ইদানিং লেখালেখির আর ইচ্ছে করে না। একেতো এতে, এতে করো কোন লাভ ক্ষতি হয় না, তার উপর লকডাউন না থাকায় হাইকোর্ট খুলে গেছে এবং অন্যকিছু কাজ নিয়েও ব্যাস্ততা বেড়েছে।এর মাঝে, আজ সকালে, আমার একজন প্রিয় মানুষ, যিনি দক্ষিন অঞ্চলের তথা পটুয়াখালী জেলার একজন ত্যাগী,পরিক্ষিত এবং দুর্দিনের আওয়ামী লীগ নেতা, বর্তমানে পটুয়াখালী দশমিনা উপজিলা চেয়ারম্যান আন্দুল আজিজ ভাই, আমার লেখার বিষয় বিভিন্ন সময়,বিভিন্ন মতামত দেন, আজকেও তিনি সে ভাবে মত দিয়ে, এ ধরনের লেখা চলিয়ে যেতে বলেন। একসময় আ খ ম জাহাঙ্গীর ভাইর পর তাকেই আমরা এম পি ভাবতাম। ৭৫ পরবর্তীতে এবং ৮০ ও ৯০ দশকে মাঝে মাঝে আওয়ামী লীগের গ্রুপ রাজ্নীতীতে আমরা অনেক সময় ভিন্ন গ্রুপে থাকলেও কখনো আমাদের মাঝে সম্পর্কের কমতি হয়নি। খ ম জাহাঙ্গীর ভাই যখন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন এবং তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন, তখনও তারা মাঝে মাঝে ভিন্ন গ্রুপ করলেও, তিনি কখনো তার অমঙ্গল চাননি এবং বিপরীত ভাবে জাহাঙ্গির ভাইও কখনও তার অমঙ্গল চাননি। আজিজ ভামাঝে মাঝে গল্প করে বলতাম, পটুয়াখালী অঞ্চলে এক ভদ্রলোকের একজন মাত্র প্রকৃত বন্ধু আছে এবং সেটা আপনি। তার ঐ বন্ধু সম্পর্কেও আমার অনেক লেখা আছে, সেটাও তিনি মনোযোগ সহকারে পড়েন। আসলে পৃথিবীটা গোল বলেই হয়তো সাইকিলিক অর্ডারে ঘুরছে সব ! তানাহলে, আমার পিতা মরহুম আব্দুল আজিজ খন্দকার, পটুয়াখালী মহকুমা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ছিলেন, ৭০ ও ৭৩ সনে বাউফলে আওয়ামী লীগের এম পি ছিলেন। যিনি ১৯৭৯ সনে আওয়ামী লীগের এম পি মনোনয়ন পেয়েও, ৩ দিন পর, সাবেক চীফ হুইপ ও বর্তমান এম পি আ স ম ফিরোজ ভাই বরাবরে, এম পি মনোনয়ন সেক্রিফাইস করেছিলেন এবং ফিরোজ ভাইও আব্বার কাছে অঙ্গীকার করেছিলেন, পরবর্তী পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ কাউন্সিলে আব্বাকে সভাপতি হিসেবে সমর্থন করবেন এবং পরের এম পি নির্বাচনে আব্বাকে সমর্থন করবেন। কিন্তু পরবর্ত্তী কালে ফিরোজ ভাই তার ওয়াদা রাখেনি বরং সভাপতি পদে,অন্য একজন কে সমর্থন করেছেন এবং ৮৬ সনে নিজেই স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছেন। আবার ১৯৯৬ সনে, ফজলুর রহমান রাজু ভাইর, ঢাকার ডলফিন চেয়ারকোচ অফিসে বসে, পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের তত্কালীন সভাপতি, জনাব শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্ত্বে, ফিরোজ ভাই সহ সকলে বাউফলে, আমার পক্ষে, এম পি নমিনেশন সেক্রিফাইসের লিখিত সিদ্ধান্ত দিলেও, ঐ সিদ্ধান্ত পত্র, শাহজাহান মিয়া সাহেব এবং ফিরোজ ভাই, জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে না পৌছিয়ে, গায়েব করে দিয়েছেন। তারপর ৯৬ এর নির্বাচনে বাউফলের রাজাপুর সেনটারের উপনির্বাচনে ২৯ ভোটে এম পি হন। আর ফিরোজ ভাই সেই ৭৯,৯৬ এবং রাজপুরের নির্বাচনের এর প্রতিদান হিসেবে, আমাকে হয়তো