মোঃ ইব্রাহিম হোসেনঃ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্নেহ ধন্য আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি সুপরিচিত নাম।২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর তিনি ইহকাল ত্যাগ করলেও তার কর্মকান্ডের জন্য আজো বাংলার মানুষের কাছে স্মরণীয় বরণীয় হয়ে আছেন এবং থাকবেন চিরকাল। তিনি জন্মে ছিলেন শরীয়তপুরের নিভৃত এক পল্লীতে। দেশ, মাটি ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থাকায় শরীয়তপুর থেকে উঠে আসা আবদুর রাজ্জাক নামের মানুষটি এক সময় জাতীয় নেতায় পরিণত হন। যে কারণে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় নেতার কাতারে প্রথমসারির একজন। আর এ জন্য তিনি ইতিহাস হয়ে আছেন।
আবদুর রাজ্জাক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দুই দফায় দায়িত্ব পালন করেন। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুজিব বাহিনীর অন্যতম প্রধান ছিলেন। স্বাধীনতার আগে আওয়ামী স্বেছাসেবক বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দুইবার। দেশবরেণ্য এই নেতা বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সভাপতি এবং বিশ্ব শান্তি পরিষদের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
আওয়ামী পরিবারের একনিষ্ঠ সদস্য হওয়ায় দল তাকে শরীয়তপুর-৩ আসন থেকে একাধিকবার মনোনয়ন দিয়েছে। প্রতিবারই তিনি বিপুল ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। জনপ্রতিনিধি হয়ে এলাকার উন্নয়ন এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। আর আবদুর রাজ্জাককে দায়িত্ব দেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের। তিনি দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তার মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি নিজ এলাকা শরীয়তপুরের অভুতপূর্ব উন্নয়ন করেন। রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট ব্রীজ, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে তার উন্নয়ন কর্মকান্ড চোখে পড়ার মত। তার অভুতপূর্ব উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য আবদুর রাজ্জাককে বলা হয় আধুনিক শরীয়তপুরের রুপকার।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে আজীবন মেহনতি মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর ছায়াতলে থেকে তৎকালীন পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছেন। রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে যেয়ে তাঁকে অনেক অত্যাচার নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। কারাবরণও করতে হয়েছে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারের হত্যা করার পর অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে আবদুর রাজ্জাককেও গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে মানুষের ভাত কাপড়ের অধিকার আদায়, গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠা, স্বৈর শাসনের বিরুদ্ধে অকুতোভয় সৈনিক হিসেবে রাজপথের আন্দোলনকে বেগবান করা সর্বোপরী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে অমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন। এই মহান নেতার ইহকালত্যাগের পর জাতীয় আদর্শিক রাজনীতিতে যেমন শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তেমনি শরীয়তপুরের উন্নয়ন কর্মকান্ডেও শূন্যতা সৃষ্টি হয়। তার এ শূন্যতা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন তারই সুযোগ্য পুত্র নাহিম রাজ্জাক। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যেমন তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা তার শূন্যতা পূরণ এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছেন তেমনি আবদুর রাজ্জাকের অবর্তমানে তারই সুযোগ্য পুত্র নাহিম আবদুর রাজ্জাকের শূন্যতার পুরণ এবং শরীয়তপুরের উন্নয়নে তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে চলেছেন। আবদুর রাজ্জাক যে কাজগুলো শুরু করে গেছেন সে কাজগুলো সফলভাবে সমাপ্ত করেছেন নাহিম রাজ্জাক। আরো উন্নয়নমূলক কাজ তিনি করছেন যেটা দেখে শরীয়তপুরবাসী অভিভুত। বাবার শূন্য স্থান পূরণে সন্তানের কর্মকান্ডে এলাকার জনগণ মনে করতে পারছে না যে আবদুর রাজ্জাক নেই।
নাহিম রাজ্জাক জন্মেছেন ১৯৮১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি ঢাকার গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরী স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। এরপর ভারতের দার্জিলিং এর সেন্ট পলস স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ভারতের রাজস্থানের স্বনামখ্যাত মেও কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। এরপর বৃটেনের রাজধানী লন্ডনের মিডলস্যাকস ইউনিভাসিটি থেকে বিজনেস অ্যান্ড মার্কেটিং (ডাবল মেজর) বিভাগে বিএ অনার্স এবং লন্ডন কিংস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন।
নাহিম রাজ্জাক ব্যক্তিগত জীবনে দুই পুত্র সন্তানের জনক। স্ত্রী মালিয়া হোসেন শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত।
বাবার মৃত্যুর পর শূন্য আসনের উপনির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দেন (২০১২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি)। শূন্য আসনে নির্বাচন করে তিনি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ৩য় বারে ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
নাহিম রাজ্জাক উচ্চ শিক্ষিত একজন মেধাবী তরুণ। তারুণ্যের প্রতীক নাহিম আধুনিক শরীয়তপুর গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ পরপর তৃতীয় দফায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসায় সারাদেশের মত শরীয়তপুরেও ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
শরীয়তপুরের উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রসঙ্গে নাহিম রাজ্জাক বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের আশা ভরসার প্রতীক পদ্মাসেতু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাস্তবায়ন হতে চলেছে। পদ্মসেতু বাস্তবায়নের পর আমরা স্বপ্ন দেখছি শরীয়তপুরের অভাবনীয় উন্নয়নের। পদ্মসেতু হলে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। মানুষের নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। শরীয়তপুরকে একটি আধুনিক স্বনির্ভর শরীয়তপুর গড়ে তুলতে পারবো। উন্নত ও আধুনিকশিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি ও তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সত্যিকার অর্থে শরীয়তপুর আধুনিক শরীয়তপুরের রুপান্তর।