এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজাঃ
আবারো এক সপ্তাহের লক ডাউন। যেভাবে মৃত্যুর কফেলা বাড়ছে, তাতে আর লেখতেও ইচ্ছে করেনা। মন খারাপ থাকে, কখন কোন কষ্টের খবর পাই। তারপরও সমস্তদিন ঘরে থেকে, সকলের সাথে যোগযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও ভাল লাগে না, তাই কিছুটা লেখালিখি। আসলে কোন কিছু নিয়ে লিখতে গেলে, বর্তমান নিয়ে কে লিখতে হয় এবং আর পক্ষে বিপক্ষে নানা কথা টানতে হয়। আর লেখক বলতে যা বুঝায়,আমি তার ধারে কাছের কেউ না, তবুও মোবাইলে টুকটাক। এক ধরনের শান্তনা।
তবে বর্তমান কে নিয়ে কোন লেখা শুরু করলে,পিছনে মন চলে যায। ৭১ স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের অনেক কিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে। যার মইধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল শিল্পখাত। যার মইধ্যে তৎকলীন পকিস্থানের ২২ পরিবারের অনেক শিল্প, তারা ফেলে পাকিস্থান চলে যায। জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনেক আশা করে, এদেশের গরিব দুঃখী মানুষের কথা চিন্তা করে, ঐ সমস্ত পরিত্যক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান সহ অনেক প্রতিষ্ঠান জাতীয়করন করে ছিলেন। যার আয় দিয়ে দেশকে, সাবলম্বী করার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং যার অনেকটাই সফল হয়। কিন্তু কিছু দুর্নীতিবাজ আমলা এবং অসৎ ব্যাবসায়ীদের কারনে,তা পুরোপুরি সফল হয়নি। আমাদের একজন নামকরা গবেষক, অধ্যাপক রেহমান সোবহান,তার লিখিত গ্রন্থ” দি ইন্টারমেডিয়েট রিজিম অফ বাংলাদেশ” এ ঐ সমস্যাগুলো বিস্তারিত লিখেছেন।
এ পর্যায় একটি মারাত্তক শব্দ ব্যবহার করবো, শব্দটি”ক্যানসার”। ৭৫ এর ডিসেম্বের মাসের শেষ দিকের কথা। জাতির মারাত্তক ট্রাজেডি,১৫ অগাস্ট এর পরে, মোস্তাক এর সামরিক সরকারের গ্রেপ্তার এড়াতে প্রায়শই, আমার আব্বা,পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক এম পি এ, এম সি এ ও এম পি মরহুম আব্দুল আজিজ খন্দকার প্রায়ই ঢাকাতে আসতেন। মূলত আব্বার সাথে দেখা করার জন্যই তত্কালীন ন্যাপ নেতা, একজন ভালো মানুষ,বর্তমানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, পরিমল চন্দ্র গুহ( পি সিগুহ) দাদা আমাদের কলাবাগনের বাসায় আসেন। ঐ দিন আব্বা কলাবাগনে ছিলেন না। তিনি আমার সাথে অনেক কথা বললেন,আব্বার খোজ খবর নিলেন। যদিও আমি বেশ কিছু আগে থেকেই ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু করেছি। তিনি আমাকে বললেন,রেজা বসে থাকার সময় নেই, জিয়ার সামরিক শাষনের বিরুদ্ধে এখনই পুরোপুরি নেমে যেতে হবে। আমি তাকে বললাম,দাদা আপনি ন্যাপ করেন, তাছাড়া আপনি তো কখনো, কিছু পাননি,আপনি কেন আন্দলনে নামতে বলেন। তখন তিনি আমাকে বললেন,আওয়ামী লীগের কেউ কেউ কিছু দুর্নীতি করেছে, সেটা “খুজ্লি চুলকানির” অসুখের মত, কিন্তু জিয়াউর রহমান তো “ক্যানসার”,তার ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী