নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ফেসবুকে পরিচয়ের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করে দামি উপহার/ডলার পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে অভিনব পদ্ধতিতে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে একটি সংঘবদ্ধ চক্রকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন(র্যাব)।
আজ ১২ জানুয়ারি ২০২২ রোজ বুধবার সকালে কাওরানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব এর অধিনায়ক মো. মোজাম্মেল হক এসব তথ্য জানান।
একজন ব্যাবসায়ীর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল র্যাব-৮ এর সহযোগীতায় রাজধানীর পল্লবী থানা, রুপনগর থানা এবং দক্ষিণখান থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৭ বিদেশী নাগরিক সহ ৯ জনকে গ্রেফতার করে।
এ সময় আটককৃতদের কাছ থেকে ০৮ টি পাসেপোর্ট,৩১ টি মোবাইল, ০৩ টি ল্যাপটপ, ০১ টি চেক বই, ০৩ টি পেনড্রাইভ এবং নগদ ৯৫,৮১৫ টাকা, ১ টি ভিসা কার্ড জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত দের মধ্যেঃ- উডজি ওবিন্না রুবেন(৪২), ইফুননায়া ভিভান নান্নাউকি (৩১), সানডি সিদেরাক এজিম(৩২), সেন্ডু মেসেস নাজি(৩৬), কলিমস ইফেসিনাচি টালকি(৩০), সিডিম্মা ইবেলে আইলোফর(২৬) নাইজেরিয়ান ও নাটোমবিখোনা গেবুজা (৩৬) দক্ষিণ আফ্রিকান বাকী দুইজন মো. নাহিদুল ইসলাম (৩০), সোনিয়া আক্তার বাংলাদেশী।
তিনি জানান, চক্রটি সংঘবদ্ধ ভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ অভিনব কায়দায় বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের সাথে বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ফেসবুক ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেদেরকে পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত দেশের নাগরিক হিসেবে আত্বপ্রকাশ করে। তাদের সাথে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির এক পর্যায়ে দামি উপহার বা ডলার বাংলাদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে। প্রতারনার কৌশল হিসেবে বাংলাদেশের কাস্টমস্ অফিসার পরিচয় দিয়ে নারীকন্ঠে তাদের টার্গেট কে ফোন তার নামে একটি পার্সেল বিমানবন্দরে আসার খবর জানায়। পার্সেলটি ডেলিভারি করতে কাস্টমস্ চার্জ হিসেবে মোটা অংকের টাকা বিকাশ/ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নাম্বারে পরিশোধ করতে বলে।
তিনি আরও জানান, পার্সেলে অতি মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী রয়েছে তাই কাস্টমস্ চার্জ একটু বেশী হয়েছে বলে জানানো হয়। কোন প্রতারিত ব্যক্তি সরাসরি টাকা প্রদান করতে বা দেখা করতে চাইলে প্রতারকরা এসএমএস এর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থান বা জরুরী কোন মিটিং এর কথা জানাতো। প্রতারিত ব্যক্তি অর্থ পরিশোধ করার পর তার নামে প্রেরিত পার্সেলটি সংগ্রহ করার জন্য বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে, তার নামে কোন পার্সেল পায়না।
পরবর্তীতে বিদেশী ওই বন্ধুর সাথেও আর যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়না। দেশের সহজ সরল মানুষ তাদের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে, বাড়তি ঝামেলার ভয়ে সংশ্লিষ্ট বিকাশ বা ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠিয়। চক্রটি সাধারন মানুষকে এভাবে প্রতারিত করে আসছে।
গ্রেফতারকৃতরা আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের সদস্য বলে র্যাবের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে। তারা ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে রাজধানী ঢাকার পল্লবী, রুপনগর ও দক্ষিণখান এলাকায় বাসা ভাড়া করে বসবাস করে। শুরুতে তারা গার্মেন্টস ব্যাবসা করে। গার্মেন্টস ব্যাবসার আড়ালে তারা বাংলাদেশী সহযোগীদের নিয়ে এ ধরনের অভিনব প্রতারণার সাথে জড়িয়ে হয়। তাদের অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ এবং গ্রেফতাকরকৃত ০২ জনের নামে ইতিপূর্বে মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত সোনিয়া আক্তার ও নাহিদুল ইসলাম এই চক্রের এ দেশীয় সহযোগী। মূলত তাদের মাধ্যমেই এই প্রতারক চক্রের বিদেশী নাগরিকরা ভিকটিম সংগ্রহ, বন্ধুত্ব স্থাপন, কাষ্টমস্ অফিসার পরিচয় এবং অর্থ সংগ্রহ করে আসছিল।