এরপর ১৯৯১ এর কেয়ারটেকার সরকারের অধিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ঐ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেত্রীত্তে আওয়ামী লীগের বিরাট বিজয়ের সম্ভাবনা থাকলেও উচ্চ পর্যায়ের কিছু আমলা, বিভিন্ন সংস্থা, অসত ব্যাবসায়ী, আণ্ডারওয়াল্ড এবং দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের কারনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ঐ সময় সমগ্র বাংলাদেশে বি এন পির কোন সাংগঠনিক অবস্থা ছিলো না, ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেয়ার মতো প্রার্থীও ছিলো না। (৯১ এর নির্বাচন নিয়ে ভিন্ন পর্বে বিস্তারিত লিখতে আশারাখি)। এখানে একটি বিষয় বলে রাখি। আমার একটু লেখালেখির ঝোঁক ছিলো। কিন্তু কখনো বেশীদুর এগুতে পারিনি। ১৯৭৮ এর প্রথম দিকে গোপীবাগ থেকে ভোলার নিজামুদ্দিন আহমেদ সাহেব ” সাপ্তাহিক মুক্তিবানী ” নামে একটি পত্রিকা বের করতেন । মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর থেকে প্রথম পত্রিকাটি প্রকাশ হয়। ওই সময় ইত্তেফাকের সিনিয়র সাংবাদিক নাজিম উদ্দিন ভাইর মাধ্যমে নিজাম সাহেবের সাথে আমার পরিচয়। নিজাম ভাই, সাথে সাথে আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টার বানিয়ে দেন। তারপর থেকে” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ” হেডিং এ আমি নিউজ করতাম এবং অনেক দিন লেখালিখি করেছি। তারপর ” “সাপ্তাহিক খবর ” পত্রিকায় কিছুদিন লিখেছি।তখন কোন পত্রিকাই আমাদের নিউজ খুব একটা দিতো না।তাই ওগুলোই আমাদের ভরসা ছিল। সেই অভিজ্ঞতায় এরশাদ সরকারের শেষ দিকে আমার সম্পাদনায় ” সাপ্তাহিক ক্রান্তি ” নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করি। ডিকলারেশন এখনো বহাল আছে। ঐ সময় আমার সাথে ছিলো এডভোকটে সফিকুল ইসলাম চৌধুরী, শওকত হোসেন শানু সহ কয়েকজন। ঐ সময় ১৯৯১ সনে বি এন পির বিরুদ্ধে কয়েকটি নিউজের কারনে, আমার পত্রিকার হকারদের উপরেও হামলা হয়েছিল । তখনও আমি বাউফলে রাজ্নীতী শুরু করিনি।আমার আব্বা অনেকের মতো চাইতেন না,তার হাত ধরে, তার ক্ষমতা ব্যাবহার করে, রাজ্নীতী করি, সে জন্য আব্বা যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন আমি বাউফল কেদ্রিক কোন রাজ্নীতী করিনি। ঢাকা ও পটুয়াখালী কেন্দ্রিকই আমার কাজের ক্ষেত্র ছিলো । ১৯৯২ সনের প্রথম দিকে , বিকেলে রাজু ভাইর অফিসে রাশেদ মোশারফ ভাইর সাথে দেখা। তার সাথে বহু আগে থেকেই আমার জানাশোনা ছিল। রাজু ভাইর কাছের মানুষ। রাজু ভাইর সামনে বসেই তিনি আমাকে বললেন,রেজা তুমি কৃষক লীগ করো । সামনে কৃষক লীগের কাউন্সিল । আরও বললেন, সামনে মানিকগঞ্জ জেলা কৃষক লীগের কাউন্সিল। আমির হোসেন আমু ভাই প্রধান অতিথি। আমাকেও যেতে বললেন। পরদিন সকাল বেলাই আমি আমু ভাইর ইস্কাটনের বাসায় গেলাম। তাকে বিষয়টা বললাম। আমু ভাই আব্বার কারনে আমাকে খুব পছন্দ করতেন। তিনি বললেন ভাল কথা, রাশেদ কে আমি বলে দেবো এবং তিনিও আমাকে মানিকগঞ্জ যেতে বললেন এবং মানিকগঞ্জ কাউন্সিলে গেলাম এবং সেই থেকে কৃষক লীগে আমার চলা । ব্যাক্তি আমু ভাই আর রাজনৈতিক নেতা আমু ভাইর সাথে আমার সেই সম্পর্কটা, সেই প্রথম থেকে ছিলো এবং এখনও আছে, সেই আগের মতো। তিনি আমাকে সব সময় খুব স্নেহ করেন। মানিকগঞ্জ কাউন্সিলে শেখ ফরিদুল আলমের সাথে পরিচয়, মানিকগঞ্জ কৃষক লীগের যুগ্ম আহবায়ক