এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজাঃ
৪ মার্চ তারিখ থেকে কোরোনা পজিটিভ। ২ তারিখ থেকে রাতে সামান্য জ্বর আসতো। সর্বোচ্চ ১০১ ডিগ্রি। ২২ ফেব্রুয়ারী করোনার ১ম ডোজের টিকাও নিয়েছিলাম। ২য় ডোজ ১৯ এপ্রিল,২০২১। শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল না। তারপরও করোনা টেস্ট করালাম। করোনা পজিটিভ হওয়ায় কোন লেখালিখির চেষ্টা করিনি। ভেবেছিলাম লেখালিখি বন্ধ করে দেই। আজকেই রিপোর্ট পেলাম আমাদের বাসার ৩ জনেরই কোরোনা নেগেটিভ, আল্লাহর
অসীম কৃপায়। এই ১২/১৩ দিন করোনার সময় ৪/৫ জন ব্যতীত,বাংলাদেশ কৃষক লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতৃত্তের অনেকেই খোজ খবর নিয়েছেন। করোনার কথা কাউকে না বললেও অনেকে, কিভাবে যেন যেনে গেছে। অনেকেই ফোন করে খোজ নিয়েছেন।তাদের মিটিং, ছবি ফেসবুকে আসে। ২৮ বছর কৃষক লীগে ছিলাম।তাই মাঝে মাঝে ভুলে নস্টালজিয়ায়ও ভুগী। যদিও চেষ্টা করি ভুলতে। তারপরও তো রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। ইচ্ছে করলেও সব ভোলা যায না। ৯২ থেকে কৃষক লীগে যাদের দেখেছিলাম, তাদের বেশিরভাগকেই এখন দেখি না। ২০০৩ বা ১২ তে যাদের সাথে দেখা হযেছিল তাদের অনেকের সাথে এখন আর দেখা হয় না ।আবার এখন যারা আছেন, তারাও হয়তো ১৯ এর আগের অনেকেই এখন আর দেখবেন না।এর পরের ইতিহাসটাও সে ভাবে হবে, এমন আমি বলছি না। তবে পৃথিবীটা মনে হয় এমনই। যাদের সাথে দিনের বেশী সময় থাকতাম, তারা অনেকে ভুলেও দেখা করে না।২০০৩ এ কাউন্সিলে,যখন জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বাংলাদেশ কৃষক লীগের ১ম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন এবং ড: মির্জা জলিল ভাই সভাপতি হন এবং মোতাহার হোসেন মোল্লা ভাই সাধারন সম্পাদক হন।ঐ বার কেন্দ্রীয় গঠনের বিষয় জলিল ভাই এবং মোতাহার ভাই বেশির ভাগ নাম আমার দ্বারাই লিখিয়েছেন, আমার কলাবাগান চেম্বারে। ঐ সময় আমার সুপারিশে একজন নেতাকে,একটি ভাল পদে নাম লিখি। জলিল ভাই সুপারিশ করছিলেন কিন্তু মোতাহার ভাই সিরিয়াস বিরোধিতা করছিলেন। শেষ পর্যন্ত আমার জোরাজুরিতে ঐ নামটি আমিই লিখি এবং তার নামটি একটি ভাল পদে প্রস্তাব করি এবং ঐ কমিটি জননেত্রী অনুমোদন দেন। অথচ দুর্ভাইগ্য বাংলাদেশ কৃষক লীগের প্রথম সভায় আমার প্রিয় ভাইটি, জোর গলায় বক্তব্য রাখ্লেন, “আমি কারো দয়ায় কৃষক লীগে আসিনি, জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজে তার নাম লিখছেন”। এতো গেল ২০০৩ এর কথা । ২০১২ তে যখন জননেত্রী আমাকে বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক করেন, তখন সভাপতি হিসেবে মোতাহার মোল্লাহ ভাই, আমাকে বললেন, তার ১০/১২ নামের বিষয় যেন আমি আপত্তি না করি বাকী ১০০ টি নাম তুমি দিও। সেখানেও ৮ টি নামের বেশী লিখতে তিনি রাখতে পারে নি। ১১১ সদস্যের ১০৩ টি নাম আমিই লিখেছিলাম, মোতাহার ভাই তখন ১টি নাম ছাড়া কোন নামের ব্যাপারে আপত্তি করেননি। কিন্তু ঐ একটি নাম বাদ দিয়ে অন্য একটি নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য মোতাহার ভাই অনেক অনেক চেষ্টা করেছেন। অনেক উচ্চ পর্যায়ের মাধ্যমে দদ্বিরও করিয়েছেন । কিন্তু আমি আমার অবস্থান থেকে একটুও সরি নি। তার জন্য জননেত্রীর নিকট, কমিটি দাখিল করতেও অনেক সময় গেছে। শেষ পর্যন্ত আমার দেয়া নামটাই থাকল। শুনেছি সে এখনো কৃষক লীগে আছেন। বেশ ভাল ভাবেই। যারা তার চরম বিরোধিতা করেছিল,তাদের সাথে নাকি তার ভীষণ সখ্যতা এখন। এখানে,অনেক দিন আগের একটি কথা মনে পড়ল ।