এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজাঃ
কয়েকদিন আগে আমার একজন কাছের মানুষ আমাকে অভিযোগের সুরে বললো, সে এক সময় একট সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির “সম্পাদক মণ্ডলীর” সদস্য ছিল, এখন তাকে ডিমোশন দিয়ে ” জাতীয় কমিটির” সদস্য করা হয়েছে। এটা কেমনে হয়, তারা তাকে বাদ দিতে পারতো। ভাগ্যিস, ওর সাইন্টিফিক ম্যানেজমেন্ট তত্ত্বটি জানা ছিল না , জানা থাকলে হয়তো আরো অনেক কিছু বলতো ! আমার লেখায়, প্রায়শই আমারিকান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং একই সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একজন মনীষী,ফ্রেডারিক টেইলর,যে কালজয়ী সাইন্টিফিক ম্যানেজমেন্ট এর তত্ত্ব দিয়েছেন, সে বিষয়টি নিয়ে আসি। আমার কেন যেন ইদানিং মনে হয়, আমাদের অনেকে প্রশাসনে এবং রাজনীতিতে সেই সাইন্টিফিক ম্যানেজমেন্ট তত্তের অনেকটাই বিপরীত মুখী চলছেন। ফলে যেখানে যার বসার কথা নয় সেখানে সে বসছেন, আর যেখানে যার বসার কথা, সেখানে সে বসছেন না। কেমন জানি সব কিছুতেই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। অনেকদিন আগের একটি বিষয়। আমার স্কুল ও কলেজ জীবনের বন্ধু, কোনো একদেশে একটি বিশেষ সংস্থায় চাকুরি করতেন। অনেকদিন পর দেখা। চাকুরি থাকা অবস্থায় তার পারিবারিক সমস্যা নিয়ে আমার সাথে কথা বললো। তখন তাকে জিজ্ঞেস করি কেমন আছো বন্ধু। খুব হতাশ হয়ে বললো ভালো নেই চাকুরি নিয়ে। পারিবরিক সমস্যাটাও সেখান থেকে উত্পত্তি। আইনজীবী হওয়ার কারনে আমাদের যেমন সব কিছুতেই সন্দেহ !। ওকে খুটিয়ে খুটিয়ে চাকুরি জীবন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করি। তার সাথে কথা বলে যা নির্ঝাস পেলাম তা এমন, সে যখন বর্তমান পদের, এক পদে নিচে চাকুরি করতো , তখন তার এক কলিগ নিয়ে,একটি বিচার বসে।তাদের বিভাগীয় বিভিন্ন কর্মকর্তা স্বমন্বয়। ঐ বিচারের কার্যক্রম সভায়, সেও একজন সদস্য ছিল। ঐ বিচারে ঐ কলিগের লঘু শাস্তি হয়েছিল। বিষয়টা ঐ কর্মকর্তা খুব মনে রেখেছে। এর অনেক দিন পর ঐ কর্মকর্তাই একসময় আমার বন্ধুটির বস হয়ে যায়।ফলে তার আর প্রোমোশন হচ্ছে না এবং এজন্য সে পিছনের বিচার কমিটির সদস্য হওয়াটাকেই দায় মনে করছেন এবং সে জন্যই তার আর প্রমোশন হচ্ছে না। আমার ঐ বন্ধুটি আমাকে আরো বলেন, খুব কঠিন ভাবে, এভাবে চাকুরি করা সম্ভব নয়। ঐ কর্মকর্তা একদিকে একসময় তার জুনিযার ছিল, এখান তার চেয়ে উচ্চ পদে বস হয়ে আছে। আমি বিষয়টাকে সিরিয়াস ভাবে নেইনি। এরপর অনেকদিন আর যোগাযোগে নেই। সেও যোগাযোগে করেনি, আমিও খোজ নেইনি। পড়ে শুনেছি