হলে, দেশ ক্যানসারে ভরে যাবে ! কি মারাত্তক কথা। এভাবে আমাকে কেউ কখনো বলেনি। আমি সেই থেকে, পি সি গুহু দাদার একজন ভক্ত। ৪৫ বছর আগের কথাটা, এখন প্রায়শই মনে আসে। আমিও বিশ্বাস করি, সামরিক স্বৈরাচার জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের রাজ্নীতীতে ক্যানসার ঢুকিয়েছেন। আর তার ঐ কুখ্যাত ডায়লগ, “আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দি পলিটিসিয়ান্স” ঐ ক্যান্সারের বহিপ্রকাশ মাত্র।
এবার পিছনে আসি। যা বলছিলাম বাংলাদেশে জাতীয়করণকৃত প্রতিষ্ঠান নিয়ে। জিয়ার আমলে বা লেজেহোমো এরশাদের আমলে, একটি ব্যঙ্গ শ্লোগান প্রায়ই শোনা যেতে, “ওমোকের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র”। যদিও “ওমোক” নাম গুলো অনেকেরই মনে আছে, কিন্তু এতদিন পর ঐ নাম গুলো বলতে চাইছি না। হয়তো কেউ কেউ বিব্রত হবেন। ৭৫ এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে হত্যার পর,যে রাষ্ট্রীয় লুটপাট শুরু হয়েছিল, জিয়ার আমলে, যা এরশাদ এবং পরবর্তী কালে বেগম খালেদার আমল পর্যন্ত বহাল ছিল। আমরা অনেকেই জানি, বঙ্গবন্ধুর আমলে জাতীয়করনাকৃত শিল্প প্রতিষ্টান গুলো, প্রায় বিনা পয়সায় বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের ছেড়ে দেয়া হযেছে এবং যা এরশাদের আমলেও ছিল।জিয়া এবং এরশাদ বা খালেদার আমলে যা রাষ্টীয় সুবিধায় বিভিন্ন ভাবে অবৈধ সুবিধা নিয়ে, যারা তথাকথিত ব্যবসা করেছে বা লুটপাট করেছে বা হটাৎ বড় লোক হযেছে, সে লোকগুলো,এখন কোথায়। তারা কি কেউ বেচে নেই ?। তারা কি সবাই মৃত্যুবরণ করেছে অথবা বিদেশে চলে গেছে। তেজগাঁও শিল্প এলাকার শিল্পগুলো, চট্টগ্রাম সহ সারা বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্টানগুলো বা বিভিন্ন হাইওয়ের পাশের প্রায় বিনা মূল্যে নেয়া পেট্রল পাম্প গুলো এখন কারা চালাচ্ছে। আমরা জানিনা অথবা মনে রাখিনা। ক্যানসার রোগের সুবিধা হচ্ছে, বাহির থেকে দেখে, রোগ চেনা যায় না। আমরা জানিনা, জিয়া বা এরশাদের আমলে ক্যান্সারের মত জীবানু গুলো, ৭১ এর জামাত রাজাকারদের মত কতোটুকো শক্তি নিয়ে বেচে আছে !। আমাদের দূর্বাগ্য এটাই। অথচ জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি মহান ব্রত নিয়ে,এদেশটা কে স্বাধীন করেছিলেন। সেই দেশটিতে জামাত, রাজাকার জিয়ার ছড়ানো ঐ জীবানু কি এখনো আছে ! হয়তো আছে,বেশ প্রকট ভাবে,আমাদের আশেপাশে। ডায়গোনসিস করতে হবে, কোন উন্নত হসপিটালে। তাহলে ঐ রোগটা ধরা পড়তেও পারে। তাহলে চিকিৎসাও সহজ হয়ে যাবে, যদি চিকিৎসা করাতে চাই ! আর ঐ চিকিৎসাই পারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আজীবিনের স্বপ্ন ” সোনার বাংলা ” গড়ার পথ সহজ করতে। যে সোনার বাংলা গড়ার চেষ্টায় নিরন্তন কাজ করে যাচ্ছেন, তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। ক্রমশঃ এডভোকেট খোন্দকার শামসুল হক রেজা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক লীগ ।১৪ এপ্রিল, ২০২১