আমার একজন প্রিয় মানুষ ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিদ্যা বিভাগের এক সময়ের প্রধান এবং এক সময় সাবেক ইকবাল হলের প্রভোস্টও ছিলেন। আমরা আত্মীয় অধ্যাপক এমরান উদ্দিন তালুকদার। মৃত্যুবরণ করেছেন বহু বছর আগে। একসময় আমাদের কলাবাগনের বাসায় মাঝে মাঝে আসতেন। গল্পও করতেন। আমার মত তিনিও সত্য ঘটনাকে গল্পের মত করে বলতেন। একবার তিনি এক ছেলেকে নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ভবনে একটি চাকুরি দিয়েছিলেন। চাকুরি পাওয়ার পর ঐ ছেলেটি কখনো আর এমরান সারের সাথে দেখা করেননি। বছর খানেক পরে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রগ্রামে হটাৎ ঐ ছেলেটির সাথে দেখা। তখন ঐ ছেলেটা এমরান সার কে, সালাম দিয়ে প্রশ্ন করলো, ” স্যার আপনাকে আজকাল যে দেখি না ? !”। তখন ঐ এমরান সার উত্তর দিলো এভাবে, ” আমি এখন আর দেখাই না !”। কত সুন্দর উত্তর !। কত কষ্টের উত্তর !। আসলে এভাবে ঘটে অনেকের জীবনে। আমাদের জীবনেও যে ঘটেনি সেটা বলছি না। শুনেছি জুলফিকার আলী ভুট্টো, ৩ জন জেনারেল কে সুপারসীড করে যাকে জেনারেল করেছেন, সেই জেনারেলই ভুট্টোকে ফাঁসি দিয়েছিলেন। এমন হাজারো উধাহরন আছে। ছোট কিম্বা বড় বড় বিষয়। ইদানীং ৭৫ এর পরের সময়টা প্রায় মনে আসে। কজন ছিলেন পটুয়াখালীতে ও আমার প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কত দুর্বিসহ দিন গুলো। সেই ভাইগুলোকে এখন অনেকেই দেখিনা। দেখিনা বলতে, অনেকেই রাজ্নীততে দেখিনা ।কোথায় হারিয়ে গেছে !।৭৫এর পরে অনেকেই সেই দুর্বিসহ দিনগুলোতে কতই না কষ্ট করেছেন, কত ভুমিকা রেখেছেন। এইজন্যই হয়তো কবিরা গান বানায়, “তোমাদের যা বলার ছিল, বলেছি কি তা বাংলাদেশ” অথবা “বিজয় পতাকা হাতে যারা এসেছিল, তাদের তো আজ দেখিনা । তারা আজ কোথায়,কোন জনপদে”। সুতরাং ইতিহাস, নীতিবাক্য, দুর্দিন, অবদান, আমরা যার যার মত করে সাজাচ্ছি। যে যার মত করে ইতিহাস বানাচ্ছি। বন্ধু কবি জাফর ওয়াজেদ মাঝে পুরাতন ছবি ছাড়েন ফেসবুকে। বাস্তবতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। যারা ৭৫ দেখেননি, তারা আবার হয়তো, বলে বসতে পারেন, ওগুলো টুয়েশ্টিং বা সুপার ইম্পোজ করা। বর্তমান ইতিহাসটা এখন অন্যরকম। কে স্বাক্ষ্য দেবে।অনেকেই তো এ ধরাধাম থেকে চলে গেছেন। আর অনেকে যারা আছেন, তারা কেউ স্বাক্ষী দিতে চান না। আবার অনেকের স্বাক্ষী দেবার ক্ষমতা বা জুরিসডি ক্সনও নেই। ইতিহাসের নিরব স্বাক্ষী হয়ে বেঁচে আছেন অনেকে। অন্যদিকে যাদের ৭৫ এর পর দেখিনি, তাদেরই অনেকেই বগল দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছেন , বিভিন্ন জায়গায় পদ দখল করে নিচ্ছেন। (ক্রমশঃ ) এডভোকটে খোন্দকার শামসুল হক রেজা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক লীগ। ১৬ মার্চ, ২০২১।