April 19, 2024, 9:46 am
শিরোনামঃ
শুধু প্রশাসন দিয়ে মাদক ও কিশোর গাং প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হলে ? গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা ভন্ড কবিরাজ বলেন তিনমাথা,জ্বীন দিয়ে ও গোখরা সাপের কামড় দিয়ে শেষ করে দিব জানা গেল কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ বাংলা ও বাঙ্গালীর নববর্ষঃ আঃ রহমান শাহ ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানালেন কৃষক লীগ নেতা মোঃ হালিম খান পদ্মা সেতুতে একদিনে সর্বোচ্চ টোল আদায়ের রেকর্ড জাহাজেই ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করলেন জিম্মি নাবিকরা পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছে আলহাজ্ব লায়ন মোঃ দেলোয়ার হোসেন

জুমআর দিনে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার সুযোগঃ মাওলানা সাইফুল ইসলাম সালেহী

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট সময় : Wednesday, October 26, 2022
  • 266 Time View

মাওলানা সাইফুল ইসলাম সালেহীঃ

প্রতি শুক্রবার ছুটির দিন। এই দিনটিন জন্য চাকরিজীবি অথবা স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রিরা অপেক্ষায় থাকেন। এই দিনটি আসলে তাঁদের মনে প্রচুর আনন্দ বেঁড়ে যায়, কারণ তারা এই দিনে তাঁরা ঘুরবে এবং উপভোগ করবে। এই দিনে কেউ নানার বাড়িতে বেঁড়াতে যায় এবং কেউ আল্লাহর প্রকৃতি নিদর্শন দেখতে যায়। শহরের মানুষেরা এই দিনে বেশী ঘুরে এবং আত্মীয়দের বাঁসায় বেঁড়ায়। এই দিনে শহরে চাকরিজীবিরা ভাল রান্না ও খাবারের আয়োজন করে। কেউ বিপদ আপদে থাকলে এই দিনে মসজিদ অথবা বাঁসায় দোয়ার আয়োজন করা হয়, এবং এই দিনে কবরবাসীর জন্য দোয়ার আয়োজন করা হয়। এই দিনটি হল শুক্রবার এবং জুমআর দিন। এই দিনটির মযর্দা ও তাৎপর্য অনেক বেশী। প্রিয় পাঠক! এই দিনটির আমল ও ফজিলত সম্পর্কে তুলে ধরবো।

আল্লাহ তায়ালা বলেন- হে মু’মিনগণ! জুমআর দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হবে তখন তোমরা আল্লাহর স্মরনে ধাবিত হও এবং ক্রয় বিক্রয় ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলদ্ধি কর। (সূরা জুম’আ, আয়াত-৯) এই আয়াতের অনেক ব্যাখা রয়েছে, একটু ব্যাখা তুলে ধরলাম। আপনারা যখন জুমআর আযান শুনবেন তখন বেচ-কেনা ও সকল যাবতীয় কাজ কর্ম ছেড়ে দিবেন। জুমআর আযানের পরে বেচা-কেনা ও কোন কাজ কর্ম করলে এটা হারাম হবে, এবং নিষেধ করা হয়েছে। আমরা যখন জুমাআর আযান শুনবো তখন নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিবো এবং ভাই ভাতিজা ও ছেলেদের কে নিয়ে মসজিদে যাবো। প্রতিবেশী এবং সমাজের মানুষদের কে মসজিদের যাওয়ার জন্য আহ্বান জানাবো। এই দিনে শিশুরা দলে দলে মসজিদে যাবে, এটাই ইসলামের সৌন্দর্য। জুমআর নামাজের সময় সবাই মসজিদে একত্রিত হয় এবং ধনী গরীব সহ সব শ্রেণীর মানুষ থাকে, খুব সুন্দর একটি পরিবেশ সুষ্টি হয়। তখন সবার কন্ঠে আল্লাহ আকবার, সুবাহানাল্লাহ, আলহামদুল্লিাহ উচ্চ আওয়াজে মসজিদ কম্পিত হয়। আসলে সবার একত্রিত হওয়া বা উপস্থিত হওয়াকে বলে জুমাআ, জুমাআ এর অর্থ সমাবেশ বা সম্মেলন।

