September 16, 2024, 6:08 am
শিরোনামঃ
ভারত যাওয়ার পথে সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু-শ্যামল দত্তসহ আটক ৪ আর্থিক খাত সংস্কারে বাংলাদেশকে প্রায় ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক সংস্কার পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে আমেরিকা: পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদের মহান বাণী নিয়ে এসেছিলেন মহানবী (সা.) : বাংলাদেশ ন্যাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানি বা প্ররোচনার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সতর্কতা বন্যার্তদের সহায়তায় তোলা ত্রাণের টাকার বিষয়ে যা জানালেন হাসনাত আব্দুল্লাহ হিজবুত তাহরির, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে ছিলাম না: মাহফুজ আলম সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন গ্রেপ্তার ইসরায়েলি সেনাপ্রধান হারজি হালেভি পদত্যাগের ঘোষণা এই আধার কেটে যাবে খুব শীঘ্রই ইনশাআল্লাহঃ জাহাঙ্গীর কবির নানক

বাদাম বিক্রেতা থেকে ইতিহাস লেখকঃ রবিউল আলম

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট সময় : Friday, March 11, 2022
  • 164 Time View

মোঃ ইব্রাহিম হোসেনঃ ‘বাদাম বিক্রেতা থেকে ইতিহাস লেখক-রবিউল আলম’ এই শিরোনামে একটি বই লিখছেন আমিনুল হক। যিনি লেখক ও সংবাদকর্মী। শরণার্থী শিবির থেকে মুক্তিযুদ্ধকে দেখেছেন কাছ থেকে। রবিউল আলমকে নিয়ে বেশ আগে থেকেই লিখে আসছেন। বলা যায়, রবিউল আলমকে দেশের বাইরের সংবাদমাধ্যমে তিনিই তুলে ধরেছেন। অবশেষে রবিউল আলমকে নিয়ে তারা লেখা বইটি প্রায় সম্পন্ন। সেই বইয়ের অংশ বিশেষ এখানে তুলে ধরা হলো। লেখা সম্পর্কে যে কোন পরামর্শ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করা হবে’

বেচে থাকার তাগিদে রিক্সা চালিয়েছেন। বিক্রি করেছেন বাদাম। কখনও বা মাংসের দোকানে কাজ করেছেন। স্বশিক্ষিত রবিউল আলমের কল্পনায়ও ছিলো না, তিনি লেখক হবে। অথচ নিয়তি তাকে ইতিহাস লেখার সুযোগ দেয়ায় তিনি কৃতজ্ঞ। তবে, বই লেখা নিয়ে তার সাধনার তারিফ করতে হয়।

১৯৭১ সাল। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা হয়। দীর্ঘ দিনের সংগ্রামের পথ বেচে পূর্ববাংলার স্বাধীনতা অর্জন। ৭১’র সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহরওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। সোহরওয়ার্দী উদ্যান একটি ঐতিহাসিক স্থান। বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে হলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কথা আসবেই। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা আর পিছিয়ে থাকেনি। চরম প্রতিশোধ নিতে তৈরি হয়। পশ্চিম পাকিস্থান থেকে জল-আকাশ পথে অতিরিক্ত সৈন্য এবং গোলাবারুদ পুর্ববাংলায় মজুদ বাড়ায়।

৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমি যদি হুকুম দিতে নাও পারি, তোমারা রাস্তাঘাট সব কিছু বন্ধ করে দিবে। ‘তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই শত্রুর মোকাবিলা করবে’। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। তাঁর এই কালজয়ী ভাষণের পর গর্জে ওঠেছিলো বাংলার মানুষ। তারা সংকল্প করেছিলো যেকোন মূল্যে বর্বর পাকিস্তানিদের কবল থেকে মুক্ত হতে।

বাংলাে একাডেমির পরিচালক এবং অমর একুশে বইমেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদকে বই উপহার দিচ্ছেন রবিউল আলম

অবশেষে ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পুর্ববাংলার নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে গণহত্যায় লিপ্ত হয় ঘাতক পাকিস্তানি বাহিনী। তারা নির্বিচারে মানুষকে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, আগুন দিয়ে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়াসহ এমন কোন জঘন্য কাজ নেই যা করেনি। গণহত্যা এবং অত্যাচারের খবর প্রকাশের পর গোটা বিশ্ব স্তম্ভিত। একটি পিছিয়ে পড়া অর্থনীতির পুর্ব বাংলা তখন শিক্ষাদীক্ষায় অনেক পিছিয়ে। বলা যায় কুপি-হারিকেনের দেশ। এমন যখন পরিস্থিতি তখন অসহায় বাঙালিকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। তাদের এই অপকর্ম অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে।

রায়ের বাজারের বাসিন্দা রবিউল আলম। রায়ের বাজারের পশ্চিম পাশটি তখন একটি গ্রাম। বর্ষায় থৈ থৈ জল। শুকনো মৌসুমে ইটভাটা। তাতেই কাজ করে জীবন ধারণ করেন অনেকে। তরুন রবিউল তখন কখনও রিক্সা চালান, আবার কখনও বা মাংসের দোকানে কাজ করেন কখনও আবার ফেরি করে বাদাম বিক্রি করেন। তার বাড়ির পাশেই ঝিলপাড়ে রয়েছে একটি বটগাছ। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষদের ধরে এনে এই বটগাছটিতে বেধে অকথ্য নির্যাতন চালাতো বর্বর পাকিস্তানি সৈন্যরা। অসহায় মানুষের আর্তচিৎকারে রাতের অন্ধকার ভেঙ্গে খান খান হয়ে গোটা রায়েরবাজার মহল্লায় ছড়িয়ে পড়তো। অসহায় আর্তনাত শুনতে শুনতে নির্ঘুম রাত কাটান রবিউল। অনেক সময় নিজের অজান্তেই দু’চোখের জলে বালিশ ভিজে যেতো। কিন্তু তার কি করার আছে। সে যে আসহায়!

সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে রবিউল আলমের বই কিনছেন একজন পাঠক

কাতারে কাতারে মানুষ পুর্ববাংলা ছেড়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। ভারত এককোটি মানুষকে আশ্রয় দেয়। তরুণ-যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে পাঠায়। এক পর্যায়ে ভারত মিত্রবাহিনী গঠন করে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়। নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।

কিন্তু তার আগে স্বাধীনতার উষালগ্নে বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। রবিউল বলেন, বাড়ির পাশের বটগাছটিতে ঝুলিয়ে বুদ্ধিজীবীসহ কত মানুষদের অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে মরদেহ পাশের জলাভূমিতে ফেলেছে তার হিসেব নেই। দীর্ঘ দিনে অনেক মরদেহ হয়তো পচেগলে গিয়েছে। গলা ধরে আসে ষাটোর্ধ রবিউলের। চোখের কোনে দেখা যায় জল চিক চিক করছে। অন্যদিকে ফিরে চোখের জল মুছে ফের বলেন, ‘আমিতো লেখাপড়া জানতাম না’। জীবনে কলম ধরবো তা ছিলো কল্পনার বাইরে। অবশেষে আমার ভেতরে একটা শক্তি নাড়া দিয়ে ওঠে। লিখতে হবে। আর লিখতে হলে পড়ালেখা জানতে হবে।

রবিউল আলমকে ঘিরে বই মেলায় শিক্ষার্থীরা। বই কেনার পর লেখকের সই করিয়ে নেওয়া

উদভ্রান্তের মতো হয়ে যান রবিউল। তার মনের ব্যাকুলতা কাকে জানাবেন। অবশেষে এক শিক্ষক খুলে বলেন তার মনের আকাঙ্খা। শিক্ষক তার কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে নৈশ্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন দেন। শুরু হয় রবিউলে নতুন জীবন। সারাদিন কাজকর্ম শেষে রাতে স্কুলে পড়েন। এমনিভাবে তিনি লেখাপড়া শিখেন। রবিউল জানালেন, ‘আমার দেখা রায়েরবাজার বদ্ধভূমি এবং শহিদ বুদ্ধিজীবীদের রক্তেভেজা একটি বটগাছ’ এই বইটি লিখতে তাকে পঞ্চাশ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।

নয়মাস মুক্তিযুদ্ধের পর পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনী সোহরাওয়ার্দীনে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করে। স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিমান বন্দর থেকে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই আসেন এবং স্বাধীন দেশে জনসমুদ্রে ভাষণ দিয়ে গিয়ে চোখের জলে বুক ভাসান। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উন্দিরা গান্ধি স্বাধীন বাংলাদেশ সফরে এসে এই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই ভাষন দেন।

এভাবে বসেই মেলায় বই বিক্রি করছেন রবিউল আলম

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে গড়ে ওঠছে সাংস্কৃতিক বলয়। এখানে রয়েছে স্বচ্ছ জলের একটি লেক। তার পাশেই আন্ডারগ্রাউন্ডে রয়েছে স্বাধীনতা যুদুঘর। প্রতিদিন এখানে বহুসংখ্যান মানুষ পরিদর্শনে আসেন। যে জায়গায়টিতে ৭১’র সালে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই স্থানটিতে এখন অবিরাম জ্বলছে ‘শিখা অর্ণিবান’। জায়গাটি একনজর দেখতে দুরদূরান্ত অসংখ্যা মানুষ ছুটে আসেন।

লেককে ঘিরে কয়েক বছর ধরে অমর একুশে বইমেলা হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। দিন যতই যাচ্ছে মেলার পরিসর বিস্তৃত হচ্ছে। এবারে প্রায় ৮ লাখ বর্গফুট জায়গা নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মাসব্যাপী বইমেলা। ভাষা ও স্বাধীনতা দুটোর জন্যই বাংলাদেশের মানুষ অকাতরে প্রাণ উৎসর্গ করেছে। যেমন পিছিয়ে থাকেনি ৫২’র ভাষা আন্দোলনে তেমনি সর্বশেষ ৭১’র স্বাধীনতা যুদ্ধে। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ভাষা এবং স্বাধীনতা বাঙালির বড় অর্জন। তাই রবিউল আলম আজ গর্বিত। দেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই তিনি নৈশ্যস্কুলে পড়ে বই লিখে তার আকাঙ্খা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন। সেই সঙ্গে পেয়েছেন অগনন মানুষের ভালোবাসা।

শেয়ার করুন
More News Of This Category
ডিজাইনঃ নাগরিক আইটি ডটকম
themesba-lates1749691102