ছিলো। খুব ভালো ছিলো ছেলেটা। ১৯৯৩ সনে সে কেদ্রীয় কমিটির সহ প্রচার সম্পাদক হয়। তার অনেক পরে অকালে হটাৎ পৃথিবী থেকে চলে যায়। প্রায়ই তার কথা মনে পরে। তার ছোট ভাই শেখ ফারুক এখন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। তার ভগ্নিপতি জনাব মোহম্মদ আলমগীর সাহেব এখন সিনিয়র সচিব হিসেবে নির্বাচন কমিশনের সচিব। তিনিও খুব ভাল মানুষ । এক সময় রাশেদ মোশারফ ভাই যখন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তখন তার পি এস ছিলেন । ১৯৯৩ সনে আমু ভাইর নির্দেশেই রহমত আলি ভাই এবং রাশেদ ভাই আমাকে কৃষক লীগের আইন সম্পাদক করেন এবং সেই থেকে কৃষক লীগে চলা। ১৯৯২ সনের প্রথম দিকে আমি বাউফলের রাজ্নীতী শুরু করি মূলত: আব্দুল মালেক সাহেবের নির্দেশে বঙ্গবন্ধু পরিষদ মাধ্যমে। রাজনৈতিক কারনে যখন প্রথম বাউফলে গেলাম, তখন একজন নেতা, যে আব্বার খুব কাছের মানুষ ছিলেন, আমারও কাছের মানুষ, পটুয়াখালী কেন্দ্রীক ছাত্রলীগ রাজনীতিরও নেতা ছিলেন, বাউফল থানা আওয়ামী লীগের এক সময় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন, ফিরোজ ভাইর এক সময়ের কাছের লোক ছিলেন , এখনও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, তবে ফিরোজ ভাইর সাথে নেই। তার সাথে দেখা হলো, বাউফল – দাশপাড়ার ব্রিজের কাছে একটি হোটেলে । সে আমাকেই দেখেই বললো, “আপনি বাউফলে এসেছেন, আপনার মতলবটা কি ?, আপনি কি ফিরোজ সাহেবকে ডুবাতে এসেছেন” আমি কোন কিছুই না বুঝে জিজ্ঞেস করলাম, এর মানে ! । তখন সে বললো, “বাউফলে প্রায় সব নেতা কর্মী আপনার আব্বার হাতের নেতাকর্মী। আপনি বাউফলের রাজ্নীতীতে আসলে সকলে, আপনার সাথে সকলে চলে যাবে “। এভাবেই আমার বাউফলে রাজনৈতিক যাত্রা । এরপর অবিরাম এগিয়ে চলা । একদিকে খালেদা জিয়া বিরোধী অন্দোলন, অন্য দিকে বাউফল সহ পটুয়াখালী জেলায় কৃষক লীগ সংগঠন গড়ে তোলা । সেই নেতার কথাই শেষ পর্যন্ত সত্য হলো। খুব অল্পদিনের মাঝে বাউফলের আওয়ামী লীগের পুরাতন ও দুর্দিনের নেতা কর্মীরা আমার সাথে কাজ শুরু করে। ধীরে ধীরে ফিরোজ ভাইর সাথে আমার দুরত্ত বেড়ে যায়। এরই মাঝে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বাউফলে একটি জনসভার প্রোগ্রাম দেয়। সম্ভবত ১৯৯৫ সনের দিকে। বাউফলের ঐ জনসভায় এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা, পরে বি এন পি নেতা ফজলুর রহমান পটলও বক্তৃতা করেন। ঐ জনসভায় পটল সাহেব, ফিরোজ ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি বি এন পি করলেও জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কোন দিন, কোন অবমূল্যায়ন কখনো করিনি। তিনি তখন ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট এর বরিশালের প্রসঙ্গে তোলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙা, কুকুরের গলায় বঙ্গবন্ধুর ছবি ঝুলিয়ে মিছিল করা, ইত্যাদি অনেক কথা বলেন এবং তিনি বরিশালের ফিরোজ সাহেবের কর্মকান্ড নিয়ে চ্যালেন্ঞ্জ ছুড়ে দেন। ঐ জনসভার পরে বাউফলে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হয় এবং নেতা কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন । এর কিছু দিনের পরেই বাউফল উপজিলা আওয়ামী লীগের বিশেষ কাউন্সিল ডাকা হয়।এডভোকেট খোন্দকার শামসুল হক রেজা, সবেক সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক লীগ ৩ জুন ‘২০২০।