মোঃ ইব্রাহিম হোসেনঃ সরবরাহ বাড়ায় কম দামে ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে রাজধানী মোহাম্মদপুর টাউনহল শহীদপার্ক কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উত্তর পাশে ইলিশ মাছ ব্যবসায়ী মোঃ জসিম উদ্দিন নয়নের দোকানে।
৩ অক্টোবর ২০২০ রোজ শনিবার মোহাম্মদপুর কয়েকটি মাছ বাজারে খোঁজ নিলে ব্যবসায়ীরা জানান, ভরা মৌসুমে বাজারে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। দামও আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। মোহাম্মদপুর বাজারে এখন এক কেজি ওজনের বেশী ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯ শত থেকে ১ হাজার টাকায়। মাঝারি আকারের ইলিশও বাজারে প্রচুর মিলছে। ৮০০ গ্রামের কাছাকাছি ওজনের একেকটি ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা বা তার কিছুটা বেশি দরে। তবে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের থেকে মোঃ জসিম উদ্দিন নয়নের দোকানে সব চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্চে।
স্বাদে ও ঘ্রাণে অন্যান্য মাছকে পেছনে ফেলা ইলিশ বাঙালি সমাজে ‘মাছের রাজা’ হিসেবে আদৃত। তবে পুষ্টিগুণের দিক থেকেও অনন্য এই রুপালি মাছটি। নিয়মিত এই সামুদ্রিক মাছ খেলে তা অনেক রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হয়।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, প্রতি ১০০ গ্রাম ইলিশ মাছে ২১.৮ গ্রাম প্রোটিন, ২৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৩.৩৯ গ্রাম শর্করা, ২.২ গ্রাম খনিজ ও ১৯.৪ গ্রাম চর্বি, ১৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন খনিজ, খনিজ লবণ, আয়োডিন এবং লিপিড রয়েছে, যা অন্যান্য মাছ ও মাংসের তুলনায় অনেক বেশি। ওয়ার্ল্ড ফিশের হিসাবে ওমেগা-৩ পুষ্টিগুণের দিক থেকে স্যামন মাছের পরেই রয়েছে ইলিশ। জনপ্রিয়তায় স্যামন ও টুনা মাছের পরই ইলিশের অবস্থান।
মাছের রাজা ইলিশ আমাদের শরীরে কী কী পুষ্টি উপাদানের জোগান দেয় এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
হার্ট সুস্থ থাকে: ইলিশ মাছে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ একেবারেই কম। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।
রক্ত সঞ্চালন ও বাত নিয়ন্ত্রণঃ শরীরে ইকসিনয়েড হরমোনের প্রভাবে রক্ত জমাট বেঁধে শিরা ফুলে যায়। ইলিশ মূলত সামুদ্রিক মাছ হওয়ায় এর ইপিএ ও ডিএইচএ ওমেগা-থ্রি অয়েল মানুষের শরীরে ইকসিনয়েড হরমোন তৈরি রুখতে পারে। ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং থ্রম্বসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
পাশাপশি প্রতিদিনের খাবারে সামুদ্রিক মাছ থাকলে বাতের ব্যথার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এই মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের সঙ্গে অস্টিওআর্থারাইটিসের প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে।
রাতকানা রোধেঃ ইলিশ মাছে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ থাকে, যা রাতকানা রোগ মোকাবিলায় করতেও সাহায্য করে। পাশাপাশি চোখের স্বাস্থ্য ভাল থাকে, চোখ উজ্জ্বল হয়। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বয়সকালে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসার মোকাবিলা করে।
ক্যান্সার মোকাবেলায়ঃ ইলিশে প্রয়োজনীয় খনিজ থাকে, যেমন- থায়রয়েড গ্ল্যান্ড সুস্থ রাখতে আয়োডিন, ক্যানসারের মোকাবিলায় সেলেনিয়াম। এ ছাড়া জিঙ্ক, পটাশিয়াম, ভিটামিন এ এবং ডি রয়েছে এই মাছে।
হাঁপানি রোধেঃ শিশুদের ক্ষেত্রে হাঁপানি রোধে ইলিশ খুবই উপকারী। গবেষকদের মতে, সামুদ্রিক মাছ ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। যারা নিয়মিত সামুদ্রিক মাছ খান তাদের ফুসফুস অনেক বেশি শক্তিশালী হয়।
অবসাদ দূর করতে ও পেটের যত্নেঃ অবসাদ দূর করার ক্ষেত্রেও খাবারের তালিকায় তেলযুক্ত মাছ থাকলে পেটের সমস্যা অনেক কম হয় এবং আলসার ও কোলাইটিস থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যসিড ইলিশে রয়েছে।
ত্বকের যত্নেঃ সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। ইলিশ থাকা প্রোটিন কোলাজেনের অন্যতম উপাদান। এই কোলাজেন ত্বক টাইট ও নমনীয় রাখতে সাহায্য করে।
শিশুদের মস্তিষ্কের গঠনঃ অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার(ADHD) রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ইলিশ। আমাদের মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশই তৈরি ফ্যাট দিয়ে। এর অধিকাংশই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যারা নিয়মিত মাছ খান তাদের মধ্যে বয়স কালে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক কম দেখা যায়। শিশুদের মস্তিষ্কের গঠনেও সাহায্য করে ডিএইচএ এবং স্মৃতিশক্তি, পড়াশোনায় মনযোগ বাড়ায়।