সর্বপ্রথম জুমআ, প্রথম হিজরীতে হিজরতের পরপর প্রিয় নবী করিম (সাঃ) এর মদীনা আগমনে সাথে জুমআ ফরয হয়। প্রিয় নবী করিম (সাঃ) সর্বপ্রথম জুমআ পড়েছিলেন মদীনা কুবা মসজিদে ও মসজিদে নববীর মধ্যবর্তী বনু সালেম ইবনে আউস গোত্রে (ইবনু শাইবা,তারীখুল মদীনা-১/৬৮) বর্তমান এ জায়গা নির্মিত মসজিদটির নাম মসজিদে জুমআ। এরপর তিনি প্রিয় নবী করিম (সাঃ) মসজিদে নববীতে জুমআ আদায় শুরু করেন। বর্তমান সৌদি আরবের পূর্ব এলাকা বাহরাইনের একটি গ্রামের নাম জুওয়াসা। (বুখারীঃ৮৯২,ইফা-৮৪

জুমআর এর নিয়ম ও বিবরণী সম্পর্কে জানবো। জুমআর নামাজের দুই রাকাত ফরজ, যা ইমামের সাথে আদায় করতে হয়। অধিকাংশ আলেমদের মতে, জুমআর ফরজের পূর্বে চার রাকাত কাবলাল জুমআ এবং ফরজের পরে চার রাকাত বাদাল জুমআ সুন্নত নামাজ আদায় করতে হয়। এছাড়া মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত দুখলুল মসজিদ ও দুই রাকাত তাহিয়াতুল ওযুর মোস্তাহাব নামাজও উৎসাহিত করা হয়। জুমার নামাজের বিবরণী জানবো, ১মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত তাহিয়াতুল ওযু ও দুই রাকাত দুখলুল মসজিদের মোস্তহাব নামাজ আদায় করবে। ২.চার রাকাত কাবলার জুমআ সুন্নাত নামাজ আদায় করবে। ৩.ইমামের খুৎবা পাঠ মনোযোগ দিয়ে শুনবে। ৪.ইমামের সাথে দুই রাকাত জুমআ ফরজ নামাজ আদায় করবে। ৫.ফরজ নামাজের পর তাৎক্ষণিক ভাবে মসজিদ ত্যাগ করবে না,বরং চার রাকাত বাদাল জুমআর সুন্নত নামাজ একাকী আদায় করবে।

জুমআ সালাতের ওয়াক্ত। অধিকাংশ আলেমের মতে, জুমআ ও যোহরের সময় একই। যখন যোহর শুরু হয় জুমাআও তখনই শুরু হয়। অর্থাৎ ঠিক দুপুরে সূর্য মাথার থেকে পশ্চিমে কিছুটা ঢলে পড়লে জুমাআ সময় শুরু হয় (বুখারী-৪১৬৮)

জুমআর সালাতে মুসুল্লীর সংখ্যা। কমপক্ষে কতজন মুসুল্লী হলে জুম’আর সালাত আদায় করা যায় এ বিষয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখপূর্বক কোন হাদীস পাওয়া যায় না। তবে বিজ্ঞ আলেমদের মতে, ইমাম ব্যতীত কমপক্ষে ৩ জন হলেই যথেষ্ট। একজন খুতবা দেবে, বাকী তিনজন শুনবে। ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) এ অভিমতটি গ্রহণ করেছেন। আর এটাই সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য মত।

