খাস খবর বাংলাদেশ ডেস্কঃ রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় মক্কা-মদিনা জেনারেল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় হাসপাতালের মালিক নূরন্নবী পলাতক থাকলেও ডাক্তারসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
১৮ মে ২০২২ বুধবার সকালে ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু হলে স্বজনরা হাসপাতালে যান ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। পরে তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় হাসপাতালে চারজনকে আটক করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে হাসপাতালের মালিক নূরনবী পলাতক রয়েছেন।
আটকরা হলেন- ডা. দেওয়ান আনিসুর, ডা. একেএম নিজামুল ইসলাম, মক্কা মদীনা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মারুফ ও নার্স মুক্তা।
শিশু আতিকার বাবা আজিম জানান, তার মেয়ে অসুস্থ হলে তিনি মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে বাবর রোডে অবস্থিত মক্কা-মদিনা হাসপাতালে ভর্তি করেন। রাতে তার মেয়ে ভালো ছিল। সকালে মারা যায়। তিনি অভিযোগ করেন, চিকিৎসকের অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে।
আজিম বলেন, আমার মেয়ে গত ১ রমজান দোলনায় খেলতে গিয়ে সেখান থেকে পরে ডান পা ভেঙে যায়। এরপর বিভিন্ন কবিরাজি চিকিৎসা করি। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা করার পর কোনো রকম উন্নতি না হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার এক্সরে করে বলেন, এই হাড় জোড়া লাগাতে অনেক কষ্ট হবে। এছাড়া বেশ কয়েকদিন সময়ও লাগবে।
তখন শাহজাহান ও সাব্বির নামে দুজন লোক এসে বলেন, তাদের কাছে ভালো হাসপাতাল আছে। যেখানে ভালো ডাক্তার বসে। সেখানে অপারেশন করে দ্রুত সুস্থ করার কথা বলেন। পরে মঙ্গলবার বিকালে আমাদেরকে মক্কা-মদীনা হাসপাতালে নিয়ে আসে। মূলত ওই দুজন ছিলেন দালাল।
আজিম বলেন, পরে রাত ৯টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় রোগীকে। এরপর আর কিছু জানানো হয়নি। বারবার তাদের কাছে গেলে তারা কোন কথা বলেননি। এরপর বুধবার ভোর ৪টার দিকে তারা আমার মেয়েকে হাসপাতালের বিছানায় দেয়। এই সময় আমরা গিয়ে দেখি মেয়ে মারা গিয়ে চোখ দুটি নীল হয়ে পুরো মুখ ফ্যাকাশে হয়ে আছে। তখন আমরা সঙ্গে সঙ্গে মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মুজিব পাটোয়ারী বলেন, এ ঘটনায় আমরা খবর পেয়ে মক্কা-মদীনা জেনারেল হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়ে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে এসেছি। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় শিশুটির পরিবার বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জাতীয় অর্থপেডিক ও পুনর্বাসন হাসপাতাল (নিটোর) থেকেই এসব হাসপাতালে বেশি রোগী পাচার হয় বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী।
এ ব্যাপারে নিটোর পরিচালক অধ্যাপক গণি মোল্লা বলেন, আমরা কোনো রোগীকে হাসপাতাল ছাড়তে উৎসাহিত করি না। রোগীরা আমাদের উপর ভরসা না করে, দালালদের মুখরোচক প্রতিশ্রুতিতে পরে এসব হাসপাতালে যান। এ দায় আমার হাসপাতালের কিভাবে হয়?
হাসপাতালে ছদ্মবেশে দালালারা হয়তো ঢোকে, তবে এ ব্যপারে সজাগ আছি জানিয়ে গণি মোল্লা বলেন, আমার হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট বের করে দিয়েছি। যদিও লোকাল আওয়ামী লীগ নেতারা এসব সিন্ডিকেটের মূল হোতা। এরপরেও কাউকে ছাড় দেইনি। দালালদের বিরুদ্ধেও অভিযান অব্যাহত আছে। চোখে পরা মাত্রই তাদের ধরে আইনের হাতে তুলে দেওয়া হবে।