আসলে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বাংলাদেশটা কে ওলটপালট করে দিয়েছে। কি রাজনীতি, কি সমাজনীতি, কি অর্থনীতি সব কিছুতে। আর যার ধারাবাহিকতা এদেশকে সইতে হচ্ছে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ব্যতিক্রম ছিল না। ৭৫ পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজনীতির কথা বলছিলাম। একদিকে জাসদ ছাত্রলীগ অন্যদিকে বি এন পির ছাত্রদল। সবার সথেই এই যুদ্ধ। শ্লোগান হত ” একটি করে বাকশাল ধর, সকাল বিকাল নাশতা কর, হত্যা কর জবাই কর, বাকশালী পান্ডাদের “। কি জঘন্য ও মারাত্নক শ্লোগান। সবে এসেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৬ অগাস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগে ভর্তীর ইন্টারভিউর তারিখ ছিল। পাবলিক এডমিনিষ্ট্রেশন এ ভর্তীর জন্য আগেই সিলেক্ট হয়ে আছি। বন্ধু আতাউর রহমান ডিউক এর জন্য আইন বিভাগে ভর্তীর কিছুটা ইচ্ছা ছিল। তারপর ১৬ অগাস্ট সকালে আইন বিভাগে যাওয়া, বিভাগীয় প্রধান কামরুদ্দীন স্যারের সাথে ঝগড়া। শেষ পর্যন্ত পাবলিক এডমিনিষ্ট্রেশন বিভাগেই ভর্তী হই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঠিকমত ক্লাস শুরুর আগেই শুরু হয় আমাদের সেই পথ চলা। জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর হত্যার প্রতিবাদে আমাদের সেই কঠিন দিনগুলো। সেই মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, গোলাম সরোয়ার, খ ম জাহাঙ্গীর, ফজলুর রহমান, বাহ্লুল মজ্নূ চুন্নু, গোলাম মহিউদ্দিন, রকিবুর রহমান, হাবিবুর রহমান খান,লায়েকুজ্জামান লায়েক, ভাইদের সাথে শুরু হয় আমাদের নিরন্তন সংগ্রাম।জেল থেকে বের হলে রবিউল মোক্তাদির ভাইকে পাই। পরে ওবায়দুল কাদের ভাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি হন এবং জেল থেকে তিনিও বেড় হলে তার নেত্রীত্ত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে কতদিন কত সময় চলে গেছে। কত মিছিল কত সমাবেশ, কত আন্দোলন, কত সংঘাত, কত দু:সহ দিনগুলো। তারপর ডাকসু নির্বাচন। আসলে অনেকেই বলেন, যারা ৭৫ থেকে ৮১ দেখেনি, তারা সেই দুর্দিন দেখেননি। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন।প্রতিটি সময় কাটতো জিয়া স্বৈরাচারের ত্রাসে। আমার কবি জসিম উদ্দিন হলেই থাকতো তত্কালীন ছাত্রদলের সভাপতি, এনামুল করিম শহিদ সহ বেশ কজন ছাত্রদল নেতা। যেদিন আমাদের কোন প্রোগ্রাম থাকতো,সেদিন খুবই টেনশনে থাকতাম, কখন হামলা হবে। এছাড়া পুলিশের ভয়, রাতে অনেক সময় হলে থাকতাম না। সেই ওবায়দুল কাদের – রবিউল মোকতদির ভাইদের প্যানেলে ডাকসু তে, সদস্য পদে নির্বাচনের দিনগুলোর কথা এখনো স্পষ্ট মনে আছে। রোকেয়া হলে ডাকসু নির্বাচনের প্যানেল পরিচিত সভার আগে, ওবায়দুল কাদের ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, রেজা আজকে কি বক্তব্য দেবো, বলতো। আমার এখনও মনে আছে সেই দিনগুলো কথা। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টা, সবারই জীবনে অন্যরকম ভাবে মনে থাকে, অনেকেই নস্টালজিয়ায় ভোগেন। ২৪ ঘণ্টার মইধ্যে বেশিরভাগ সময় এহল থেকে ও হলে। রাজনৈতিক বা ব্যাক্তি জীবনে আমি কখনো কাজে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করিনি। ঐ সময় আমার যারা নেতা ছিলেন বা আমার যারা সহকর্মী ছিলেন বা বাংলাদেশের কৃষক লীগের সেই দীর্ঘ ২৮ বছরেও আমি তেমনটি চেষ্টা করেছি। কোন চরম দুর্দিনে নিজেকে গুটিয়ে রাখিনি। সেটা ৭৫ এর সেই মারত্নক দিন গুলো, এরশাদের ক্ষমতা দখল,নেত্রীর উপর গ্রেনেড হামলা বা কোন দুর্দিনে। এবার আমাদের অভ্যান্তরিন সেই দুর্দিনের সেই প্রসঙ্গে আসব। হ্যাঁ সেই লোমহর্ষক সেই ঘটনা। সেই মহিবুর রহিম রহিম বাবুলের কথায় আসবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আসার পরে,তার কাছাকাছি ছিলেন তিনি অনেক দিন। মাননীয় নেত্রীকে তিনি বিষয়টি বলে গিয়েছেন কিনা, তা আমি জানিনা !। ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি বড় ধরনের কর্মী সমাবেশের আগের দিনের ঘটনা।(ক্রমশঃ) এডভোকেট খোন্দকার শামসুল হক রেজা সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক লীগ । ১২ ডিসেম্বর ‘ ২০২০