পর্ব ৬৭: “যে ইতিহাসটি বলা দরকার” : এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজা
রিপোর্টারের নাম
আপডেট সময় :
Thursday, March 10, 2022
179 Time View
এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজাঃ
বিগত পর্বে পটুয়াখালীর সাবেক ডি সি আব্দুস শাকুর প্রসঙ্গে আলোচনায়, ৭৫ দেখা বা না দেখা নিয়ে কিছু আলোকপাত করছিলাম। ৪৫ বছরের ঘটনার কতটুকুই বা আমরা মনে রাখতে পারি। এ বাংলা দেশে, আবারও যে জাতিরপিতার নাম নেয়া যাবে,আবারও যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বিচার হবে। সবটাই ছিল এক মহা অনিশ্চয়তার মাঝে। জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি বেচে না থাকতেন বা তিনি যদি দেশে এসে আওয়ামী লীগের হাল না ধরতেন, তাহলে এদেশের অবস্থা কি হত তাও আমরা জানতাম না। তারপরও যারা ৭৫ এর১৬ অগাস্ট থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে নেমে পড়েছিলেন, তাদের বিষয়টি এই মুহুর্তে, এতো বছর কতোটুকোই বা স্মরণ করতে পরি। আর সে জন্যই হয়তো কোন একজন কষ্ট পাওয়া মানুষ, প্রথম ৭৫ দেখা না দেখা নিয়ে কথা উঠিয়েছেন। আর সেটাকে ধরেই আমরা অনেকে এমন লেখালেখি করছি।কতলোকই তো,কত ধরনের সুযোগ সুবিধা নিচ্ছি। আবার অনেকেই হারিয়ে গেছেন। আবার অনেকে বেচে আছেন, কিন্তু বিজয় পতাকা হাতে নেই। প্রায়শই মনে পড়ে, ৭৮ সনের দিকে, আমাদের ডাকা হরতালের দিনে ছাত্রদলের গুন্ডাদের,আর্মস ক্যাডারের হামলার ভয়, কবি জসিম উদ্দিন হলের বাথ রুমে অনেকক্ষণ পালিয়েছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কত কর্মসূচিতে, আর্মি, পুলিশ ছাত্রদল, জাসদ, ঢালীদের মুখোমুখি হযেছি, তার হিসেব হয়তো ওবায়দুল কাদের ভাই, ডা: মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন ভাই, খ ম জাহাঙ্গীর ভাই , রবিউল মোকতাদির চৌধুরী ভাই, বহ্লুল মজ্নুন চুন্নু, গোলাম মহিউদ্দিন ভাই, হবিবুর রহমান খান ভাই,আব্দুস সালাম ভাই, মহিবুর রহিম বাবুল ভাইরা ভাল বলতে পারবেন। অনেকের সাথেই দেখা হয়না। কাদের ভাইর সাথে হয় প্রায়ই দেখা হয় । জালাল ভাইকে মাঝে মাঝে জননেত্রী রাজনৈতিক কার্য্যলয় ৩এ তে দেখা হয়, খ ম জাহাঙ্গীর ভাইর সাথেও ওখানে দেখা হতো। হটাৎই না বলে, চলে গেলেন, না ফেরার দেশে। মহিবুর রহিম বাবুল আরো আগে চলে গেছেন । আমরা কেউ থাকবো না। পার্থক্য, যে আগে যারা যায়, তাদের আমাদের কথা নিয়ে ভাবতে হয় না। সেদিন কোন এক নাট্যকারের পুরাতন বক্তব্য থেকে শুনেছি, কেউ চলে গেলে করো জীবন থেমে থাকে না ! শুধু স্বপ্ন গুলো মরে যায় !। আসলেই কি আমাদের স্বপ্নগুলো মরে গেছে। জালাল ভাই, আমরা তো আপনার সাথে ভিন্ন গ্রুপও করেছি। কিন্তু কোনদিন কি সামান্য খারাপ ব্যাবহার করেছেন আপনি অথবা আমরা। কোন হরতালের প্রোগ্রামে আমরা একত্রে মিছিল করিনি ?।আমাদের ৭৫ দেখা কত কষ্টের। হয়তো বা সে জন্যই আমরা ৭৫ নিয়ে বেশী কথা বলছি। সাবেক সচিব শাকুরের পিছনের ডি সি কালীন সময় নিয়ে কাসুন্দি ঘাটছি। পিছনের জীবনে এরকম কত মনুষেরই কত কিছু ঘটেছে। বাংলাদেশে তো এরকম কত উধাহরনই আছে।
আসলে আমরা কে কি করছি বা কে কি করেছিলাম, সেটা কোন বিষয়ই না। আমার ভাইগ্যে কি হয়েছে সেটাই আসল বিষয়। আপনার ভাইগ্যে কিছূ ঘটলে, তখন অন্যেরা বলবে, আপনার জন্ম থেকেই বোঝা গিয়েছিল আপনি এমনটি হবেন। আমার প্রায়শই মনে পড়ে, আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক, মুকুল বোস দাদা তখন জেলে,তখন মানিকগঞ্জ বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক, সালাম ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। ৭৯ এর প্রথম দিকের কথা। ঐ সময় কোন বুদ্ধিজীবী, লেখক নিয়ে আমরা খুব একটা আলোচনা সভা করতাম না। কিন্তু কবি নজরুল ইসলামের মৃত্যু দিবসে আমাদের উপর দাইত্ত্ব পরলো একটি সভা করার । স্থান মধুর রেস্তরাঁ। ঐ সভায় অনেকের সাথে, আমাদের এক মুরুব্বি ছাত্র নেতাকে মঞ্চে বক্তেব্যের জন্য ডাকলে, তিনি তার বক্তব্যে, ভুমিকা শেষ করে বললেন, ” নজরুল ইসলাম, বড় ভারী কবি ছিলেন, আমরা ধরতে পারিনি, তিনি জন্ম থেকে মৃত্য পর্যন্ত কবিতা লিখে গেছেন “!। আসলে কেউ যখন বড় কিছু হয়ে যান, অনেকেই আমরা তখন এভাবে বলি। আর যদি কেউ ছিটকে যায়, তখন ঐ নামে, কোন লোক ছিলো সেটাই মনে থাকে না ! এটাই নির্মম বাস্তবতা এবং এরকম নির্মম বাস্তবতার সন্মুখিন কেউ হবেন না, সে কথা হলফ করে বলা যাবে না। (ক্রমশঃ) এডভোকেট খোন্দকার শামসুল হক রেজা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক লীগ ।২৯ মার্চ,২০২১