March 24, 2023, 12:07 am
শিরোনামঃ
সবাইকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন লায়ন এম এ লতিফ সবাইকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মোহাম্মদ জাবেদ ইসলাম জন্মদিনে শুভেচ্ছায় সিক্ত নাঈমুল হাসান রাসেল উত্তাল মার্চের গনহত্যার স্বীকৃতি ও পাকিস্তান বাহিনীর বিচার বেলাবো-মনোহরদী আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য প্রার্থী হচ্ছেন তুলি রাজবাড়ীতে দশ গ্রাম হেরোইন সহ মিলন কসাইকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ ১/১১ সরকার বাংলার মাটিতে কায়েম হতে দেয়া হবে নাঃ জাহাঙ্গীর কবির নানক ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির বার্ষিক বনভোজন অনুষ্ঠিত রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রন করুন : বাংলাদেশ ন্যাপ সমস্যার আগে সমাধান করলে নাকি রাজনীতি অর্থবহ হয় না 

বিপ্লবী-সংগ্রামী কমরেড নির্মল সেন আজ স্মৃতির আড়ালে !

Reporter Name
  • Update Time : Friday, January 8, 2021
  • 159 Time View

।। এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।।
বিপ্লবী-সংগ্রামী নির্মল সেন। একজন সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, লেখক, সমাজচিন্তক, কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের মুক্তি আন্দোলনের আলোকবর্তিকা, দেশমাতৃকার স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী। আজ স্মৃতির আড়ালেই চলে গেছেন অনেকটা। যে সাংবাদিক সমাজের অধিকার আদায়েও তিনি সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন তরাও কি মনে রেখেছেন তাকে ? গণমাধ্যমেই চোখে পড়লো না আজ সাংবাদিক রাজনীতিক নির্মল সেনের প্রয়ান দিবস এই সংবাদটি। কেন ? মাত্র আট বছরেই ভুলে গেলো তাকে। নাকি স্মরণ করে লাভ নেই তাই ভুলে গেছে সকলে। হতে পারে, আজ আর তাকে প্রয়োজন নেই। তাই কেউ তাকে স্মরণ করছে না হয়তো।

সাংবাদিক, বাম রাজনীতির পুরোধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নির্মল সেন ১৯৩০ সালের ৩ আগষ্ট গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার দিঘীরপাড় গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। নির্মল সেনের বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ সেন গুপ্ত ও মাতার নাম লাবন্য প্রভা সেন গুপ্ত। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে নির্মল সেন ছিলেন পঞ্চম। ১৯৪৬ সালে নির্মল সেনের পিতা মাতা অন্য ভাই বোনদের সঙ্গে নিয়ে কলকাতা চলে যান। জন্মভূমির প্রতি অকুন্ঠ ভালবাসার কারণে তিনি এদেশে থেকে যান। নির্মল সেন বড় হয়েছেন ঝালকাঠি জেলায় তার পিসির (ফুফু) বাড়িতে। পিসির বাড়িতে যাওয়ার আগে নির্মল সেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জিটি স্কুলে ৪র্থ শ্রেণিতে এক বছর লেখাপড়া করেন। ঝালকাঠি জেলার কলসকাঠি বিএম একাডেমি থেকে ১৯৪৪ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি বরিশাল বিএম কলেজ থেকে আইএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এ ও এমএ পাস করেন।

নির্মল সেনের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের মাধ্যমে স্কুল জীবন থেকে। কলেজ জীবনে তিনি অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আরএসপিতে যোগ দেন। দীর্ঘদিন শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সভাপতি ছিলেন। রাজনীতি করতে গিয়ে নির্মল সেনকে জীবনের অনেকটা সময় জেলে কাটাতে হয়েছে তাকে।

দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় সাংবাদিকতার মধ্যে দিয়ে নির্মল সেন তার সাংবাদিকতার জীবন শুরু করেন ১৯৫৯ সালে। তার পর দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিষয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। লেখক হিসেবেও নির্মল সেনের যথেষ্ট সুনাম রযেছে। তার লেখা ‘পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ’, ‘মানুষ সমাজ রাষ্ট্র’, ‘বার্লিন থেকে মষ্কো’, ‘মা জন্মভূমি’, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ ‘আমার জীবনে ৭১-এর যুদ্ধ’ ও ‘আমার জবানবন্ধি’ উল্লেখযোগ্য।

কমরেড নির্মল সেন ২০০৩ সালে ব্রেন ষ্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাজনীতিক ও পেশাজীবীদের অর্থিক সহায়তায় তাকে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেধ থ্রি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় কিন্তু ৫৯ দিন চিকিৎসার পর টাকা না থাকায় চিকিৎসা শেষ না করেই তাকে দেশে ফিরে আসতে হয়।
২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাতে হঠাৎ করে ঠান্ডা ও উচ্চরক্ত চাপের কারনে নির্মল সেন অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরদিন ২২ ডিসেম্বর শনিবার বিকেলে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার আরো অবনতি হলে হাসপাতালে লাইফ সার্পোটে রাখা হয়। ১৮ দিন চিকিৎসার পর ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারী সন্ধ্যায় নির্মল সেন মারা যান। মৃত্যুর আগে নির্মল সেন তার দেহ পিজি হাসপাতালে দান করে যান।

রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতার পেশা বেছে নিয়েছিলেন আদর্শগত কারণে। পরম নিষ্ঠার সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করেছেন। অসাধুতা কখনো তার কলমকে স্পর্শ করতে পারেনি। নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি তিনি কখনো। সারাজীবন ছিলেন অন্যায়-অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং সাহসিক ও নির্ভীক। ‘অনিকেত’ এই ছদ্মনামে দৈনিক বাংলায় কলাম লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণবঙ্গে গোর্কিতে স্বজনহারাদের নিয়ে প্রতিদিনের লেখাগুলো ঐ সময় মানুষের হৃদয়ে ভিষণভাবে দাগ কাটে এবং সাধারণ পাঠকের কাছে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। সংবাদ জগতের প্রতিটি মানুষের কাছে ছিলেন তিনি ‘নির্মলদা’।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথেও নির্মল সেনের ছিল সু-সম্পর্ক। বঙ্গবন্ধু তাকে সেন মশাই বলে সম্বোধন করতেন। জনগণের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিই মানুষের মুক্তি – এই আদর্শকে জীবনচর্যায় যুক্ত রেখেছেন নির্মল সেন। কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের প্রতি ছিল তার অসীম দরদ। বাংলাদেশ তথা মাতৃভূমিকে তিনি প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। জন্মদাত্রী কলকাতা চলে গেলেও তিনি মাতৃভূমির টানে থেকে গেছেন। মাতৃভূমিকে তিনি মা ভাবতেন।

১৯৬৯ সালে আদমজীতে শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল নামে রাজনৈতিক দল গড়ে তোলেন নির্মল সেন। এই দলের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতাত্তোর সব গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তিনি ছিলেন অগ্রভাগে। ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে তোলা আন্দোলনের উদ্যোক্তাদের মধ্যে নির্মল সেন ছিলেন অন্যতম। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এদেশের সংঘাতপূর্ণ রাজনীতির প্রেক্ষিতে তৎকালীন দৈনিক বাংলায় লেখা তার কলাম ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ তখন তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মানুষ-সমাজ ও রাষ্ট্র, বার্লিন থেকে মস্কো, পূর্ববঙ্গ পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ, মা জন্মভূমি, লেনিন থেকে গর্বাচেভ, আমার জবানবন্দী, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই, আমার জীবনে ৭১-এর যুদ্ধ- এসব তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

আজীবন সংগ্রামী নির্মল সেনের স্বপ্ন ছিল শোষণমুক্ত বাংলাদেশ। যদিও আজ তার প্রয়াণ দিবসে কোনো রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি নেই। হয়তো নেই যে পেশাজীবীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরও কোন কর্মসূচী। তবু একথা বলতে চাই, চীর সংগ্রামী, সততার এক উজ্জল নক্ষত্র এই কমরেডের স্বপ্ন পথ দেখাবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে। শোষণমুক্তির স্বপ্নের মধ্যে বেঁচে থাকবেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেও একজন মানুষ সৎ থাকেন, অসৎ হওয়ার সুযোগ পেয়ে সৎ থাকা এক পরীক্ষিত নিষ্ঠুর বাস্তবতা। নির্মল সেন সত্যরসে জারিত এক জীবনের নাম। মার্কসবাদী দর্শনের প্রতি একনিবষ্টি এই মনীষী শ্রেণিসংগ্রামকে জীবনদর্শন হিসেবে নিয়েছিলেন। তাঁর মতো দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতিক খুবই কম। সাদা পাজামা, কোড়া রঙের খদ্দরের পাঞ্জাবি পরতেন। পরিচ্ছন্ন ও অসম্ভব ব্যক্তিত্ববোধসম্পন্ন এ মানুষটি নির্লোভ ও সাহসী। সাংবাদিকতায় সততার প্রশ্নে যাঁদের দৃষ্টান্ত দেওয়া যায়, তিনি তাঁদের অন্যতম। সুবিধা নেওয়া কী, তা তিনি জানতেন না। স্পষ্ট বক্তা ছিলেন তিনি। আলোতে যা বলতেন, অন্ধকারে তা-ই বলতেন।

তিনি বেঁচে আছেন, থাকবেন। এমন সত্য নির্মোহ, মনীষীদের মৃত্যু হয় না। ৮ম প্রয়ান দিবসে গভীর শ্রদ্ধা। লাল সালাম সংগ্রামী কমরেড নির্মল সেন।
[ লেখক : কলাম লেখক ও রাজনীতিক, মহাসচিব, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ও আহ্বায়ক, জাতীয় কৃষক-শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন]

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Dairy and pen distribution

ডিজাইনঃ নাগরিক আইটি ডটকম
themesba-lates1749691102