মোহাম্মাদ ইরফান, ঢাকাঃ জমি দখল, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তারা দেশী ও বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাত মোহাম্মদপুরের ‘মোশারফ’ বাহিনী। এ চক্রের মূলহোতাসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রোজ সোমবার কাওরান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
এর আগে গতকাল (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মো. মোশারফ ওরফে লম্বু মোশারফ ওরফে গলাকাটা মোশারফ ওরফে গাংচিল মোশারফ (৪৫), মো. বিল্লাল ওরফে মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে চোরা বিল্লাল (৩০), মো. মোহন ওরফে মোহন ওরফে বাইক মোহন (৩১), সাহাবুদ্দিন সাবু ওরফে সাবু ওরফে জলদস্যু সাবু (৪৪), মো. রুবেল ওরফে ডাকাত রুবেল ওরফে ট্রলার রুবেল (৩৩) এবং মো. সুমন মিয়া ওরফে সুমন হোসেন (৩০)।
এসময় তাদের কাছ থেকে ১টি বিদেশী পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ৪ রাউন্ড গোলাবারুদ, ৩টি বড় ছোরা, ২টি চাপাতি, ২টি চাকু, ১টি চাইনিজ কুড়াল, ১টি দা, ১ টিফ্রেমসহ হেসকো ব্লেড, ১টি গ্রীল কাটার, ১টি কাটার প্লাস, ৪২৩ পিস ইয়াবা, ৫ টি মোবাইল এবং নগদ অর্থ জব্দ করা হয় বলে জানান কমান্ডার মঈন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন,বিভিন্ন সময়ে অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায় যে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও তার পাশর্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় দুর্বৃত্তরা নৌপথ, মার্কেট, বাস স্ট্যান্ড ও হাউজিং প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অপহরণ, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড করে আসছে।
এর প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে র্যাব-২ রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা হতে শীর্ষ সন্ত্রাসী কবির হোসেনকে তার সহযোগীসহ গ্রেফতার করে।
কবিরের দেয়া তথ্যমতে, ২০১৭ সালে গাংচিল গ্রুপের প্রধান আনারের মৃত্যুর পর গ্রুপটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয় এবং তৎকালীন এই গ্যাং এর সেকেন্ড ইন কমান্ড শীর্ষ সন্ত্রাসী লম্বু মোশারফ এর নেতৃত্বে মূল একটি অংশ পরিচালিত হয়। যারা মোহাম্মদপুর, আমিনবাজার ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে নৌপথে চাঁদাবাজি, মার্কেট, বাস স্ট্যান্ড, হাউজিং প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি, অপহরণ, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, খুন, ধর্ষণসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এর প্রেক্ষিতে র্যাব-২ লম্বু মোশারফ ও তার সহযোগীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। গতকাল (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান করে তাদের গ্রেফতার করেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন যাবৎ রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও তার পার্শ্ববর্তী আমিনবাজার, তুরাগ, হাজারীবাগ, কেরানীগঞ্জ ও সাভারসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তাদের সন্ত্রাসী দলের সদস্য সংখ্যা ২৫-৩০ জন। লম্বু মোশারফ এর নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী দলের সদস্যরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে জমি দখল, হাউজিং- এ চাঁদাবাজি, নৌপথে চাঁদাবাজি, মার্কেট ও বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ ও মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করত।
লম্বু মোশারফের নির্দেশে তার সহযোগীরা বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীতে বালু ভর্তি ট্রলার, ইটের কার্গো ও অন্যান্য জাহাজ আটকিয়ে চাঁদাবাজি ও ডাকাতি পরিচালনা করত। এছাড়া তারা সাভার ও তুরাগ এলাকার বিভিন্ন ইট ভাটার মালিকের নিকট হতে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা আদায় করত। মোহাম্মদপুর ও পাশর্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের বিভিন্ন হাউজিং এলাকায় নির্মানাধীন ভবন, নতুন বাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ীদের নিকট জমি দখলের নামে চাঁদাবাজি করত। কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলে লম্বু মোশারফের বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করত; চাঁদা না পেলে তার বাহিনীর সদস্যরা রাতের আধারে নিরাপত্তা কর্মীকে প্রহার করে ট্রলার/অন্যান্য বাহনযোগে নির্মাণ কাজের উপকরণাদি জোরপূর্বক নিয়ে যেত।
জমি দখল, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তারা দেশী ও বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দ্বারা সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাত। গাংচিল বাহিনী রাজধানীর পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে এক অজানা ভয় ও আতঙ্কের নাম ছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের এ অপরাধ কর্মকান্ডে বাধা প্রদান করলে তারা বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপরও হামলা করে বলে জানান তিনি।