মোঃ ইব্রাহিম হোসেনঃ রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রিং রোড থেকে র্যাব পরিচয়ে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তেজগাঁওয়ে উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান উপ-কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, সুমন মিয়া (৪৮), মাসুদ মিয়া (৫৩), আশরাফুল ইসলাম ওরফে আপেল (৪০), ইকবাল হোসেন (৪৫) ও সাইদুল হক (৪৩)।
উপ-পুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক জানান, গত ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুর পৌনে ২টার দিকে মোহাম্মদপুরের রিং রোডের ডাচ-বাংলা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে পূবালী ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন মো. ইসরাফিল। হঠাৎ তার সামনে দাঁড়ায় একটি প্রাইভেটকার। র্যাবের জ্যাকেট পরা দুইজন ব্যক্তি গাড়ি থেকে নেমে ইসরাফিলের ব্যাগে কী আছে তা জানতে চায়। একপর্যায়ে ইসরাফিলকে মারধর করে জোর করে প্রাইভেটকারে তুলে নেয় তারা। এরপর পিঠমোড়া করে তার হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে এবং গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ফেলে তারা। ইসরাফিলকে গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়ে ব্যাগে থাকা পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার এবং পকেটে থাকা আড়াই হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। এরপর সোয়া ২টার দিকে শেরেবাংলা নগরের গণভবন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে তাকে নামিয়ে দিয়ে দ্রুত চলে যায় প্রাইভেটকারটি।
আজিমুল হক জানান, এ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এমন আরও কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে। চক্রের সদস্যরা নিজেদের র্যাব পরিচয় দিলেও রা বাহিনীটির সদস্য নয়। পরে ইসরাফিলের দুলাভাই মো. আবু তালেব খোরশেদ বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানা একটি মামলা (মামলা নং-১০৩) দায়ের করেন। এ ঘটনায় তদন্তে নেমে শ্যামলী ডাচ-বাংলা ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের আশপাশের এলাকা ও আসামিদের যাত্রাপথের প্রায় ২০০ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে একটি সন্দেহজনক গাড়ির অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এছাড়া কয়েকজন ব্যক্তির সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করা যায়। পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের অভ্যন্তরে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের অবস্থান পাওয়া যায়। পরে প্রযুক্তির সহায়তা ও বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে জড়িত চক্রটিকে স্বল্প সময়ের মধ্যে শনাক্ত করা হয়।
উপ-পুলিশ কমিশনার জানান, চক্রটি রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে দীর্ঘদিন যাবৎ র্যাব পরিচয় দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ফেরা ব্যক্তিদের জোরপূর্বক তাদের গাড়িতে তুলে সর্বস্ব লুট করত। তদন্তে একই ধরনের ঘটনায় গাজীপুর সদর, তুরাগ ও কালিয়াকৈরসহ বিভিন্ন থানায় মামলার তথ্য পাওয়া যায়।
আজ (মঙ্গলবার) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে মোহাম্মদপুর টাউন হলের ইউসিবি ব্যাংকের সামনে একটি প্রাইভেটকার থেকে এই পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজতে থাকা ভুয়া নম্বর প্লেট লাগানো একটি প্রাইভেটকার, চারটি ভুয়া নম্বর প্লেট, দুইটি র্যাবের কালো কোটি, একটি ক্যাপ, একটি খেলনা পিস্তল, একটি হ্যান্ডকাফ, একটি লাঠি ও পুলিশের দুইটি স্টিকার জব্দ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে আসামিরা। তারা জানায়, দীর্ঘদিন যাবৎ র্যাব পরিচয়ে অপহরণ ও ছিনতাইয়ের মতো নানাবিধ অপরাধ করে আসছে। তারা গত তিন মাসে র্যাব পরিচয়ে গাজীপুরের তুরাগ, কালিয়াকৈর, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, হবিগঞ্জের মাধবপুর এবং ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় মোট ২৫টি এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা তিন মাস আগে জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে একই ধরনের কাজ শুরু করে। গ্রেপ্তার সুমন মিয়ার নামে ১১টি, মো. মাসুদ মিয়ার নামে ৬টি, আশরাফুল ইসলাম ওরফে আপেলের নামে ১১টি এবং ইকবাল হোসেন ওরফে ইসলামের নামে তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া যায়। আজিমুল হক বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধার করতে পারিনি। লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধার এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান চলছে।