কিছু চাইতে হলে, কিছু করতে হলে তার আদিঅন্ত, অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ জানতে বুজতে হয়। আবার চাইলেই সব পাওয়া যায় না। না চাইলেও পাওয়া যায় না। বাঙ্গালী সাদামাটা মানুষ, সে চায় সান্তি, সমৃদ্ধি, সম্মান, উন্নয়ন, অগ্রগতি, ন্যায়বিচার, মৌলিক অধিকার, সে অর্থনীতিবিজ্ঞন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক নীতি কৌশল বিজ্ঞানের জটিল মার পেচ বুঝে না। সহজভাবে চায়, না পেয়ে হতাশ হয়, বঞ্চনায় ভরা জীবন নিয়ে জীবন যাপন, জীবন পাত করে, অবশেষে ভাগ্য আর সৃষ্টি কর্তাকে দোষ দেয়।
যে আশা নিয়ে ছাত্রজনতা, শিক্ষকরা মাঠে নেমেছেন, রক্ত দিয়েছেন জনগনের সে আশা কি পুরোন হলো! যদি পুরোন না হয় তা হলে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন কি ভ্যার্থ হলো, ছাত্র, জনতার আন্দোলন কি ভুল ছিলো? অতীতেও আমরা দেখেছি একদল আন্দোলন সংগ্রাম করে আর এক দল সুযোগ সুবিধা লুটে নেয়, এরা চাটুকার, প্রতারক, তেলবাজ, সরকারগুলো শুধু নাগরিক সেবা, সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির, উন্নয়নের তুবড়ি ছুটিয়ে মূখে ফ্যানা তুলে ফেলে কিন্তুু ক্ষমতায় গিয়ে ১ টাকার কাজে ১০ টাকা খরচ করে বাকি ৯ টাকা ভাগাভাগি করে আর পদ লেহী চাটুকর, তেলবাজদের পৃষ্ঠপোষকতা করে আর দলীয় ব্যাবসায়ী, আমলা, কামলা দালালরা, এমপি মন্ত্রী, সচীবরা হাজার হাজার কোটি টাকার, অগাধ সম্পত্তির মালিক হয়, অল্পকিছু দেশে রেখে বিপুল পরিমান অর্থ সম্পদ বিদেশে পাচার করে, বিদেশি ব্যাংকে গচ্ছিত রাখে যাতে স্ত্রী, সন্তান ও নিজের শেষ জীবন দুধেভাতে কাটাতে পারে, নিজ সন্তান, নাতি পুতি বিদেশে উচ্চ শিক্ষা, উচু মানের জীবন যাপন করতে পারে, তাই কষ্ট করে একবার এমপি, জেলাপরিষদ, উপজেলার নমিনেশন কিনে চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসতে পারলে, এমপি মন্ত্রী হতে পারলে একবার সরকারের ভান্ডারের দায়িত্ব পেলেই হয়, মোট কথা ৩/৪ জেনারেশনের আভিজাত্য, আমিত্ব বজায় থাকে। দেশের সাধারন মানুষ কৃষক, চাষাভুষা, অশিক্ষিত, এরা সম অধিকার, সম মর্যাদা, সম আর্থিক সুযোগ সুবিধা পেলেতো অভিজাতদের সালাম কালাম সম্মান দেয়া ভুলে যাবে, কম পয়সায় কামলা দিবে না।