জুমআ আদায়ের নুন্যতম এলাকা। যত ছোট গ্রামই হোক সেখানে জুম’আ পড়া জায়েয আছে। খলীফা উমর (রাঃ) বাহরাইনের অধিবাসীদের লিখেছেন। তোমরা যেখানেই থাক জুমআ পড়। (বুখারী-৮৯৩) ইবনে উমর (রাঃ) মক্কা মুকাররামা ও মদীনা মুনাওারার মধ্যবর্তী পথে ছোট ছোট জনপদগুলোতে মানুষকে জুম’আ পড়তে দেখেছেন। তিনি তাতে কোন আপত্তি করতেন না। (মুসান্নাফে আঃ রাজ্জাক) অপরদিকে পাড়াগ্রামে জুম’আ হবে না মর্মে খলীফা আলী (রাঃ) এর উদ্ধৃতি দিয়ে একটি হাদিস বর্ণনার প্রচলন এ দেশে আছে। আসলে এটি সহীহ হাদীস নয়। (মাজাল্লাতুল বুহসিল ইসলামিয়া ১৬/৩৫২-৩৫৪, ২২/৭৫) উল্লেখ্য যে, কোন অমুসলিম দেশে পড়াশোনা বা চাকরীরত অবস্থায় সেখানে মসজিদ না থাকলে কোন একটি রুমে ৩ জন মিলে জুম’আ পড়লেও তা আদায় হয়ে যাবে। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিক ১৫/৮৫)

জুমআর নামাজ যার উপর ফরজ। হুঁশ-জ্ঞান সম্পন্ন ও স্বাধীন প্রত্যেক বালেগ মুসলমান পুরুষদের উপর জুম’আ ফরজ। এ বিষয়ে সারকথা হচ্ছে, যার মধ্যে নিম্নে বর্ণিত শর্তগুলো একযোগে পাওয়া যায় তার উপর জুম’আ ফরজ।

১. মুসলমান হওয়া (কারণ ইসলাম গ্রহন ছাড়া কোন ইবাদতই কবুল হয় না)। ২. বালেগ হওয়া (তবে নাবালেগ শিশু জুম’আ পড়লে সওয়াব পাবে)। ৩. হুঁশ জ্ঞান থাকা (কারণ বেহুঁশ বা পাগলের কোন ইবাদত নেই)। ৪. পুরুষ হওয়া (মেয়েদের উপর জুম’আ ফরজ নয়, তবে পড়লে আদায় হবে)। ৫. স্বাধীন হওয়া (গোলাম বা ক্রীতদাস হলে জুম’আ ফরয হয় না)। ৬. মুকিম হওয়া (মুসাফির অবস্থায় জুম’আ ফরজ হয় না)। ৭. শরয়ী ওজর না থাকা (অসুস্থ, ভয় ভীতি বা নিরাপত্তাহীনতায় না থাকা)

যাদের উপর জুম’আ ফরয নয় তারা যদি জুম’আ পড়ে তবে তা আদায় হয়ে যাবে। যেমন শিশু, মহিলা, রোগী বা উযর আছে এমন যে কেউ জুম’আ পড়লে তা আদায় হয়ে যাবে এবং এর সওয়াব ও পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে তাদের আর যোহর পড়তে হবে না। তবে মেয়েরা ইমাম হতে পারবে না, খুতবা দিতে পারবে না।

রাস্তায় কাদা থাকা, পথ পিচ্ছিল হওয়া ইত্যাদি কারণে কেউ জুম’আয় যেতে না পারলে এমতবস্থায় তার গুনাহ হবে না। তবে বাসায় যোহর পড়ে নেবে। (বুখারী,৯০১,ইফা-৮৫৫)

যারা লোকালয়ের বাইরে বা সমুদ্রে এতটুকু দূরে কাজ করে যে, সেখান থেকে আযান শুনতে পায় না, তাদের উপর জুম’আ ফরজ নয়, তবে এসে জুম’আয় শরীক হতে পারলে সওয়াব পাবে। (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন/৩৯৯) মুসাফির ব্যক্তি জুম’আর খুতবা দিতে ও ইমামতি করতে পারবে। (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন,৫/২৩) জুম’আ ফরজ ‘এমন’ ব্যক্তির জুম’আর দিনে সফরে বের হলে, পথিমধ্যে কোথাও জুম’আ পড়তে পারে- এমন নিশ্চয়তা থাকলে একদল আলেমের মতে, এ দিন সফর করা জায়েয আছে। আর যদি কোথাও জুম’আ না পাওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে এ দিন সফর করা উচিত নয়। তবে জুম’আর সালাত শেষ হওয়ার পর সফর করতে কোন নিষেধ নেই।

