নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঐতিহাসিক মসজিদটির নাম পাগলা মসজিদ। কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত এ মসজিদটির দশটি লোহার দানবাক্স আছে। প্রতি তিন মাস পর পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এবার তিন মাস ১৪ দিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে।
আজ ৩০ নভেম্বর ২০২৪ রোজ শনিবার সকাল ৭টায় দশটি দানবাক্স ও একটি ট্যাঙ্ক থেকে রেকর্ড ২৯ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। সাথে পাওয়া গেছে বৈদেশিক মুদ্রা ও সোনার গয়না। এখন চলছে গণনার কাজ। গণনায় অংশ নিয়েছেন প্রায় ৪০০ জনের একটি দল।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এবার আমরা ৩ মাস ১৪ দিন পর দানবাক্স খুলেছি। এবার রেকর্ড ২৯ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। ব্যাংক কর্মকর্তা ও মাদরাসার ছাত্ররা টাকা গণনার কাজ করছেন। এর আগে গত ১৭ আগস্ট ৩ মাস ২৭ দিন পর কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স ও একটি ট্রাঙ্ক খুলে ২৮ বস্তা টাকার গণনা শেষে পাওয়া গিয়েছিল ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা। এর আগে গত ২০ এপ্রিল পাগলা মসজিদের নয়টি দানবাক্সে রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া গেছে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে। সাড়ে ১৮ ঘণ্টায় ২২০ জনেরও বেশি লোক এ টাকা গণনায় অংশ নেন। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে। এর আগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্সে রেকর্ড ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গেছে। সাড়ে ১৫ ঘণ্টায় ২২০ জনেরও বেশি লোক এ টাকা গণনায় অংশ নেন। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়।
মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল ৭টার দিকে, কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের ৯টি দান দানবাক্স খোলা হয়েছে। দানবাক্সগুলো খুলে ২৯টি বস্তায় ভরে টাকাগুলো মসজিদের দোতলায় আনা হয়েছে গণনার জন্য। এখন চলছে টাকা গণনার কাজ। টাকা গণনার কাজে কিশোরগঞ্জের জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রুবেল মাহমুদ, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলামসহ মাদরাসার প্রায় ২৮৫ জন ছাত্র, ব্যাংকের ৮৫ জন স্টাফ, মসজিদ কমিটির ৩৪ জন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ জন সদস্য অংশ নিয়েছেন। মসজিদের খতিব, এলাকাবাসী ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন সূত্রে জানা যায়, এ মসজিদে মানত করলে মনের আশা পূর্ণ হয়। এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এ মসজিদে দান করে থাকেন।
জনশ্রুতি আছে, এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন এলাকাবাসী। কিন্তু ওই সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এ মসজিদে। তারা নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি এমনকি বৈদেশিক মুদ্রাও দান করেন। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।
বর্তমানে কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ জমির ওপর মসজিদটি গড়ে উঠলেও বর্তমানে মসজিদ কমপ্লেক্সটি ৩ একর ৮৮ শতাংশ জায়গা আছে। এ মসজিদের পরিধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্য। এরই মধ্যে দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামি কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়।
মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। এছাড়া করোনাকালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছিল এ দানের টাকা থেকে। পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানিয়েছে, ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এর কাজ শুরু হবে। যার নামকরণ হবে পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। সেখানে ৩০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।