মোঃ ইব্রাহিম হোসেনঃ নির্বাচনের দুই বছর আগে পরিকল্পিতভাবে একটি গোষ্ঠী সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে এবং এই অপপ্রচারে টার্গেট করা হচ্ছে সেই সমস্ত মন্ত্রীদের যারা ওয়ান-ইলেভেনে মাইনাস ফর্মুলার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, যারা শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত, যারা রাজনীতিতে কঠিন সময়ে আদর্শচ্যুত হননি এরকম মন্ত্রীরা। প্রথমেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের একটি খাবারের ছবি বিকৃত করে প্রচার করা হলো। ড. হাছান মাহমুদ এর বিরুদ্ধে যখন আইনগত ব্যবস্থা নিলেন তখন এই অপপ্রচার বন্ধ হলো। এরপর সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে নিয়ে শুরু হলো অপপ্রচার। চাঁদপুর বিজ্ঞানও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে বানোয়াট দুর্নীতির অভিযোগ আনা হলো যেখানে শিক্ষামন্ত্রীর কোনো জমিই নেই। আর সর্বশেষে এই অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
শ ম রেজাউল করিম মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী। এর চেয়ে বড় পরিচয় হলো তিনি সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী। ওয়ান-ইলেভেনের সময় যার ভূমিকা ছিল প্রশংসিত। সেই সময় তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার শুধু আইনজীবীই ছিলেন না, লন্ডনে গিয়েও তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বক্তব্য রেখে আলোচিত হয়েছিলেন। যে সমস্ত রাজনীতিবিদরা এখনো বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের পক্ষে যুক্তিনিষ্ঠ বক্তব্য উপস্থাপন করেন তাদের মধ্যে শ ম রেজাউল করিম নিঃসন্দেহে অন্যতম সেরা। একটি জাতীয় গণমাধ্যমে শ ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অসত্য অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। যে সমস্ত অভিযোগগুলো সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে যার কোনো ভিত্তি নেই। এই অভিযোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি নাকি কালো টাকা সাদা করেছেন। কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে এটি মোটেও সত্য নয়।
শ ম রেজাউল করিম সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ছিলেন এবং তিনি একজন প্রথিতযশা আইনজীবী হিসেবে খ্যাত। কাজেই তিনি প্রচুর বিত্তশালী হবেন এবং তিনি অনেক টাকার মালিক হবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রতিবেদনটি পড়লে মনে হয় যেন ধনী হওয়াটাই একটি অপরাধ। প্রতিবেদন এর মধ্যে যে সমস্ত তথ্য উপাত্ত দেয়া হয়েছে সে সমস্ত তথ্য উপাত্তগুলো অগ্রহণযোগ্য এবং অনেক ক্ষেত্রেই যুক্তিহীন। যেমন, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ঢাকায় প্লট থাকার পরও তিনি রাজউকের প্লট নিয়েছেন। অথচ রাজউকের আইন হলো যে, কোনো ব্যক্তি যদি রাজউক থেকে কোনো প্লট গ্রহণ করেন তাহলে তিনি আরেকটি প্লটের জন্য অযোগ্য হবেন। ঢাকায় একজন ব্যক্তির একাধিক বাড়ি বা জমি থাকলেও তিনি যদি সেটি ব্যক্তিগতভাবে ক্রয় করেন, রাজউকের কাছ থেকে যদি ক্রয় না করেন তাহলে তিনি রাজউকের জন্য আবেদনের অযোগ্য হবেন না। অথচ প্রতিবেদনটিতে এমনভাবে বিষয়টিকে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন তিনি রাজউক থেকে জমি নিয়েই আবার জমি কিনেছেন। এরকম বিভিন্ন ধরনের ভুল তথ্য দিয়ে এক ধরনের চরিত্রহরণের প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে ওই প্রতিবেদনটিতে।
নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই এই ধরনের অপপ্রচারগুলো বাড়ছে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এই ধরনের অপপ্রচারগুলো করার নেপথ্যে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের কিছু ব্যক্তি। যারা রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষ এবং রাজনৈতিকভাবে না পেরে এ ধরনের তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছেন। যেমন শিক্ষামন্ত্রীর কথাই ধরা যাক। শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের মূলহোতা সেখানকার স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা এবং চাঁদপুর এলাকার একজন সংসদ সদস্য। ঐ সংসদ সদস্য ফেসবুকেই শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। আবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে এই ধরনের অপপ্রচারের মূল উৎস সেখানকার সাবেক এমপি। যিনি গতবার নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। তিনি এখন গণমাধ্যমকে নানাভাবে ব্যবহার করে এ ধরনের অপপ্রচার করছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে। এই ধরনের তৎপরতার ফলে আওয়ামী লীগই এখন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে এবং আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের বিরুদ্ধে কুৎসিত অপপ্রচারে লিপ্ত হচ্ছে। যেটিতে আসলে ওই ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দল হিসেবে আওয়ামী লীগই।