খাস খবর বাংলাদেশ নিউজ ডেস্কঃ দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ও জোহানেসবার্গে ১৫তম ব্রিকস সম্মেলন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সফর সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।
সোমবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে লিখিত বক্তব্যে সফরের নানা বিষয় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিউ ডেভেলপমেন্টে ব্যাংকের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষ হতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমাকে এ আমন্ত্রণ জানানো হয়। এছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস সামিট’-এ প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেই।
এসময় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বানও জানানো হয়েছে।বাংলাদেশের ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশের যে অভিযাত্রা, সেখানে তাদের সম্পৃক্ত হওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়া এ সফরে আফ্রিকা মহাদেশের ৯টি দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতগণের অংশগ্রহণে ‘আঞ্চলিক দূত সম্মেলন’-এ অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনে রাষ্ট্রদূতগণ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয় তুলে ধরেন।
ব্রিকসের সদস্যপদ না পাওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা এখনই ব্রিকসের সদস্যপদ পাবো সেই ধরনের চিন্তা বা চেষ্টা আমাদের ছিল না। তবে ব্রিকসের ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা ছিল বলে জানান তিনি।
ব্রিকসের সদস্যপদ না পাওয়া প্রসঙ্গে সিনিয়র সাংবাদিক শ্যামল দত্তের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাইলে আমরা পাবো না এই অবস্থায় তো নেই। সব কিছুর একটা নিয়ম থাকে। আমরা নিয়ম মেনেই চলি। সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যখন সাক্ষাৎ হয়, তিনি জানালেন সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হবে। ব্রিকসের পাঁচটি দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গেই আমার ভালো সম্পর্ক।
শেখ হাসিনা বলেন, যখন ব্রিকসের ব্যাংক হচ্ছে সেখানে আমরা যুক্ত হতে চেয়েছিলাম। ব্রিকস ধাপে ধাপে সদস্য নেবে। না হলে তো সব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছে, আমরা কাউকে সদস্য হওয়ার ব্যাপারে বলতে যাইনি।
বাংলাদেশ এখন সকল মন্দা কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে জায়গা করে নিয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন হাত পাতার দেশ নয়। আমি দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব ব্যবসার কথা তুলে ধরেছি। বাংলাদেশের বিনিয়োগ করার জন্য তাদের আহ্বান জানিয়েছি।
তিনি বলেন, একইদিন আমি দক্ষিণ আফ্রিকায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ৯ রাষ্ট্রদূতদের সাথে আলোচনা করি এবং কীভাবে বিনিয়োগ করা যায় সে বিষয়ে আহ্বান জানাই। আফ্রিকা কীভাবে বাংলাদেশের বিনিয়োগ করবে সে বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, একইদিন সন্ধ্যায় চীনের প্রেসিডেন্টের সাথে আমার দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আলোচনা হয়। বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয় এবং এবং আমাদের পারস্পরিক অঙ্গীকারসমূহ পুনর্ব্যক্ত করি। বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয় সহযোগিতা এবং বাংলাদেশের জ্বালানি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়ে সহযোগিতা আশ্বাস দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, চাইলেই পাবো অবস্থাটা সেরকম না। একটা নিয়ম থাকে। আমার সঙ্গে যখন সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল তিনি যখন আমন্ত্রণ জানালেন আমাকে আসতে বললেন এবং তারা জানালেন যে তারা কিছু সদস্যপদ বাড়াবেন এবং আমার মতামত জানতে চাইলেন।
আমরা যখন শুনলাম নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক হচ্ছে তখন সেটার উপরে আমাদের আগ্রহ বেশি ছিল। তারা বলেছিলেন সবকিছু ধাপে ধাপে নেবেন। ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনা করে পর্যায়ক্রমের সদস্য সংখ্যা বাড়াবেন। এখনই সদস্য পাবো সে ধরনের চিন্তা আমাদের মাথায় ছিল না। সেইসাথে সেরকম কোনো চেষ্টা আমরা করিনি বা কাউকে বলিনি।
সম্মেলন শেষে আমি জানি এসব প্রশ্ন আসবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দল থেকেও এসব জানাতে বলা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা আমাদের মর্যাদা তুলে ধরেছি। বিএনপি আমলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশে কোন অবস্থানে ছিল না। বাংলাদেশ মনে ছিল দুর্ভিক্ষ আর বন্যার দেশ। হাত পেতে চলার দেশ, ভিক্ষা চাওয়ার দেশ। এখন বাংলাদেশ ভিক্ষা চাওয়ার দেশ না।
অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে শতাধিক নোবেলজয়ীসহ ১৬০ জনেরও বেশি বিশ্বনেতার বিবৃতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা বিবৃতি দিয়েছেন তাদের আহ্বান জানাই, বিবৃতি না দিয়ে বিশেষজ্ঞ পাঠান, আইনজীবী পাঠান। দলিল দস্তাবেজ, কাজগপত্র ঘেঁটে দেখুন, অন্যায় আছে কি না। তারা মামলার দলিল-দস্তাবেজ দেখুক।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘নিজের প্রতি এত আত্মবিশ্বাস থাকলে (ড. ইউনূস) আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিবৃতিভিক্ষা করে বেড়ান কেন? নির্দোষ হলে তিনি বিবৃতিভিক্ষা করে বেড়াতেন না।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন। মামলার কাজ নিজস্ব গতিতেই চলবে। সেখানে আমাদের কিছু করার নেই।’