১৯৯৬ সনের নির্বাচন প্রসঙ্গে :- পরদিন বিকেলে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভেনুতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘোষনা হয়। আ স ম ফিরোজ ভাইর নামই ঘোষনা হয়, ৯৬ এর প্রার্থী হিসেবে। নমিনেশন ঘোষণার সময় জনাব শাহজাহান সাহেব বা ফিরোজ ভাইকে ওখানে পেলাম না। মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেলো । তখন আমার মনে হয়েছে, আসলে আমার আব্বাই রাজ্নীতী বোঝেন না। তা নাহলে, যখন আমাদের দেশে বড় রাজনৈতিক দলের প্রেসিডিয়াম পদ থেকে, পদত্যাগের উদাহরণ থাকলেও, কনফরম হারার সম্ভাবনা থাকলেও, আওয়ামী লীগের মতো দলের নমিনেশন পেয়ে, সেক্রিফাইস করা বা ছেড়ে দেয়ার কোন উদাহরন আমার জানা নেই। আর সে জন্যই বলছি, আসলে আমি না, আমার আব্বাই, রাজ্নীতী বোঝেন না ! । আর তার ধারাবাহিকতায় আমরাও সেটাই বহন করে চলছি বছরের বছর।আমাদের ঐ রেজুলেশনের কপিটা তারা ফেলে দিয়েছেন, না রেখে দিয়েছেন,তা এখনো জানিনা। সেটা যদি রেখে দিতেন আর যদি বিখ্যাত,ক্রিকেট খেলোয়ারদের ব্যাটের মত আজকে ২০ বছর পর, নিলামে বিক্রি হত, তাহলে, ঐ রকম দাম না পাওয়া গেলেও, বেশ কিছু দামে বিক্রি হত। আমিও কিনতে পারতাম বা ওখানে ২০ জন স্বাক্ষরকারী তারাও কিনতে পারতেন । ঐ টাকা দিয়ে, এখন এই সময় সাহায্যও করা যেতো, আর আমরাও আমাদের উত্তরশুরিদের দেখাতে পারতাম। জনাব মোঃ শাহজাহান মিয়া, জনাব আ স ম ফিরোজ ভাই আর আমি খোন্দকার সামসুল হক রেজা, আমরা ৩ জনই বেচে আছি এই ধরাধামে। কতো দেখা হযেছে, অথচ কোনো দিনই জিজ্ঞেস করা হয়নি, ঐ তথাকথিত রেজুলেশন টি এখনও তাদের কাছে আছে কিনা। তাদের একজন ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন, আরেকজন চিফ-হুইপ হয়েছিলেন, অথচ আমি এখনও জানতে পারলাম না। এমনও হতে পারতো, সেই মুল কপিটা পেলে গলায় তাবিজের মত আমিও ঝুলিয়ে রাখতাম। অন্তত নিলামে কিনে হলেও। প্রসঙ্গক্রমে এখানে একটি ছোট্ট কথা আনবো। বছর ২ পূর্বে আমার ছোট ছেলে আরিফ, তখন ৫ম শ্রেণীতে পড়ত। ফার্মগেটে কৃষিবীদে পূজার দাওয়াত। ও খুব দুষ্টামি করতো। তাকে বললাম, কৃষিবীদে কৃষক লীগের একজন মাস্তান নেতা আছে। ওখানে যেয়ে দুষ্টামি করো না। তাহলে তোমার সমস্যা করে দেবে । তখন ও বললো, আববু ,তাকে বলে দিয়ো ,” আমি তাদের ঐস্কুলের মাস্টার ছিলাম”। আমি থ খেয়ে গেলাম। ওকে প্রশ্ন করলাম, তুমি এগুলো কোত্থেকে শিখেছো। ও বললো,”বলবো না ! ” এ ধরনের কথা, ও এখনও মাঝে মাঝে বলে। প্রশ্ন করলেই,বলে, বলবো না। অথচ সেই ছেলের কাছে বসে যখন, কাউকে ফোনে, রস করে, কোন খারাপ পরামর্শ দিলে, আমাকে এখনো ছবক দেয়, “তুমি যা পারোনা না, বা করো না, তা অন্যকে করতে বলো না !”আমি তাকে প্রশ্ন করি, তুমি একথা পেলে কৈ। তখন সে বলে, ” শুনেছি হাদিসে নাকি আছে, আর তুমিও তো আমাকে বলেছো ! ” আসলে আমাদের জীবনটা এমন। সবার সব কিছু হয় না। সবই নিয়তি। হয়তো একারনেই “সেই ফিরোজ ভাইর সাথে, জনাব শাহজাহান সাহেবের সেই আগের সময়টা এখন আর নেই” বা “২০০৯ তে আমাকে হারিয়ে ফিরোজ ভাই যে, মজিবর রহমান ভাইকে উপজিলা চেয়ারম্যান বানিয়েছিলেন, তার সাথেও সেই আগের সময়টা নেই”। অথচ আমরা এখনো আছি। আছেন, ৯৬ এর এডভোকটে শাহজাহান সাহেব, আছেন ফিরোজ ভাই, আছেন সেই সাবেক উপজিলা চেয়ারম্যান মজিবর ভাই, আছি আমি। অথচ এখন সময়টা আমাদের হাতের নাগালে নেই ! (ক্রমশঃ) ।
এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক লীগ ৭ জুন ‘ ২০২০ ।