ইদানিং লক্ষ করছি, বিভিন্ন সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে মোনাফেক, বেইমান, হাইব্রিড বদলে যাওয়া, পরবর্তন হওয়া ইত্যাদি শব্দ খুব বেশী ব্যবহার হচ্ছে । উপরোক্ত শব্দ গুলোর শাব্দিক অর্থের ভিন্নতা থাকলেও অনেকেই বিভিন্ন সময় একই অর্থে ব্যবহার করে ফেলি। কি রাজ্নীতি, কি ব্যাবসা, কি সমাজনীতি সব খানেই এমনটা হচ্ছে। আসলে করনাকালীন সময় আমারা অনেকেই অনেক ভাবে অস্থির হয়ে পড়েছি। যে যার মত করে বলছি। যার যেটা বলার কথা নয়, সেটা সে বলছে। যে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, সে দুর্নীতির বিরদ্ধে জোরালো বক্তব্য দিচ্ছেন। ফেসবুক , টেলিভিশন এ আমাদের উপদেশ খয়রাত দিচ্ছেন। ক্যু করে ক্ষমতায় এসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বলেন, আপনারা কেউ পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করবেন না। আমরা সে গুলো শুনছি। আর সে কারনেই হয়তো আমরা খেই হেরে ফেলেছি, বুঝেতে
পারছিনা কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ। কোনটা মোনাফেকী , কোনটা বদলে যাওয়া। কিছুদিন পূর্বে আমার এলাকার একটি সহযোগী সংগঠনের দায়ীত্ত্বপুর্ন নেতা, আমাকে বলে, রেজা ভাই,আওয়ামী লীগে ত্যাগী কারা জানেন ?
বললাম কারা । সে বললো, যারা অন্যদল থেকে অনেক কষ্ট করে, ত্যাগ করে এসেছে , তারাই ত্যাগী !। কত মারাত্তক কথা । ত্যাগ নিয়ে কত তাসছিল্লো। আসলে আমরা সবাই এখন সহজে পথে, সব কিছু পাওয়ার চেষ্টা করছি। পেয়েও যাচ্ছেন অনেকে। সেদিন সাবেক এক ছাত্রনেতা আমার একজন প্রিয় মানুষ, তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম, কোথাকার কোন ” ক” ভাই, সেও নাকি ” খ ” সংগঠন এর ” গ ” পদে ছিলেন। তা এখন জানলাম। ঐ প্রিয় মানুষটি কাছে ছিলেন, শুনলেন, কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন না। অথচ কত কষ্ট, কত অন্দোলন, কত আতঙ্কের মইধ্যে সময় পাড় হতো তার, কত সংঘাত, কত বিনিদ্র রজনী কেটেছে সে ভাবে, তার হিসেব নেই ! আর ওনাদের মত কিছু ব্যাক্তি, না, কিছু বিপ্লবী নেতারা আমাদেরও তাদের ঐ পথে নামিয়েছিলেন , ৭৫ এর অগাস্ট এর পর পরই। কত অন্দোলন, কত মিছিল,কত হরতাল, কত সংঘাতে কত দিন কত রাত কেটে গেছে। নোয়াখালীর ফারুক ভাই, নেতা হলেও মিটিং এর মাইক বানতেন। সোনাইমুড়ির গোলাম সরোয়ার ভাই, ঐ বয়সেও কোন ভাব দেখাতেন না। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মইধ্যে গ্রুপিং ছিল, কিন্তু জাসদ, জাতীয় ছাত্রদলের ঢালী বা ছাত্রদলের বিরদ্ধে কোন প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের ঐক্যবদ্ধ হতে এক মুহুর্তও সময় লাগত না। আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক, মুকুল বোস দাদা সভাপতি হন এবং নোয়াখালীর মহিবুর রহিম বাবুল সাধারন সম্পাদক। ১৯৭৮ সনে মধুর রেস্তরাঁয় ঐ সন্মেলনটি হয়। ঐ সন্মেলন কমিটি ঘোষনার দিন রাতেই, মুকুল দা গ্রেপ্তার হন। আমি এবং খ ম জাহাঙ্গীর ভাইও গ্রেপ্তরের কাছাকাছি গিয়েছিলাম। আমরা ২ জন, আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সন্মেলন এর কমিটি, পত্রিকায় দেয়ার জন্য টিকাটুলীর ইত্তেফাক অফিস হয়ে, সংবাদ অফিসে প্রেস রিলিজ দিয়ে একটি বেবিট্যাক্সিতে মধুর রেস্তরাঁর দিকে আসছিলাম। তখন সন্ধা। টি এস সির সামনে একটি আর্মির জীপ আমাদের বেবিট্যাক্সি টা থামাল। আমাদের সাথে অনেক দলীয় কাগজপত্র। ঐ গাড়িতে থাকা একজন আর্মি অফিসার ও একজন সিপাহী নামলো।তারা জাহাঙ্গির ভাই ও আমাকে গাড়ী থেকে নামতে বললো, আমরা নামলাম। অতপর ঐ আর্মি অফিসার আমাদের চারিদিকে একবার ঘুরল। আমাদের কোন প্রকার চেকিং না করেই, আমাদের তারাতারি চলে যেতে বললেন। আমরা বেবিট্যাক্সি নিয়ে মধুর রেস্তরাঁর দিকে ঢুকে গেলাম। আমরা বুঝতেও পারলাম না, কেন আমাদের ঐ আর্মি অফিসার, কোন চেক করলো না বা ছেড়ে দিলো, বা কেনো তারাতারি আমাদের চলে যেতে বললো।৭৫ পরবর্ত্তী সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজ্নীতীতে এধরনের অনেক ঘটনার মুখোমুখী বহুবার হযেছি। ঐ সময়ের যারা ছাত্রলীগের নেতা কর্মী ছিলেন তাদের অনেকেই বহু অত্যাচার, নির্যাতন, জেল জুলুম সহ্য করতে হয়েছে। আতঙ্কে কাটাতে হয়েছে দিনের পর দিন !।(ক্রমশঃ) এডভোকট খোন্দকার শামসুল হক রেজা, সাবেক সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক লীগ। ৩ ডিসেম্বের ‘২০২০