বেয়াদব শব্দের অর্থ অভদ্র বা উচ্ছৃঙ্খল। সাধারণত অভদ্র, উচ্ছৃঙ্খল লোকদেরকে বেয়াদব বলা হয়ে থাকে। একজন বেয়াদব বড়দের সাথে ভালো ব্যবহার করে না। বড়দের সাথে কর্কশ ও অপমান মূলক ভাষায় কথা বলে। বড়দের কথা তেমন গুরুত্ব দেয় না। দেখা হলে সালাম বিনিময় করে না। টাকা কিংবা বংশীয় বা রাজনৈতিক ক্ষমতায় নিজেকে অহংকারী ও বড়া মনে করে। নিজ বয়সের চেয়ে বড় মুরুব্বীদের তুই বলে সম্বোধন করে। সাদা দাড়ি দাদার বয়সী ব্যক্তির সাথে বেয়াদবি করতে অন্তর কম্পিত হয় না।
অথচ বড়দের সাথে বেয়াদবি করা মহা অন্যায়। ইসলাম ধর্মে অন্যদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছেন। রাসল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘উত্তম নৈতিক চরিত্র ও আচার-ব্যবহারের ন্যায় নেকির পাল্লা ভারী করতে আর দ্বিতীয় কোনো আমল নেই। আর আল্লাহ্ অশ্রাব্য গালমন্দ ও কটুকথা বলে এমন ব্যক্তিকে খুবই ঘৃণা করেন।’ তিরমিজি শরীফ।
আদবে আওলিয়া, বেয়াদবে শয়তান। উত্তম আদব হলো ঈমানের অংশ। বেয়াদবকে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাও পছন্দ করেন না। ইবলিস আল্লাহর হুকুম অমান্য করেছিল। তার বেয়াদবির ফল হিসাবে আল্লাহ তাকে বিতারিত করে দিয়েছিলেন। সেই ইতিহাস আমাদের জানা রয়েছে।
যারা বড়দের সাথে বেয়াদবি করে তাদেরকে সমাজের কেউ পছন্দ করে না। তাকে সামনে কিছুটা ভয় কিংবা ক্ষমতার কারনে প্রশংসা করলেও অন্তরে থাকে তার প্রতি ঘৃনা।
এজন্যই এমন কোন ধরনের কাজ করা যাবে না যে কারনে অন্যদের মনে আমার প্রতি ঘৃনা জন্মায়। সর্বদা পরিচিতি অপরিচিত আত্মীয় স্বজনদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, সদ্ব্যবহার কর মাতা-পিতার সাথে, নিকট আত্মীয়ের সাথে, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকট আত্মীয়- প্রতিবেশী, অনাত্মীয়- প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদেরকে যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী।’ সূরা নিসা- আয়াত ৩৬।
বয়সে বড় অধীনস্থ কর্মচারীদের সাথে বেয়াদবি করা যাবে না। তাদের সাথে ধমক বা রাগের সুরে কথা বলা যাবে না। আপনি একটু ভাবুন, আপনার নিম্ম কর্মচারী যদি না থাকত,অফিস কিংবা দোকানের কাজে আপনার কতই বেগ পেতে হত। অফিস কিংবা দোকান পরিস্কার পরিছন্ন রাখসহ সকল কাজই প্রধানের পক্ষে করা কষ্টের হত। আজ যারা মালিক পক্ষ, যারা শিল্পপতি, দামি বাড়িতে বসবাস ও দামি গাড়িতে চলাচল, আনন্দে উল্লাসে সময়কে অতিবাহিত করে একটু লক্ষ্য করুন, আপনার এই আনন্দের পিছনে রয়েছে আপনারই অধিনস্ত শত শত শ্রমিক বা কর্মচারীর হাজারো ফোটা ঘাম। একজন কর্মচারী গোটা জীবন কেটে যায় আপনার কারখানায়। এছাড়া রিক্সা চালক ও ড্রাইভার আমানাকে গন্তব্যে পৌছিয়ে না দিলে হেটে গৌন্তব্যে পৌছাতে হত। কুলি ব্যাগটি পৌছিয়ে না দিলে কষ্ট করে আপনাকে বহন করতে হত৷ এমনকি ড্রেনে কিংবা ডাষ্টবিনে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে কাজ করছে, তাদের কারনেই আমাদের বাথরুম ব্যবহার ও বাসা পরিস্কার থাকছে। আমি মনে করি এই সকল লোকদের কারনে আমাদের পরিস্কার পরিচ্ছন্নভাবে বেঁচে থাকা। আহ্ আমাদের উপকার করা এই ব্যক্তিদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করি। তাদেরকে গালমন্দ করি। তারা বয়সে বড় এরপরেও তাদের সাথে বেয়াদবি করি৷ ধনী-গরিব, মালিক-শ্রমিকের কোনো পার্থক্য নেই। আমরা সবাই সমান। মাটির কবরেই আমাদের শেষ ঠিকানা। তাই পরিবার থেকেই শিশুদের বড়দের প্রতি যেন বেয়াদবি না করে সেই শিক্ষা দেওয়া জরুরী। তারা সর্বদা গুরুজনদের সন্মান করবে। বড়দেরকে সালাম প্রদান করবে। উচ্চ আওয়াজে নয়, হাসি মুখে কথা বলবে। বড়দের বিপদে এগিয়ে যাবে। অন্যের উপকারে নিজকে সপে দিবে। নিজে দাড়িয়ে বড়দের বসার সুযোগ করে দিতে হবে। সামনের স্থানে বড়দের জায়গা করে দিতে হবে। ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত নয়, বড়দেরকে ভালোবাসা দিয়ে মন জয় করে নিবে। বড়রা কষ্ট পাবে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সর্বক্ষেত্রে বড়দের গুরুত্ব দিতে হবে। এই শিক্ষায় পরিবার থেকে পেলেই শিশুরা কখনো বড়দের সাথে বেয়াদবি করবে না।
আজ যদি আমি বড়দের সাথে বেয়াদবি করি, আমি যখন তার বয়সী হব, তখন অন্যরা আমার সাথে বেয়াদবি করবে। যদি বড়দের সন্মান করি, আমাকেও ছোটরা সন্মান করবে। তাই বেয়াদবি বন্ধ করে বড়দের সন্মান করতে হবে। বড়দের সন্মান পাওয়ার জন্য অবশ্যই ছোটদের স্নেহ করা জরুরী। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি বলেছেন, ‘যারা ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না তারা আমার দলের অন্তর্ভুক্ত নয়।’
আবু দাউদ।
লেখকঃইসলাম বিষয়ক গবেষক