মোহাম্মদ ইরফান।
ঢাকা জেলার আশুলিয়ায় ৩০০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এক প্রতিষ্ঠানের সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দশ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মো. ইকবাল হোসেন সরকার (৩৫), মো. মাজহারুল ইসলাম (৩৫), মো. মমিন হোসেন (৩৫), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) মো. মিজানুর রহমান (৩৮), মো. আল আমিন হোসেন (২৮), ইব্রাহিম খলিল (৩৫), এস এম মকবুল হোসেন (৪০), ফজলুল হক (৩৫) ও মো. নূর হোসেন (২৭)।
র্যাব-৪ সিপিসি -২ কোম্পানি কমান্ডার
লে. কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খান এর নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল আশুলিয়া এলাকায় মঙ্গল ও বুধবার সাড়াশি অভিযান চালিয়ে প্রতারণার দায়ে চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এর সহ-সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
এসময় তাদের অফিস থেকে ভর্তি ফরম, ঋণ গ্রহীতার ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র, ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের জীবন বৃত্তান্ত, লিফলেট, সিল, বিভিন্ন নামে সঞ্চয় পাশবই, অব্যবহৃত পাশ বই, দৈনিক কিস্তি, ঋণ বিতরণের বিভিন্ন রেজিস্টার, ব্যাংক চেকসহ ব্যাংক স্ট্যাম্প, আইডি কার্ড, দৈনিক কিস্তি আদায়ের শিট, বিভিন্ন প্রকার সার্টিফিকেট, চেক বই, মনিটর, সিপিইউ, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (২৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা যায়, এক হাজারের অধিক পরিবারের প্রায় শতাধিক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এ চক্রটি। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক উচ্চ ফার্ম ফ্ল্যাট ইত্যাদি দেখিয়ে তাদের কাছে থেকে লাখে প্রতি মাসে ঢাকার পরিমাণ ও মেয়াদ অনুযায়ী ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের ঢাকা হাতিয়ে নেয়। প্রথমে ঠিকঠাক মতো লভ্যাংশ দিলেও এর কিছুদিন পর থেকে লভ্যাংশ তো দিচ্ছেই না বরং মেয়াদ পূর্ণ হলেও আসল টাকা দিতেই নানা ভালবাহানা শুরু করে। সর্বশেষ ভূক্তভোগীরা আসল টাকা ফেরত চাইলে শনিবার সকালে টাকা দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের শতাধিক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়ে যায় এই প্রতারক চক্রটি।
অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, এই প্রতারক চক্রের মাঠ পর্যায়ের কর্মী সদস্য রয়েছে। এরা ঢাকা জেলার আশুলিয়া, সাভার ও ধামরাই এলাকার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ যেমন-গার্মেন্টসকর্মী, রিক্সাচালক, ভ্যানচালক, অটোচালক, সবজি ব্যবসায়ী, ফল ব্যবসায়ীসহ নিম্নআয়ের মানুষদের টার্গেট করে প্রতি লঞ্চে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা মাসিক লভ্যাংশ এবং স্বল্প সময়ে মাসিক মেয়াদ শেষে অধিক মুনাফা লাভের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কোম্পানীতে বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করত। ভিকটিমদের প্রলুব্ধ করতে তার বিভিন্ন প্রজেক্ট, গাছের বাগান, ডেইরি ফার্ম, ফ্ল্যাট ও প্লটের প্রলোভন দেখিয়ে ভুলিয়ে নানান কৌশলে প্রতারক চক্রের অফিস কার্যালয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হতো। তারা ভিকটিমদের বুঝাতো যে তাদের কাছে এফডিআর করলে ০১ লক্ষ টাকায় মাসে ১ হাজার ৮০০ টাকা লভ্যাংশ প্রদান করা হবে প্রকৃতপক্ষে যা বাংলাদেশে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান দিতে পারেনা।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্প যেমন, বিভিন্ন সঞ্চয়ী প্রকল্প, ডিপিএস, এফডিআর, পেনশন পলিসি, হজ্জ পলিসি প্রজেক্ট, বাগান, ডেইরি ফার্ম ফ্ল্যাট ইত্যাদি দেখিয়ে তাদের কাছে থেকে গাছের বাগান, ডেইরি ফার্ম, হচ্ছে পাঠানো, ফ্ল্যাট ও প্লট ইত্যাদির মাধ্যমে গ্রহককে উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারনামূলকভাবে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিলো।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। তবে অসাধু সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে র্যাব-৪ এর জোড়ালো সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।