সে মারা গেছে। কিন্ত অনেক কষ্ট পেয়েছি, যখন আমার আরেক বন্ধুর কাছে শুনেছি, সে মারা যায়নি। সে চাকুরি এবং পারিবারিক বিভিন্ন মানুষিক যন্ত্রনায় আত্মহত্যা করেছে। আমার পক্ষে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কি কষ্টকর বিষয় !। তখন আমার আবারো সেই সাইন্টিফিক ম্যানেজমেন্ট তত্ত্বটি খুব মনে পড়ে গেলো। আসলে প্রশাসন বা যেকোন সার্ভিসে কেউ যখন, তার নিড অনুযায়ী তার পদায়ন না হয়, অর্থাৎ প্রথমিক ভাবে ফিজিওলজিকাল নিড এবং পর্যায়ক্রমে, সেফটি নিড, বিলঙগিংনেস নিড,এষ্টিম নিড এবং সবশেষে সেল্ফ একচুয়ালাইজেশন নিড পুরুন হতে হয়। এভাবেই চাকুরিজীবীদের বেলায় মোটিভেশন করতে হয়, তাহলেই কাজে প্রোডাকটিভিটি আসবে। আর এর বৈপরিত্য হলেই, ঐ কর্মকর্তার দ্বারা আর কোন কাজ করানো সম্ভব নয়। তবে প্রশাসন বা কোনো সংস্থায় এটা করতে গেলেও একটি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করতে হয়, ভুল বা অনাকঙ্খিত হলেও। এটা যেমন প্রশাসন বা যে কোন সংস্থার ব্যাপারে যেমন প্রযোজ্য, তেমনি রাজ্নীতীর বেলায়ও সমভাবে প্রযোজ্য। তবে আমার ঐ বন্ধুটির মৃত্যু বা আত্মহত্যা কোনো অবধারিত বিষয় না। আসলে যার যেখানে বসার কথা, সে সেখানে বসছে না, এজন্যই বল্লাম। আর যার বসার যোগ্যতা নেই, সে তো অনেক দুরে থাকবে !, তাকে তো চেয়ারের যোগ্যতাতেই রাখা যাবে না, চেয়ারে বসার সুযোগ তো অনেক পরের কথা। প্রশাসন বা যেকোনো প্রতিষ্টানে কেউ খুব অযোগ্য হলে বা কারো দ্বারা কোনো কাজ যদি আর না করানো যায, তখন তাকে সাসপেন্ড, ডিমোশন বা টার্মিনেশন করতে হয়। রাজ্নীতীর বেলায়ও এমনটিও দেখা গেছে বহু দলে। অনেকে আদর্শগত কারনে বা নেতৃত্ত্বেরর প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতার ওভাবেও অনেকে বাদ পড়েছেন। এটা খুবই অস্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু ওরকম কোনো কারন ছাড়া, যখন কেউ প্রমোশন না পান বা পদায়ন না পান বা উল্টো ডিমোশন হন, তখন শুধু মাসিক বেতন ভাতা উত্তোলন এবং সুবিধাদি নেয়া ছাড়া সে কোনো কাজ করেনা। ভাবে কখন তার ঐ বস বিদায় হবেন, কখন সে আবার নতুন করে প্রমোশন পাবে বা নতুন কোনো গুরুত্তপুর্ণ পদে যাবে। এটাই মানুষের স্বাভাবিক মানসিকতা। রাজ্নীতির বেলায়ও কি এমনটি হয় !। আসলে মানুষ তো আর অতি মানব নয়, সেহেতু এমনটি ভাবতেও পারে। কিন্তু ঐ ভাবা বা ভাবা নিয়ে কেউ কোনো লাভবান হতে পারে না, তখন অনেকে বিষয়টি নিয়তির উপর ছেড়ে দেন। এটাই বাস্তবতা। ক্রমশঃ এডভোকেট খোন্দকার শামসুল হক রেজা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক লীগ সম্পাদক ১২ এপ্রিল,২০২১