জনকের পুত্র, রাষ্ট্র পতিরর বড় ছেলে, একদিন তিনি রাষ্ট্রের কর্নধর হবেন। দিন রাত কাজ করছেন, বহু গুনে গুণান্বিত উদিয়মান পরিশ্রমি নেতা ছিলেন কামাল ভাই এটা হয়তো অনেকের ইর্শার কারন ছিলো। আজ তার ৭২ তম জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলী।
লেখকঃ সাবেক ব্যাংকার ও রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার ৩১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক জনাব আব্দুর রহমান শাহ্।