মোঃ ইব্রাহিম হোসেনঃ করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকার পর আগামীকাল ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ রোজ রবিবার খুলছে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এজন্য বৃহস্পতিবারের মধ্যে সকল স্কুল-কলেজ-মাদরাসাকে পাঠদান উপযোগী করার নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। নির্দেশনা মেনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শেষ করা হয়েছে ধোয়া-মোছা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। এদিকে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে বিশেষভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত বছরের ১৭ মার্চ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর দফায় দফায় সেই ছুটি বাড়ানো হয় ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। যদিও এর মধ্যে কয়েকবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতির কথা বলা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। সবশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছেন, খুব তাড়াতাড়ি স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। ওই রাতেই বৈঠক করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পক্ষে মত দেয় করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এরপর দিন ৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠানে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণা দেন। আর গত রোববার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে শেষে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা খোলার পর প্রথমে চলতি বছরের এবং আগামী বছরের এসএসসি-দাখিল ও এইচএসসি-আলিম পরীক্ষার্থী এবং প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে। বাকি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস হবে। ক্লাস শুরু হলে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করাসহ কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণায় উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পর ক্লাসরুমে ফিরতে উদগ্রিব হয়ে আছে তারা। এজন্য ইতোমধ্যে জামা-কাপড় তৈরি, বই-খাতাপত্রসহ অন্যান্য উপকরণ কেনাকাটাও শেষ তাদের। এখন অপেক্ষা বন্ধুদের সঙ্গে দীর্ঘদিন পর দেখা হবে। রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত সব পরিবারে একই চিত্র। যেসব পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করেন, প্রতিটি পরিবারে চলছে স্কুল-কলেজ-মাদরাসার ক্লাসে যাওয়ার উৎসবের আমেজ। শিক্ষার্থীদের এই আমেজে বাবা-মাসহ পরিবারের বড় সদস্যরাও শরীক হচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে এতে শিক্ষকরাও দারুণ খুশি।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণার পর থেকেই ক্লাসরুম পাঠদান উপযোগী করতে কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয় ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে। নির্দেশনা অনুযায়ী বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই সেরেছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ, কেটে ফেলা হয়েছে খেলার মাঠের ঘাস, ধোয়া-মোছাও শেষ ক্লাস রুম, চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চ। কোন কোন স্কুলে ছিটানো হয়েছে জীবণুনাশক ওষুধও।
আজ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ রোজ শনিবার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৪ নং ঘোড়শাল ইউনিয়নের ৩১ নাং নারিকেল বাড়ীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবে শ্রেণিকক্ষগুলোতে জীবণুনাশক স্প্রে করা হয়েছে।
এদিকে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর ক্লাস শুরু হওয়ায় কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে আয়োজন করেছে নানা প্রস্তুতি। আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে ছাত্রীদের ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৪ নং ঘোড়শাল ইউনিয়নের নারিকেল বাড়ীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। নারিকেল বাড়ীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর আবারও ক্লাসে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ক্লাসের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতে তারা কিছু পরিকল্পনার কথা ভাবছেন। ক্লাসের প্রথম দিন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বরণ করে নেবেন তারা।
তবে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ১৩ জেলায় বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এছাড়া অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
এছাড়া করোনাকালে শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থীই আর স্কুলে ফিরবে না। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে না পেরে অনেক ছাত্রছাত্রী এরই মধ্যে বিভিন্ন কাজে জড়িয়েছে। জোর করে অনেক মেয়েকে বাল্যবিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাটা কত হবে তার ধারণা না মিললেও কিন্ডারগার্টেন আর বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরই শিক্ষাঙ্গনমুখী না হওয়ার শঙ্কা বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। শিক্ষার্থীদের এই ঝরেপড়া রোধ করাটাই এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
মনিটরিং টিম গঠনের নির্দেশ: প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা পালন নিশ্চিত করতে ও সঠিকভাবে অনুসরণের জন্য মনিটরিং টিম গঠনের জন্য নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। সরকারি-বেসরকারি সব স্কুল-কলেজকে মনিটরিং টিম গঠনের নির্দেশ দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে। শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ আদেশে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সব মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে বিবেচনায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন মাঠ পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানকে অধিদপ্তর থেকে পাঠানো কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুকরণ সংক্রান্ত নির্দেশনা ও কার্যক্রমগুলো যথাযথ ও সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে মেনে চলা এবং তা অনুসরণের জন্য একটি মনিটরিং টিম গঠনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো।