মোঃ ইব্রাহিম হোসেনঃ ঢাকা মহানগর উত্তর মোহাম্মদপুর থানার ৩১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ইউনিট কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ রোজ শক্রবার বাদমাগরিব নুরজাহান রোড বাইতুল ফজল মসজিদের সামনে ৩১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
৩১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের জনাব দিল মোহাম্মদ দিলুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউল্লাহ মাষ্টার এর সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সভাপতি অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার।
এসময় উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোঃ আলাউদ্দিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ তোফায়েল সিদ্দিক তুহিন, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক এনাম-ই-খোদা জুলু, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩১, ৩৩ ও ৩৪ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রোকসানা আলম, মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শাহাজান খান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শেখ খলিলুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শহিদ এবং মোহাম্মদপুর থানা, ওয়ার্ড, ইউনিট আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সুধী সমাজ এবং সাংবাদিকবৃন্দসহ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রাম ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে এই দল। আওয়ামী লীগের হাত ধরেই রচিত হয়েছে পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন দল প্রতিষ্ঠার পর থেকে, টানা ৭২ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ইতিহাস সংগ্রাম, সৃষ্টি, অর্জন ও উন্নয়নের ইতিহাস। এই দীর্ঘ সময়ে নানা উত্থান-পতন, সংঘাত ও সম্মিলনের মধ্য দিয়ে দলটি বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছেছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে যেমন বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের হাতে তৈরি, তেমনি আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বের কারণেই আমরা পেয়েছি।
স্বৈরাচারদের দৌরাত্ম ও স্বাধীনতাবিরোধীদের আগ্রাসনের কারণে, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়া অলিখিতভাবে নিষিদ্ধই ছিল এই দেশে। ফলে এসব বাঁধা প্রতিহত করে রাজনীতির মাঠে ঘুরে দাঁড়ানো মোটেও সহজ ছিলো না আওয়ামী লীগের জন্য।
এমন প্রেক্ষাপটে, ১৯৮১ সালের ১৭ মে, দেশে ফিরলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দলের হাল ধরলেন তিনি। ঘাতকেরা মনে করেছিল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কিন্তু তা ভুল প্রমাণিত করে দলকে নতুন জীবন দান করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আসলে জনগণের সংগঠনের মৃত্যু নেই। দলীয় সভাপতি হিসেবে দেশে ফিরে কয়েকভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার ধীশক্তি, দৃঢ়তা, লক্ষ্য স্থিরে বিচক্ষণতা, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা আওয়ামী লীগকে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে এসেছে।
আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক ভূমিকা এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি মাইলফলক। নানা সংকটের পর, ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনেও বিপুল ভোটে জয়ী হয় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলটি। এটি সম্ভব হয় জাতির প্রতি আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার আর দায়বদ্ধতার কারণে।
যে আওয়ামী লীগের হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা এসেছে, সেই দলটির নেতৃত্বেই অর্থনৈতিক মুক্তি তথা সমৃদ্ধ দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিয় জন্মভূমি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার দেখানো পথ অনুসরণ করে বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন করেছেন। তার উদ্যোগের ফলেই অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল।
এখন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদ ধরে ক্ষমতায়। এরই মধ্যে ‘উন্নয়নের মহাসড়কে’ অবস্থান করছে বাংলাদেশ। দেশজুড়ে অবকাঠামোগত নানা উন্নয়ন হয়েছে। সারাদেশে রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ অবকাঠামো নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে। এর মধ্যে মেট্রোরেল, বিআরটি উল্লেখযোগ্য। দৃশ্যমান হয়েচে স্বপ্নের পদ্মাসেতু। এই সেতুর ফলে শুধু দক্ষিণবঙ্গই নয়, বদলে যাবে পুরো দেশের অর্থনৈতিক চিত্র। এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। ঢাকার আশপাশে নদ-নদী রক্ষা করে পরিবেশের সৌন্দর্য্য রক্ষায়ও চলছে নানাবিদ কর্মকাণ্ড।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণকাজ সহজ ছিল না। কিন্তু তা করে বিশ্বকে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেখিয়ে দিচ্ছেন যে, বাংলাদেশ পারে। ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন করছি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতে শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ রূপান্তরিত হয়েছে মধ্যম আয়ের দেশে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার ফ্রেমওয়ার্ক দিয়েছেন। দিয়েছেন শতবর্ষব্যাপী ডেল্টা প্লান। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন উন্নত দেশের অভিমুখে ধাবমান।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তরা বলেন, ইউনিট-ওয়ার্ড-থানা কমিটিতে স্বাধীনতা বিরোধীরা, হাইব্রিড, সুবিধাবাদী, অনুপ্রেবেশকারী, সন্ত্রাসী, মাদক কারবারী ও চাঁদাবাজ প্রবেশ ঠেকাতে সকলকে ঐক্যবদ্ধা ভাবে কাজ করতে হবে এবং প্রকৃত আওয়ামী পরিবারের সদস্য থেকে বাছাই করে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠন করার মাধ্যমে ত্যাগী আওয়ামী পরিবারের সদস্যদের মূল্যায়ন করা হবে। আওয়ামী লীগ একটি পুরনো ঐতিহ্যবাহী দল। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিশ্বাস করে নির্ধারিত ফরমে প্রদত্ত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে ত্রিবার্ষিক ২০ টাকা চাঁদা প্রদান করে ১৮ বছরের বেশি বয়সী বাংলাদেশি নারী-পুরুষ সদস্য হতে পারবে।
এ সম্মেলনে প্রার্থীতা জানান দিতে নিজেদের ব্যানার, ফেসটুন ও বিলবোর্ডে দিযে ছেয়ে ফেলেছে সম্মেলন এলাকায় অনেকে।
এদিকে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিকাল থেকে বিভিন্ন ইউনিট থেকে আসতে শুরু করে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। আগামী সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রার্থীর স্লোগান দিতে থাকে কর্মী সমর্থকরা। উত্তাপ ছাড়াতে শুরু করে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে।