মুফতি মুহাম্মদ এহছানুল হক জেহাদী মুজাদ্দেদীঃ
মানব জাতি যখন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশিত তাঁর প্রিয় রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত সাহাবা কিরামদের রূপরেখা হতে বিচ্যুত হয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের পরিবর্তে দ্বিত্ববাদ, ত্রিত্ববাদ উপাসনায় লিপ্ত হয়ে যায় সকল স্তরে কুরআন সুন্নাহর বিপরীতে মানুষ কুফর শিরক বিদআত কুসংস্কারে ও ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপে নিমজ্জিত হয়ে যায় তখনি দিকভ্রান্ত মানবদের সঠিক পথ নির্দেশনার লক্ষ্যে মহান আল্লাহ তায়ালা শতাব্দীর পরিক্রমায় এক একজন মুজাদ্দিদ বা দ্বীনের সংস্কারক প্রেরণে বিশ্বমানবদের পথপ্রদর্শন করেন। এ সম্পর্কে প্রিয় রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা এ উম্মতের জন্য প্রতি শতাব্দীর শুরুতে এমন ব্যক্তিকে প্রেরণ করেন যিনি দ্বীনকে নতুনভাবে সংস্কার করবেন। (আবু দাউদ, জামেউস সগীর)।
আলা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত মাওলানা আহমদ রেযা খাঁন বেরলভী (রহঃ) হলেন চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ। ভারতবর্ষে আরব আজমে তিনি যুগের অদ্বিতীয় জ্ঞানী মনিষী আইন বিশারদ, হাদীস বিদ, তাফসীরকারক, নবী প্রেমিক। ইসলামের এ সেবকের জন্ম ১০ শাওয়াল ১২৭২ হিজরী, মোতাবেক ১৪ ই জুন ১৮৫৬ খ্রী, ভারতের বেরীলী শহরে। পিতা মাওলানা নকী আলী খাঁন ও মাতা হোসাইনী খানমের নেক দোয়ার ফসল তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক ও মহান আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত জ্ঞানে তিনি ছিলেন মহাজ্ঞানী।
বহুমুখী প্রতিভা, অনন্য স্মরণশক্তির অধিকারী আলা হযরত (রহঃ) ইলমে কুরআন, ক্বিরাত,তাজভীদ, তাফসীর ইলমে হাদীস, দর্শন, অংক শাস্ত্র প্রকৌশল বিদ্যা, মাজহাব তরীকতের কিতাবাদিসহ ৫৫ এর অধিক বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন।
তিনি পবিত্র রমজানে শুনে শুনেই আল কুরআনের হাফেজ হয়েছিলেন। ইসলামের খিদমতে তিনি পবিত্র আল কুরআনের তাফসীর কানজুল ইমান, নবীজির শানে নাতে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদায়েকে বখশিশ, ইলমে ফিকহের ৩০ খন্ডের অন্যতম গ্রন্হ ফাতওয়ায়ে রিজভিয়াসহ প্রায় ১৫০০ কিতাব রচনা করেন।
শিক্ষকতার মহান পেশায় তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। ব্যক্তিগত তিনি জীবনে এক স্ত্রী ৭ সন্তানের জনক। পবিত্র হজ্জের সফরে হিজাযবাসী আলেমগণ তাঁকে প্রাণঢালা সম্মান প্রদর্শন করেন। হুসসামুল হেরমাইন, আদদৌলাতুল মক্কীয়াহ কিতাবে তার বর্ণনা পাওয়া যায়।
ইমাম আহমদ রেজা (রহঃ) সম্পর্কে মাওলানা আশরাফ আলী থানবী বলেন, আমার যদি সুযোগ হতো, তাহলে আমি আহমদ রেজা খান বেরলীর পেছনে নামাজ পড়ে নিতাম। (উসউয়া-ই- আকাবিরঃ ১৮ পৃষ্ঠা)
ইসলামের এ সেবক ২৫ সফর ১৩৪০ হিজরী মোতাবেক ২৭শে সেপ্টেম্বর ১৯২১ সনে জুম্মাবার বেরীলী শহরে ইন্তেকাল করেন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। দারুল উলুম মানযারুল ইসলামের উত্তর পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
মহান আল্লাহ তায়ালা প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ প্রেমিককে জান্নাতের উচ্চাসনে আসীন করুন, আমিন।
সাইফুল ইসলাম সালেহী