মাওলানা কাজী আবু হোরায়রাঃ ব্যরিষ্টার মওদুদ আহমদ এরশাদ সরকারের আমলে যখন প্রধানমন্ত্রী তখন একবারের একনেক সভায় ইমাম প্রশিক্ষন একাডেমীর অর্থ ছাড়ের বিষয়টি সভায় উঠে। মওদুদ সাহেবের বাবা ছিলেন একজন বিখ্যাত আলেম। জানিনা তিনিও সে সুবাদে কিছু ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হবেন হয়তোবা। তিনি একটু আগ্রহ নিয়ে বললেন ইমামদের প্রশিক্ষনে কি কি বিষয় রয়েছে? তখন সিলেবাসের বিষয়গুলো তার সন্মুখে দেয়া হল। তিনি দেখলেন। হঠাৎ করে তাঁর নজর গেল তাজবীদের সিলেবাসের উপর। সেখানে আরবী হরফ লন্বা করে টেনে পড়ার যে শব্দ বা টারম তা লিখা ছিল”মদ” এর বিবরণ। মওদুদ সাহেব বললেন, ইমাম সাহেবদের মদের ব্যাপারেও শিক্ষা দেয়া হয় নাকি? এ সময় সকলের নজর আমাদের দিকে নিবদ্ব হল। আমরা জানালাম যে, স্যার এটা সে মদ নয়। অক্ষর লন্বা বা টেনে পড়ার নিয়ম কানুন। তখন তিনি বললেন এটাকে মদ বলছেন কেন শব্দটাতো” মাদ্দ” হবে। সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকালেন। তাতে বুঝা গেল যে, এ ব্যাপারেও তাঁর নলেজ ছিল।যদিও শব্দটি টাইপে ভুল ছিল সেজন্য তার নজর এড়িয়ে যায়নি।
আর একটি বিষয় “মসজিদ ব্যবস্হাপনা নীতিমালা” তথা ইমামদের জন্য সার্ভিস রুলের খসড়া ধর্ম মন্রণালয়ে যখন জমা দিলাম সে ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে ফাইল পাঠানো হল। তখন মওদুদ সাহেব আইন মন্ত্রী। ধর্ম মন্ত্রনালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়াম্যানের সহযোগিতায় আমাকে সংগে নিয়ে তিনি মওদুদ সাহেবের সংগে দেখা করলেন এবং বললেন আপনার বাবা একজন বড় আলেম এবং বড় একজন ইমাম ছিলেন। আপনি জীবনে অনেক কাজ করেছেন। এবার একটি কাজ করার সুযোগ এসেছে যা হয়তো আপনার নাজাতের উছিলা হতে পারে। মওদুদ সাহেব এটাকে চ্যালেন্জ হিসেবে নিলেন এবং তৎকালীন আইন সচিব আঃ আউয়াল সাহেবকে ডেকে যেভাবে হোক এটাকে আইন সন্মত করে উপস্হাপনের জন্য দায়িত্ব দিলেন। পরে সেটা ৭টি মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি কতৃক গঠিত কমিটি দ্বারা সুপারিশের মাধ্যমে পুনরায় আইন মন্ত্রনালয়ে গেলে তা অনুমোদিত হয়ে রাষ্ট্র পতির নিকট পাঠালে রাষ্ট্রপতির চুড়ান্ত অনুমোদনে তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য যে আন্ত মন্ত্রনালয় কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্বে আমি ছিলাম জাতীয় ইমাম সমিতির তৎকালীন মহাসচিব হিসেবে।
এ দুটি বিষয়ে স্মৃতিচারন করার দায়িত্ববোধ থেকে দু’কলম লিখলাম। কারণ মানুষ মরে যায় তার ভাল-মন্দ অনেক কিছু থাকে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর ভাল কাজগুলো কবুল করে তাকে জান্নাতবাসী করুন।
লেখকঃ মাওলানা কাজী আবু হোরায়রা, খতিব, মসজিদ-এ বায়তুল হারাম, লালমাটিয়া।