এম এ কবীর, ঝিনাইদহঃ
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে বলেছেন, তত্বাবধায়ক সরকারের কথা ভুলে যান। আদালতের নির্দেশে ওটা এখন মিউজিয়ামে। সন্ত্রাস করে,আগুন দিয়ে সরকারের পতন ঘটানো যাবে না। আজ রোববার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বিএনপির নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে বলেন, ‘বিজয়ের মাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইবেন, সন্ত্রাসী কাজ করবেন, বাঁশের লাঠিতে জাতীয় পতাকা নিয়ে ঝামেলা করবেন, এটা আমরা হতে দেব না। আওয়ামী লীগ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেবে না।’ আওয়ামী লীগের এই নেতা অভিযোগ করেন, ‘মির্জা ফখরুল টাকার বস্তার ওপর বসে আছেন। কারে এমপি বানাবেন, কারে মন্ত্রী করবেন, তার জন্যও টাকা। জাতীয় সরকার কারে করবেন, সেখানেও টাকা। শুরু হয়ে গেছে মনোনয়ন বাণিজ্য।’ ওবায়দুল কাদের সম্মেলন উপলক্ষে বিলবোর্ডের পেছনে খরচ কমাতে বলেছেন নেতাদের। তিনি বলেন, ‘এত বিলবোর্ড আর কখনো দেখিনি। নেত্রী বলেছেন খরচ কম করতে। এখানে এসে দেখলাম বিলবোর্ড আর বিলবোর্ড। খরচ কমান, মানুষের কল্যাণে কাজ করেন। মানুষের পাশে দাঁড়ান।’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, দুবাই থেকে আনা টাকার বস্তা নিয়ে আপনি মাঠে নেমেছেন। আকাশে-বাতাসে এখন টাকা ওড়ে। বরিশাল ও ফরিদপুর সমাবেশে টাকা ওড়ে। এখন থেকেই মনোনয়ন বাণিজ্য ও এমপি-মন্ত্রী কেনাবেচা শুরু করেছে বিএনপি। কিন্তু আওয়ামী লীগ এসব হতে দেবে না। তিনি বলেন,অর্থ পাচার মামলায় দন্ড নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা আসামি তারেক রহমানকে যদি নেতা বানানো হয়, তবে খেলা হবে। ঝিনাইদহ জেলা আওয়াম লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলের কারা কারা দুর্নীতি করে আমরা জানি। সময় আছে সংশোধন হয়ে যান। নইলে খবর আছে। সম্মেলনের ব্যানারে নিজের নামের বানান ভুল দেখে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, এত আয়োজন অথচ হেলিকপ্টার থেকে নেমে দেখি আমার নামের বানান ভুল। নেত্রী বলেছেন বিলাসবহুল সম্মেলন করা যাবে না। সাশ্রয়ী হতে হবে। গরিবের পাশে দাঁড়াতে হবে। অপচয় করা যাবে না। অথচ বিলবোর্ড বানিয়ে সবাইকে নায়ক বানিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সময় বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমানকে অন্যতম কুশীলব বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী। জিয়াউর রহমানকে মীরজাফরের সঙ্গে তুলনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সেদিন ইতিহাসের মহানায়ক মহাবীর বঙ্গবন্ধুর নাম ওরা মুছে দিতে চেয়েছিল, শিশু রাসেলকে হত্যা করেছিল। মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল ও জামালকে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। তিনি বলেন, কে বলেছে বঙ্গবন্ধু নেই? তিনি আছেন কৃষকের লাঙ্গলের ফালে, ভাটিয়ালি গানে, পাখির কলরবে। যতদিন সমুদ্রের গর্জন থাকবে, তোমার স্মৃতি কেউ মুছে দিতে পারবে না। তোমার নাম মুছে ফেলার সাধ্য কারো নেই। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য দেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আমিরুল আলম মিলন, পারভিন জামান কল্পনা, গেøারিয়া সরকার ঝর্ণা, স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খান ”ঞ্চল, আনোয়ারুল আজীম আনার ও তাহজিব আলম সিদ্দিকি সমি সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।। সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। এদিকে সকাল থেকেই সম্মেলনস্থল ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড মাঠে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেন। বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলা থেকেও নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আসেন। সকাল ১০টার দিকে কিছু সময়ের জন্য হট্টগোল শুরু হয়। চেয়ার ছোড়াছুড়ি করেন কিছু নেতা-কর্মী। সম্মেলনের প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় পর্বের শুরুতে জেলা কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। পরে তিনি বর্তমান সভাপতি সংসদ সদস্য আব্দুল হাইকে সভাপতি ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন। দীর্ঘ সাত বছর পর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর সম্মেলন ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। এর আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।