শুনেছি আগের দিনে, বর্গী, মগ, বার্মীজ জলদস্যুরা বাংলার কৃষকের সম্পদ, ইজ্জত লুন্ঠন করতো। পারস্য, আফগান, ফ্রান্স, ওলন্দাজ, পর্তুগিজ, বৃটিশ, আরবরা এদেশে ব্যাবসা করতে এসে অনেকে এ দেশের সৌন্দর্য, আতিথ্য, প্রকতিক সম্পদের মোহে পরেযেতেন এবং এদেশে আত্মীয়তা করে থেকে যেতেন, বৃটিশরা তো ব্যাবসা করতে এসে দখল করে ১৯০ বছর ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ, নিপিড়ন করেছে। বিভিন্ন ধর্ম, বিভিন্ন জাতির কৃষ্টি কালচার, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সংমিশ্রণে বাংলাদেশ একটি সংকর জাতিতে পরিনত হয়েছে। সেই কারনে জাতীয়তা বোধ, ধর্ম, সংস্কৃতি, সমাজ, মানবিক মূল্যবোধেও পার্থক্য রয়ে গেছে। তাই হয়ত শত বিপ্লব, সংগ্রাম, আন্দোলন করেও বাংলার মানুষ তাঁদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না, যে যায় লঙ্কা সেই হয় রাবন। কপাল মন্দ জাতি বিপ্লব, সংগ্রাম করতে করতে একসময় বিপ্লবী চেতানাই হারিয়ে ফেলবে, তখন আবার কোনো বিদেশি প্রভু এসে নতুন উপনিবেশ তৈরী করবেন।
প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সম্পর্কে মানুষের পূর্ব ধারনা ভালো ছিলো, তারা বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ লোক অন্তত অন্তরবর্তি সময়টা চালিয়ে নিতে পারবেন বা নতুন কোনো দিক নির্দেশনা দিয়া পূর্বের কিছু অন্যায়, দুর্নীতি রোধ করে ভালোই চালাবেন। একটা ভালো নির্বাচন, একটা দুর্নীতি মুক্ত ভালো সরকার প্রতষ্ঠা করতে পারবেন, বাকিরাত গতানুগতিক আপতকালিন কাজ চালিয়ে নিবেন। কিন্তু জাতি হতাশ, জনগন আশাহত, যা ভেবেছে তার উল্টোটা হয়েছে। মানুষ চেয়েছে শুষ্ঠ নির্বাচন, দুর্নীতি মূক্ত প্রশাসন, ন্যায় বিচার, মৌলিক নগরিক অধিকার তবে তা উন্নয়ন বাদ দিয়ে নয়, শুধু ওয়াষ্টেজ, অপচয়, দুর্নীতি মূক্ত প্রশাসন, চাঁদাবাজ মুক্ত, সন্ত্রাস মুক্ত দেশ, এখন দেখি দুর্নীতি, অপচয়, অপব্যায়, অহেতুক খরচ আরো বেরেছে শুধু পক্ষ পরিবর্তন হয়েছে, অগে একপক্ষ ছিলো এখন আর এক পক্ষ, তার মানে দেশ, মানচিত্র, জন্মভূমি একটি জন্মদিনের কেক ছুরি কাটা চামচ দিয়ে কেটে কুটে খাও, মানুষ পরিবর্তন হয়েছে নীতির পরিবর্তন হয় নাই। মাঝখানথেকে জঙ্গী, সন্ত্রাসী, দাগী আসামীরা কারামূক্ত হয়েছে, দুর্নীতিবাজ, চোর, সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহার কারীদের ধরতে না পেরে নিরীহ সাধারণ মানুষদিয়ে জেলখানা পূর্ন করা হয়েছে, অপরাধীরা দ্রুত সাজাত পেলোই না বরং নিরীহ মানুষের বাড়িঘর, ব্যাবসা, সম্পদ, অর্থ, ইজ্জত মান সম্মান, শ্লীলতা লুটে পৃথিবীর নিকৃষ্ট রাষ্ট্র সোমালিয়াকেও হার মানিয়েছে। অন্যায় অত্যাচার বর্ধীত হয়েছে, বারেনাই জাতীয় উন্নয়ন, মাথাপিছু আয়, রাষ্ট্রের মানমর্যাদা। তা হলে সবই কি প্রবঞ্চনা, বঞ্চনা দিয়েই বঞ্চিত বাঙ্গালি জাতির ইতিহাস লেখা হবে?
লেখকঃ আঃ রহমান শাহ্, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ও সমাজ সেবা কর্মী এবং খাস খবর বাংলাদেশ পত্রিকার উপদেষ্টা।