মাওলানা সাইফুল ইসলাম সালেহী:
খুব অন্ধকার, নারী পুরুষ সবাই ঘুমিয়ে আছেন। রাত গভীর হয়েছে তখন হঠাৎ মাইকের আওয়াজ আসে, সেই আওয়াজে বলা হচ্ছে, আপনারা উঠুন সাহরী খাওয়ার সময় হয়েছে। সেই আওয়াজ শিশুরা শুনে বলে আম্মু উঠুন, মুয়াজ্জিনে বলতেছে সাহরী খাওয়ার জন্য৷ মুয়াজ্জিনের এই আহ্বানে মূহুর্তের মধ্যে সারা সমাজে বাতি জ্বলা আরম্ব হয় এবং সবাই সাহরী খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে। কিছুক্ষণ পর পর চারপাশে আওয়াজ আসে, শুধু সাহরী খাওয়ার জন্য বলা হয়, আল্লাহর প্রিয় বান্দারাও চিৎকার দিয়ে আহ্বান করে৷ একদল শিশুরাও মুধর সুরে আহ্বান করে, পাখিরাও ডাক দেয়৷ ভোরের প্রকৃতি বাতাসে আমরা ঠান্ডা হয়, সারা রমজান মাসে এই সুন্দর পরিবেশটা আমাদেরকে মুগ্ধ করে৷ রাতের বেলা সবাই ঘুমিয়ে পড়ে, কিন্তু আল্লাহর কিছু প্রিয় বান্দা ঘুমাই না, তাঁরা সারা রাত জাগ্রত থাকে আর আল্লাহকে স্বরণ করে ও তাহাজ্জুদ নফল নামাজ পড়ে জিকির করে রাত কাটিয়ে দেয়৷ তাঁরা রাতের শুরু থেকে সাহরী খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। সাহরী খাওয়ার ফজিলত অনেক বেশী। সাহরী খাওয়ার জন্য প্রিয় নবীজী (সাঃ) আহ্বান করেছেন। আমাদের প্রিয় নবীজী (সাঃ) বলেন, সাহারী খাও! কারণ সাহারীতে বরকত রয়েছে।”
(সহীহবোখারী,পৃ-৬৩৩, হাদীস-১৯২৩) আমাদের ও কিতাবী সম্প্রদায়ের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, সাহারী খাওয়া।”
(আল ইহসান বিতরতীবে সহীহ মুসলিম, খন্ড-১ম, -৫৫২, হাদীস নং-১০৯৬) আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ সাহারী আহারকারীদের উপর রহমত নাযিল করেন।”
(সহীহ ইবনে হাব্বান, খন্ড-৫ম, -১৯৪, হাদীস -৩৪৫৮) নবী করীম, রঊফুর রহীম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজের সাথে যখন কোন সাহাবীদের কে সাহারী খাওয়ার জন্য ডাকতেন, তখন ইরশাদ করতেন, “এসো! বরকতের খাবার খেয়ে যাও!”
(সুনানে আবু দাউদ, খন্ড-২য়, ৪৪২, হাদীস-২৩৪৪) রোযা রাখার জন্য সাহারী খেয়ে শক্তি অর্জন করো, আর দিনে (অর্থাৎ দুপুরে) আরাম (অর্থাৎ দুপুরে বিশ্রাম) করে রাতে ইবাদত করার জন্য শক্তি অর্জন কর!”
(সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, -৩২১, হাদীস -১৬৯৩) সাহারী হচ্ছে সম্পূর্ণটাই বরকত। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো না। চাই এমনই অবস্থা হয় যে, তোমরা এক ঢোক পানি পান করে নেবে। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ও তাঁর ফিরিশতাগণ সাহারী আহারকারীদের উপর রহমত প্রেরণ করেন।”
(মুসনাদে ইমাম আহমদ, খন্ড-৪র্থ, -৮৮, হাদীস -১১৩৯৬) ৷ হযরত সায়্যিদুনা ইরবাদ্ব ইবনে সারিয়াহ ( রাঃ) বর্ণনা করেছেন, একবার রমযানুল মুবারকে আল্লাহর রসূল হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ) আমাকে নিজের সাথে সাহারী খাওয়ার জন্য ডাকলেন। আর ইরশাদ করলেন, “এসো! মুবারক খাবারের জন্য।”
(সুনানে আবু দাউদ, খন্ড ২য়, ৪৪২, হাদিস -২৩৪৪) আসুন আমরা প্রাণ ভরে নিজেরা সাহরী খাবো এবং অপরকে খাবাবো, প্রতিবেশী ও এতিম মিসকিনদের কে খাবাবো। আল্লাহ বলেন, তাঁরা আল্লাহর ভালবাসায় অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে খাবার দেয়।” (সূরা আদ দাহর, আয়াত- ৮) সারা জাহানের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, হে লোকেরা, তোমরা সালাম সম্প্রসারণ কর, খাদ্য খাওয়াও, রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখ এবং মানুষ যখন (রাতে) ঘুমিয়ে থাকে, তখন তোমরা (তাহাজ্জুদের) নামায পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (তিরমিযী ২৪৮৫, ইবনে মাজাহ ১৩৩৪, ৩২৫১, হাকিম ৪২৮৩, সহীহ তারগীব ৬১০) আসুন আমরা নিয়মতি সিয়াম পালন করে ও সাহরী খেয়ে যেন আল্লাহর প্রিয় বান্দা হব আমিন।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন