মোহাম্মদ ইরফান:
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ২ শতাধিক এটিএম বুথ থেকে অভিনব কৌশলে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে আটজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এরা একটি চক্রের সদস্য বলে জানায় র্যাব।
রোববার (৬ মার্চ) কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
শনিবার (৫ মার্চ) রাতে রাজধানীর মিরপুর, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, আব্দুর রহমান বিশ্বাস (৩২), মাে. তারেক আজিজ (২৫), তাহমিদ উদ্দিন পাঠান (সােহান) (২৮), মাে. রবিউল হাসান (২৭), হাবিবুর রহমান ইলিয়াস (৩৬), মাে. কামরুল হাসান (৪৩), মাে. সুজন মিয়া (৩১) ও মাে. আব্দুল কাদের (৪৩)।
এসময় তাদের কাছ থেকে ২টি চেকবই, ১টি এটিএম কার্ড, ৪টি আইডিকার্ড, ১টি সোনার নেকলেস, ১ জোড়া বালা, ১ জোড়া কানের দোল, ১টি আংটি এবং নগদ ৯ লাখ ৪১ হাজার ৫৫৫ টাকা জব্দ করা হয়।
মঈন বলেন, এই চক্রটি একটি বেসরকারি ব্যাংকের ২ শতাধিক এটিএম বুথ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সঙ্গে জড়িত।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের অডিটে এটিএম বুথের টাকার বেশকিছু গড়মিল পরিলক্ষিত হয়। বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থার্ড পার্টি নিয়ে র্যাবের শরণাপন্ন হয়। ফলশ্রুতিতে র্যাব গােয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে।
ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে র্যাব উদঘাটন করে যে, থার্ড পার্টি পরিবর্তিত হলেও টাকা লােডার ও অন্যান্য কারিগরি দলের কোন পরিবর্তন হয়নি। ফলশ্রুতিতে র্যাব তদন্ত অব্যাহত রাখে এবং গতরাত তাদের গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা পরস্পর যােগসাজশে বেশ কয়েকটি এটিএম বুথ থেকে টাকা আত্মসাতের সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। আব্দুর রহমান সিন্ডিকেটের মূলহােতা। সে তার এক পূর্ববর্তী সহকর্মী হতে বিষয়টি রপ্ত করে বলে জানিয়েছে।
গ্রেফতারকৃত অন্যরা তাদের সহযােগী। যারা কন্ট্রোল রুম, লােডিং, কলিং এবং মেনটেইনেন্সের দায়িত্ব পালন করে থাকে। গ্রেফতারকৃতরা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা স্থাপন ও মনিটরিং কাজে নিযুক্ত ছিল। তারা ঢাকা শহরের ২৩১টি এটিএম বুথ মেশিনে টাকা লােড করে থাকে। এই ২৩১টি এটিএম বুথ মেশিনে টাকা স্থাপনের জন্য ১৯ জন লােডার নিযুক্ত রয়েছে। যারা প্রয়ােজনে বিভিন্ন স্থানে অর্থ পৌঁছে দিয়ে থাকে। এছাড়া টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, কারিগরি সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কয়েকজন নিয়ােজিত থাকত। চক্রটি লােডিং ট্রেতে টাকা স্থাপনের সময় ১৯টি ১০০০ টাকার নােটের পরপর অথবা অন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ইচ্ছাকৃতভাবে জ্যাম করে রাখত।
কোন ক্লাইন্ট এটিএম বুথে টাকা উত্তোলনের জন্য এটিএম কার্ড প্রবেশ করিয়ে গােপন পিন নম্বর দিয়ে কমান্ড করলে ওই পরিমাণ টাকা ডেলিভারি না হয়ে পার্সবিনে জমা হত। পরবর্তীতে সেই টাকা তারা সরিয়ে নিত। এক্ষেত্রে মেশিনের একটি কৌশল অবলম্বন করে তারা টাকাগুলাে আত্মসাৎ করত।
গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহমান বলেন, সে এই চক্রের মূলহােতা। সে বিগত ৩/৪ বছর পূর্বে একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানিতে চাকরি নেয়। তার দায়িত্বপূর্ণ এলাকা মিরপুর, কালশী, বেনারশি, সেনপাড়া, ইব্রাহিমপুর ও কচুক্ষেত এলাকা। সে প্রতিদিন বিভিন্ন এটিএম বুথে কৃত্রিম জ্যাম সৃষ্টির মাধ্যমে বিপুল
পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। এ দলের সদস্যরা শিক্ষিত বলে তিনি জানান।