মোঃ ইব্রাহিম হোসেনঃ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
১৭ মার্চ ২০২২ রোজ বৃহস্পতিবার সকালে ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ৪র্থ তলায় কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেক কেটে এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
তার আগে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক অ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি’র নেতৃত্বে সকালে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের সভাপতির বক্তব্যে কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর তা বাস্তবায়নে কাজ করতে গিয়ে জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনাকে ১৯ বার মৃত্যুর মুখোমুখী হতে হয়েছে, কিন্তু তিনি পিছপা হন নাই। তেমনিভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে মৃত্যুর মুখোমুখী হতে হলেও বাংলাদেশ কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা পিছপা হবে না। এটাই হোক আজকে বঙ্গবন্ধুর ১০২ তম জন্মবার্ষিকীতে বাংলাদেশ কৃষক লীগের শপথ।
কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কৃষকরত্ম শেখ হাসিনা হাতকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কৃষক লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবে এটাই আজকে বঙ্গবন্ধুর ১০২ তম জন্মবার্ষিকীতে বাংলাদেশ কৃষক লীগের শপথ।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কৃষক লীগের সহ-সভাপতি মহাবুবুল আলম শান্তি, শেখ মো. জাহাঙ্গীর আলম, হোসনে আরা এমপি, এ্যাড. রেজাউল করিম হিরন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ বিশ্বনাথ সরকার বিটু, সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী হক, এ্যাড. গাজী জসিম উদ্দিন, আসাদুজ্জামান বিপ্লব, কৃষিবিদ ড. হাবিবুর রহমান মোল্লা, অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম পানু, হিজবুল বাহার রানা, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য মো. নাজির মিয়া, রেজাউল করিম রেজা, এ্যাড. জহির উদ্দিন লিমন, কৃষিবিদ তারিফ আনাম, লায়ন মো. আহসান হাবিব, মো. মিরুল ইসলাম, মোশারেফ হোসে আলমগীর, সৈয়দ শওকত হোসেন সানু, এ্যাড. রাবেয়া বেগম, নুরুল ইসলাম বাদশা, এ্যাড. জামাল হোসেন মুন্না, রাশিদা চৌধুরী, সামিউল বাসির বিন হোসেন প্রমুখ।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মা শেখ সায়েরা খাতুন। কালক্রমে তার হাত ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে এই দিনে বয়স হত ১০২ বছর।
বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্কুলজীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কৈশোরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। ম্যাট্রিক পাসের পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের মতো রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন। এ নেতাদের সাহচার্যে তিনি নিজেকে ছাত্র-যুব নেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর পরই ঢাকায় ফিরে নতুন রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা নিয়ে অগ্রসর হন বঙ্গবন্ধু। সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠিত হলে তরুণ নেতা শেখ মুজিব দলটির যুগ্ম সম্পাদক পদ পান। পরে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নামকরণ করা হয় আওয়ামী লীগ।
বঙ্গবন্ধু বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, আটান্নর আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনসহ পাকিস্তানি সামরিক শাসনবিরোধী সব আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাঙালির অধিকার আদায়ের এসব আন্দোলনের কারণে বারবার কারাগারেও যেতে হয় তাকে। বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পান। আওয়ামী লীগ প্রধান হিসাবে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন তথা বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে তাদের কারাগারে পাঠান। ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাঙালি শেখ মুজিবকে কারামুক্ত করে। এ সময়ে শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানের একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নানা চক্রান্ত করে বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। এরপর বঙ্গবন্ধু স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলন এবং চূড়ান্তপর্বে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ দেন।
এ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মার্চে নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু বেশিদিন দেশ গঠনের কাজ করে যেতে পারেননি। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে নিজ বাসভবনে ক্ষমতালোভী ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হন। স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জীবনাবসান ঘটে।