এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজাঃ
বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক অন্দোলনের একজন উচ্চমাপের বিপ্লবী, কিউবার ফিদেল ক্যাষ্ট্রো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখে বলেছিলেন, তিনি হিমালয় পর্বত দেখেনি কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন। এই দেখা বা নদেখা নিয়ে পৃথিবীতে অনেক রকম মতবাদ আছে, ইতিহাস আছে,আছে বাংলাদেশেও। কেউ যদি বলেন তিনি একাত্তর দেখিনি। তখন আমরা একশত ভাগ কনফরম হয়ে বলি, সে একাত্তরে জন্মই নেয়নি। কিন্ত কেউ যদি বলেন যারা ৭৫ দেখেননি। তখন অনেকেই ধরে নেন, ঐ ব্যক্তি ৭৫ এর সেই নির্মম ঘটনায় তার কোনো ক্ষতি হয়নি বা ৭৫ এ জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সে কোন ভুমিকা রাখেনি। আমি জানিনা, ৭৫ দেখেননি, বিষয় নিয়ে ভিন্ন কোন মত আছে কিনা। তবে অনেকেই আমার মত উপরের মত কে সমর্থন করবেন।
এবার ৭৫ দেখেনি মুল আলোচনায় আসি। ফিদেল ক্যাষ্ট্রোর হিমালয় দেখিনি ঘটনা নিয়ে পরে আসবো । কিছু দিন পূর্বে একজন সাবেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা পত্রিকায় আর্টিকেল লিখেছেন, রাজ্নীতী এখন আমলা এবং ব্যাবসায়ীদের দখলে, যা দেশের জন্য খুবই খারাপ লক্ষণ। এবার এখন উচ্চপদস্থ সাবেক আমলার গল্প বলবো। শুনেছি ঐ ভদ্রলোক এর ১৯৭৪ সনে, দুর্নীতির জন্য চাকরি চলে গিয়েছিল। ছোট গল্পকার হিসেবেও তার নাম ছিল। ঐ ভদ্রলোক নাকি ” ৭৪ এর কড়চা” নামক বইয়ে,৭৪ এর তথাকথিত দুর্ভিক্ষ নিয়ে অনেক খারাপ খারাপ কথা লিখেছে। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কেও অনেক বাজে কথা লিখেছে। আমার ইতিপূর্বের লেখায় তার বিষয়টি উল্লেখ করেছিলাম। তিনি সাবেক সচিব আব্দুস শাকুর। হা উনি ৭৫ সামরিক স্বৈরাচার জিয়াউর রহমানের আমলে আবার চাকুরিতে পুনুর্বহাল হন এবং কিছুদিন পর পটুয়াখালী জেলার, জেলা প্রশাসক হন। যিনি জেলা প্রশাসক হয়েই, তার বাড়ি এবং অফিসের সামনে জেলা শাসক লিখতেন। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধে আমরা সংগঠিত হচ্ছি। এর এদিকে পটুয়াখালীতে চলছে শাকুর ডিসির রামরাজত্ত। সে সব সময় এমনকি বিভিন্ন সভায়, বঙ্গবন্ধুকে ” বঙ্গবল্টু ” বলে সম্বোধন করতেন। সে যতোদিন পটুয়াখালীতে ডিসি ছিলেন, তার অত্যাচার থেকে বঙ্গবন্ধুর অনুসারি আওয়ামী লীগ তার সহযোগী সংগঠনের কম লোকজনই রক্ষা পেয়েছেন। যেখানেই বঙ্গবন্ধু বা আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড থাকতো, তা সে নিজে দাড়িয়ে থেকে ভাঙ্গাতো। পটুয়াখালী পৌর সভার সাবেক মেয়র, দুর্দিনের নেতা আব্দুস সালাম ভাই, শাহজাহান ফরুকি ভাই সহ কত নেতাকে যে জেল খাটতে হয়েছে,তার হিসেব নেই। আমার পিতা সাবেক এম পি আব্দুল আজিজ খন্দকারকেও বাউফল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলেন। পরে তার গ্রেপ্তারের খবর আব্বার কাছের মানুষ, সাবেক ডিসি, জমসেদ আহমেদ খন্দকার, যিনি ঐ সময় স্বারাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ডি এস ছিলেন। তিনি জানতে পারলে, তার নির্দেশে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেন। ঐ সময় শাকুর ডিসির কারনে আব্বা সহ অনেকে ৬/৭ মাস পটুয়াখালী শহরে উঠতে পারেননি। শুনেছি,একবার নাকি তার বাসার সামনে দিয়ে একজন কৃষি কর্মকর্তা মটর সাইকেল চলিয়ে যাচ্ছিলেন। তাকে সাজা হিসেবে মটর সাইকেল তার কাধে বহন করে নিতে হযেছে। তার অত্যাচরের কাহিনী এখনো অনেকের স্মরণ আছে। অবশ্য যারা ৭৫ দেখেননি বা শাকুরের সাথে গান বাজনা করেছেন, তাদের বিষয়টি মনে নাও থাকতে পারে। ঐ জেলা শাসক আব্দুস শাকুরই পরে ৯৬ সনের পরে আওয়ামী লীগের আমলে প্রোমোশন পেয়ে ধর্ম মন্ত্রনালয়ের সচিব হয়েছিলেন। পরের ঘটনাটি অন্যরকম। ঐ সচিব একবার বায়তুল মোকাররম এর কাছে একটি ইসলামী জলসায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ঐ সভায় নাকি সে খুব জোশে বক্তব্য রাখেন,” হাজার বছরের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর মত ভাল এবং আল্লাহওয়ালা শাসক এদেশে আর আসেনি”। চিন্তা করা যায, আব্দুস শাকুরের চিন্তা চেতনায় কত ডেভলপমেন্ট !। অথচ দুর্ভাইগ্য ঐ ইসলামী জলসায় কারা নাকি শাকুরের গায়ে পচা ডিম মেরেছিল !। বাংলাদেশের মানুষও পারে কতকিছূ !। ঐ বেটা ৭৫ দেখেনি, তাতে কি হয়েছে। তাই বলে ধর্ম সচিবের গায়ে পচা ডিম। ছি !। ছি, দেশে কি আর তাজা ডিম ছিলনা ! তাও আবার একটি ইসলামী জলসায় !। এভাবেই ছোট গল্পকার ,গায়ক, পটুয়াখালীর এক সময়ের জেলা শাসক, ৭৫ না দেখা, আব্দুস শাকুরের ইতিহাস। (ক্রমশঃ) এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ কৃষক লীগ। ২৭ মার্চ, ২০২১।