দয়া করে, বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির সদস্য করেছিলেন, যদিও এখন আর রাখেননি। বিগত কমিটিতে সদস্য হিসেবে, দুয়েকটা মিটিং দাওয়াতও দিয়েছেন। তারিখটা আমার মনে নেই, ২০১৮ সনের শেষ দিকে হবে, ফিরোজ সাহেব, বগা স্কুলের মাঠে একটি আওয়ামী লীগের জনসভায় আমাকে দাওয়াত দিলেন। বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এবং ঐ সময় বগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন ঐ সভায়। লোকজন ভালো হয়েছিল। ঐ সভায় ফিরোজ ভাই একটি বক্তব্য রাখেন, যা হচ্ছে, বাউফলবাসী উপজিলা চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মুন্শি কে, যে ভোট দিয়েছিল, তা ফেরত চান। আমি তো শুনে অবাক, যে ফিরোজ ভাই ২০০৯ এর উপজেলা নির্বাচনে আমার বিরুদ্ধে তাকে উপজেলা চেয়ারম্যান করেছেন, যে নির্বাচনে, ফিরোজ ভাই, মহান জাতীয় সংসদের হুইপ হওয়ার আগ পর্যন্ত, আমাকে প্রায় সকল আওয়ামী লীগ নেতারা সমর্থন করেছিলেন এবং প্রশাসনও ভাল ভুমিকা রেখেছিল, কিন্তু নির্বাচনের ৩ দিন আগে, নওমালা হাই স্কুলের মধ্যে প্রায় ৫০০ লোক নিয়ে সভা করলেও, ভোটের দিন আমার জন্য ২ ভোটার ব্যাবস্থা করা হয় এবং ১৪ সনের উপজিলা নির্বাচনেও সে তাকেই উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন, সেই তার কাছেই ভোট ফেরত চাচ্ছেন !। ঐ যে বলছিলাম, পৃথিবীটা গোল, তাই সবকিছু সাইক্লিক অর্ডারে ঘুরছে। সেদিনের মিটিং শেষ করে, আমি কৃষক লীগের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে,সরাসরি উপজেলা চেয়ারম্যানের অফিসে গেলাম। উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর সাহেব অনেক মিষ্টি খাওয়ালেন,সকলকে। তারপর তিনি যা বললেন, তা শুনে আমার আক্কেল গুরুম !।তিনি আমাকে যা বললেন, " রেজা ভাই আপনার লজ্জা হলো না, আমি তো ১৪ সনের, নির্বাচনে আপনাকেই উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে বলেছিলাম, অথচ আপনি ৭৫ বঙ্গবন্ধুর "..............." এর সাথে মিটিং করলেন, তাকে বলেন, তাকে তো প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য ".................." দিয়েছিলাম, ঐ টা ফেরত দিতে বলেন, আমিও ভোট ফেরত দিয়ে দেবো"। উপজেলা চেয়ারম্যান অফিসের পুরো অফিসে লোকজন ভরা, সবাই হাসাহাসি করলো। আজ তার ঠিক ৩ বছর পরে, সেই বগা হাই স্কুলের মাঠের পাশ দিয়ে গেলে, সেই উপজিলা চেয়ারম্যান মজিবর ভাইয়ের চেয়েও আরও কঠিন কণ্ঠে শোনা যায়, ৭৫ এর বরিশালের কথা, বাউফলের বর্তমানের কথা, আরো কতকি।আর যে বলছেন, তিনি ছাত্রলীগ থেকে আসা আওয়ামী লীগ করা নেতা, যিনি বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এবং উপজেলা চেয়ারম্যান। যার রাজ্নীতীতে কোন ব্রেক অফ স্টাডি (অন্য কোন দলে যায়নি) দেখি নাই। হয়তো এটাকেই অনেকে নিয়তী বলেন ! (ক্রমশঃ) এডভোকেট খোন্দকার শামসুল হক রেজা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক,বাংলাদেশ কৃষক লীগ। ৩১ আগস্ট '২০২১