পর্ব ৫৪ :- ”যে ইতিহাসটি বলা দরকার” : এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজা
রিপোর্টারের নাম
আপডেট সময় :
Monday, January 3, 2022
233 Time View
এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজাঃ
বেচে থাকার কোন সংজ্ঞা নেই। সবাই যার যার মত করে বেচে থাকে। আপনি অনেক উচু জাগায় আছেন বা উচু পদে আছেন। খুব সাময়িক বিষয়। সে জন্যই আগের লেখায় বলেছি, মৃত্যু কোন দুর্ঘটনা নয়। দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্য হয়। সে একটা প্রক্রিয়া মাত্র। আমার আব্বা যখন ১৯৭৯ সনে পটুয়াখালী বাউফল আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এবং মনোনয়ন পাওয়ার ৩ দিন পর যখন বর্তমান এম পি, আ স ম ফিরোজ ভাই বরাবরে তার এম পি মনোনয়ন সেক্রিফাইস করেন, সে সময়টা আর এখন এক সময় না। আমার বিশ্বাস, ফিরোজ ভাই এটাকে বানোয়াট গল্প বলবেন। আর সে কারনেই হয়তো ফিরোজ ভাই ১৯৯৬ সনে আমার বরাবরে বাউফলের এম পি মনোনয়ন সেক্রিফাইস রেজুলেশন করেও তা জননেত্রী শেখ হাসিনা আপার কাছে পৌঁছাননি। হয়তো ওটাও অস্বীকার করবেন ফিরোজ ভাই, যদিও ঐ সেক্রিফাইসের রেজুলেশনের একটি ফটো কপি এখনো আছে। আমার প্রিয় নেতা আলহাজ আমির হোসেন আমু ভাইর কথা মতো গলায় ঝুলাইনি !।২০০৮ এর উপজিলা পরিষদ নির্বাচন, ২০১৪ সনে এম পি নির্বাচনে, ফিরোজ ভাই ও আমাকে জননেত্রী শেখ হাসিনা যৌথ মনোনয়ন দেন বা ২০১৯ সনে একই ভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনা ফিরোজ ভাই ও আমাকে বাউফলে এম পি নির্বাচনে যৌথ মনোনয়ন দেন। হয়তো এসব বিষয়গুলো এখন আর ফিরোজ ভাইর মনেও নেই। মনে থাকার কথাও না।আবার কিছু নিন্দুকেরা আছে তারা মাঝে মাঝে ঋণখেলাপী শ্লোগান দেয় এবং মাঝে মাঝে তার নির্বাচনের প্রার্থিতাও ঠেকিয়ে দেয়। আসলে আমাদের যার যে রকম দরকার, সে রকম করে মনে রাখি।এ ভাবেই সবাই যার যার মত করে বেচে আছি। আসলে ওটাই কি আসল বেচে থাকা। ফিরোজ ভাইরাও বেচে আছেন আমরাও বেচে আছি। মাঝ খানে খ ম জাহাঙ্গির ভাই অকালে চলে গেলেন , অনেক কিছুরই স্বাক্ষী ছিলেন তিনি। এখানে ৩০ বছরের আগের একটি নাটকের গল্প নিয়ে আসবো। খুবই কষ্টের মনে হবে। যদিও এখানে খুবই প্রসংগিক হবে না, তারপর ঐ গল্পটা না বলে পারছি না। আসলে গল্প না ! বেচে থাকার এক মারাত্নক ও করুন কাহিনী। ঐ নাটকের লেখক বা নাটকের নামটি স্মরণে আসছে না। তবে প্রধান চরিত্রে মামুনুর রশীদ ছিলেন, সেটা মনে আছে। দিনাজপুর বা চাপাইনবাবগঞ্জ এলাকার ঘটনা হবে। ওখানে বর্ডার এলাকায় যারা চোরাকারবারী করে তার মইধ্যে, এক গ্রুপ ভারত থেকে শাড়ীকাপড় এনে বাংলাদেশে বিক্রি করতো। এরকম কিছু চোরাচালান গ্রুপের মেয়ে সদস্য, যারা ছোট ছোট ২/৩ বছরের বাচ্চা, ভাড়া করে কোলে রাখত এবং তাদের শরীরের মইধ্যে ভারত থেকে কাপড় পেচিয়ে বর্ডার পাড় হতো এবং বর্ডার সিকুউরিটি গার্ড বা বাংলাদেশের তত্কালীন বি ডি আর দেখলেই, ভাব দেখাত, তার বাচ্চা কোলে নিয়ে মাঠ থেকে নিজ বাড়িতে ফিরচ্ছে। ঐ কোলের বাচচা তারা গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে ভাড়া আনতো। এমনই এক মহিলা, তার স্বামী নেই, একটি মাত্র বাচ্চা, অন্যকোন আয় নেই। সেই মহিলা তার বাচচা ভাড়া দিয়ে জীবন চালাত। রোজ ৫০/৬০ টাকা পেত। এভাবেই তারা বেচে থাকে। বর্ডারে এরকম নিত্যদিনের ঘটনায় হটাৎই একদিন বিডিআর চোরাকারবারীদের ধাওয়া করে !। তখন অনেক চোরাকারবারীদের সাথে ঐ মহিলা দৌড়াতে শুরু করে। এক পর্যায় দৌড়াতে দৌড়াতে সকলে নদীতে ঝাপ দেয় এবং সাথে ঐ মহিলাও ঝাপ দেয়। সকলে সাতরে ছোট নদী পার হয়ে অপর পাড়ে উঠে। কিন্তু ঐ ভাড়া করা শিশুটি হাত থেকে ছুটে যায় এবং শিশুটি পানিতে ডুবে মারা যায়। পরে স্থানীয় লোকজন ঐ শিশুটিকে নদী থেকে উঠিয়ে, কাছেই তার মায়ের বাড়ীতে নিয়ে যায়। তারপর যা হয় ! পুরো বাড়ি কান্নার মাতম। আহাজরি কাকে বলে, পুরো বাড়ি, পুরো গ্রামে, ঐ মা সহ সকেলের কান্নার রোল !। ঐ সময়, ঐ বাড়িতে আসেন গ্রামের প্রতিবাদী যুবক, যে এলাকায় সকল অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রীতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছে। সেই নায়ক মামুনুর রশীদ। তিনি আসলেন, কান্নার রোল চলছে অঝোরে। তিনি ঐ মৃত বাচ্চাটা ধরে নিজেও কাধলেন । তারপর ঐ মৃত বাচ্চার মাকে জিজ্ঞেস করলেন, ” মা তুমি ঐ ২/৩ বছরের বাচ্চাকে ঐ চোরাকারবারী মহিলার কাছে দিলে কেনো” । তখন ঐ মহিলা কান্না জড়িত কণ্ঠে বললো, “বাচ্চাটাকে ভাড়া দিয়েছিলাম, রোজ হিসেবে,৫০/৬০ টাকা পেতাম, তাও মাঝে মাঝে। এববেই তো আমরা বেচে আছি ! “। তখন মামুনুর রশীদ চিৎকার করে বল উঠলেন , “এর নামও কি বেচে থাকা” !। হা অনেকেই এভাবে বেচে আছে !।(ক্রমশঃ)।এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক লীগ।৩০ ডিসেম্বর ‘২০২০