জুমআর দিনের ফযীলত সমূহ। এই দিনে আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল। একই দিনে তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। (মুসলিম, ৮৫৪) একই দিনে তাঁকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছিল। এই দিনেই তার তওবা কবুল করা হয়েছিল। এই দিনেই তাঁর রূহ কবজ করা হয়েছিল। (আবু দাউদ,-১০৪৬) এই দিনে শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। এই দিনেই কিয়ামত হবে। এই দিনেই সকলেই বেহুঁশ হয়ে যাবে। (আবু দাউদ,১০৪৭) প্রত্যেক নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা, আকাশ, পৃথিবী, বাতাস, পর্বত ও সমুদ্র এই দিনটিকে ভয় করে।” (ইবনে মাজাহ,১০৮৪)

জুম’আর দিন হল সাপ্তাহিক ঈদের দিন। (ইবনে মাজাহ,১০৯৮) জুমআর দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনের চেয়েও শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদা সম্পন্ন। (মুসনাদে আহমদ ৩/৪৩০,ইবনে মাজাহ- ১০৮৪) জুম’আর দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, তা-ই তাকে দেওয়া হয়। আর এ সময়টি হল জুম’আর দিন আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত। (বুখারী ৯৩৫, ইফা- ৮৮৮) যে ব্যক্তি জুম’আর দিনে সূরা কাহাফ পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য দুই জুম’আর মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেবেন। (জামেউস সাগীর,৬৪৭০) যে ব্যক্তি জুমআর দিনে সূরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত পড়বে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপত্তা লাভ করবে। (মুসলিম) প্রত্যেক সপ্তাহে জুম’আর দিন আল্লাহ তায়ালা বেহেশতী বান্দাদের দর্শন দেবেন। (সহীহুত তারগীব) এই দিনে দান খয়রাত করার সওয়াব অন্য দিনের চেয়ে বেশী হয়। ইবনুল কায়্যিম বলেছেন, অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসের দানের সওয়াব যেমন বেশী তেমনি শুক্রবারের দান খয়রাত অন্য দিনের তুলনায় বেশী। (যাদুল মা’আদ)

জুমআর দিনের আদব। ফজরের আগে গোসল করা। ফজরের ফরজ নামাজে সূরা সাজদা [সিজদা] ও সূরা দাহর/ইনসান তিলাওয়াত করা। উত্তম পোষাক পরিধান করা। সুগন্ধি লাগানো। প্রথম ওয়াক্তে মসজিদে যাওয়া। সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা। মসজিদে গিয়ে কমপক্ষে দুই রাকা’আত সুন্নত আদায় করা। ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসা। মনেযোগ দিয়ে খুতবা শোনা। খুৎবাহ চলাকালীন সময়ে কোন ধরনের কোন কথা না বলা; এমনকি কাউকে কথা বলতে দেখলে তাকে কথা বলতে বারণ করাও কথা বলার শামিল। দুই খুৎবার মাঝের সময়ে দু’আ করা। অন্য সময়ে দু’আ করা। কারণ এদিন দু’আ কবুল হয়। রাসূলের উপর সারাদিন বেশী বেশী দরূদ পাঠানো। আসুন আমরা জুমার দিনে বেশী বেশী আমল করে যেন আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারি, আমিন। লেখকঃ আলেম, প্রাবন্ধিক।
সাইফুল
সাইফুল ইসলাম সালেহী

শেয়ার করুন
More News Of This Category

Dairy and pen distribution

ডিজাইনঃ নাগরিক আইটি ডটকম
themesba-lates1749691102