এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজাঃ
১৯৮৬ সনের নির্বাচনের পর,হোসেন মোহম্মদ এরশাদ, পুরাতন কায়দায় প্রেসিডেন্টশিয়াল পদ্ধততে সরকার চালাতে থাকে । অন্যদিকে জননেত্রী শেখ হসিনার নেত্রীত্তে আওয়ামী লীগ জোট,এরশাদ বিরোধী অন্দোলন কে তীব্র থেকে তীব্রতর করে তোলে এবং শেষতক ১৯৯০ এর গন অদ্ভুত্থানের মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হসিনার নেত্রীত্তেই সামরিক স্বৈরাচার, লেজেহোমো এরশাদের পতন ঘটে এবং ৩ জোটের রূপরেখা অনুযায়ী , মাননীয় প্রধান বিচারপতি জনাব শাহাবউদ্দিন আহমেদএর নেত্রীত্তে নতুন কেয়ারটেকার সরকার গঠিত হয় এবং ১৯৯১ সনের নতুন সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়। মাঝখানে ডাক্তার মিলন, আমার বাল্যবন্ধু বাউফলের সেলিম, ভাণ্ডারিযার দেলোয়ার সহ কতো মানুষের জীবন চলে গেলো ! আমাদেরও অনেকের জীবন যায় যায় করেও আল্লাহর রহমতে বেচে গেছি । এরশাদ বিরোধী অন্দোলনের শেষ দিকে, মানিক মিয়া এভেনুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিরাট মিটিং এর মঞ্চে জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর যখন এরশাদের বাহিনীর সশস্ত্র হামলা হয়েছিল, সেদিন অনেকের মত,আমিও আল্লাহর রহমতে বেচে গেছি, অনেক কষ্টে কলাবাগান ক্লাবের টিঙ্কুদের বাসায় আশ্রয় নেই। এরশাদ বিরোধী অন্দোলনে আমার কত ভুমিকা ছিলো, তা ফজলুর রহমান রাজু ভাই থাকলে ভাল বলতে পারতেন। কলাবাগানের রাজু ভাইর ডলফিন চেয়ারকোচের অফিস ছিলো এরশাদের বিরুদ্ধে, আমাদের হরতালের নিত্য দিনের ঠিকানা। এরশাদ বিরোধী অন্দোলনে আমার আব্বার যে কতো অবদান ছিলো, তা বর্তমান পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী আলমগীর ভাই এবং সাধারন সম্পাদক ভি পি মান্নান ভাই ভাল বলতে পারবেন। পটুয়াখালী আওয়ামী লীগের বর্তমান নেত্রীত্তের ২ জনের ৭৫ পরবর্তীতে অবদান অনেক। রাজ্নীতীতে তাদের কোন “ব্রেক অফ স্টাডি নেই”(ব্রেক অফ স্টাডি ” শব্দ কথাগুলো শুনেছি, রাজ্নীতীর মাঠে, অনেকের দল বদলের সময়)।এবার একটু পেছনের দিকে যাবো। ১৯৮৬ সনের নির্বাচনের পর এরশাদ সরকারের যখন পিগ আওয়ার চলছে, তখন একদিন একটি পরিবারিক প্রোগ্রামে দাওয়াত দিতে, জাতীয় পার্টির এক সময়ের সাধারন সম্পাদক, রুহুল আমিন হাওলাদার ভাইর গুলশানের বাসায় যাই, যিনি সম্পর্কে আমার ফুপাতো ভাই ( রুহুল ভাইর বড় চাচা আমার আব্বার বড় ভগ্নীপতি ছিলেন, যিনি আমাদের বাড়িতেই বাড়ি করে থাকতেন, শুনেছি রুহুল ভাইদের এক সময় অনেক জায়গা জমি ছিলো, কদমতলা নদীর ভাঙনে অনেক সম্পত্তি বিলীন হয়ে গেছে ।রাজনৈতিক যোগযোগ না থাকলেও আত্তীয়তার সম্পর্ক সব সময় আছে) তার সাথে কথার এক পর্যায় তিনি আমাকে বললেন,” মামাতো ভাই,( তিনি আমাদের এভাবেই ডাকেন), মামাকে তো কখনো পারলাম না। তুমি আমাদের দলে আসো । বাউফলে জাতীয় পার্টির ভাল ক্যান্ডিডেট পাচ্ছিনা “। আমি না ভেবেই বললাম,” রুহুল ভাই, আজিজ খন্দকারের ছেলে কি সেটা পারবে ? “। তখন তিনি বললেন, মামা আর তোমাদের অহংকারই, তোমরা আগাতে পারছো না !, তার পর চলে আসলাম। রুহুল ভাই আব্বাকে খুবই সন্মান করতেন।১৯৮৭ সনের দিকে, আমি কলাবাগানে থাকি। আমি তখন ঢাকা বারে হিসেবে আইনজীবী হিসেবে প্রাকটীস শুরু করেছি। আমাদের ” লেকভিউ ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর ” নামে একটি বড় সুপার শপ ছিলো,ওখানে তত্কালীন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সম্পাদক, জনাব আব্দুল মালেক সাহেব, ঐ সুপার শপে, মাঝে মাঝে বাজার করতে আসতেন (মালেক সাহেব ১৯৭৩ সনে আব্বার সাথে রাজবাড়ির এম পি ছিলেন এবং ১৯৯৬ এ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ছিলেন)। একদিন তিনি হটাৎ করেই বললেন, তুমি এডভোকেট হয়েছো, তুমি বঙ্গবন্ধু পরিষদ টা করো। অতপর তার কথা মতো, আমি তখন পটুয়াখালী জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদ গঠন করি, যার সভাপতি হন এডভোকেট কাজী ফজলুল হক ভাই ( বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী আলমগীর ভাইর বড় ভাই) এবং আমি সম্পাদক হই। ঐ পরিষদ মাধ্যমেও আমি পটুয়াখালী কেদ্রিক অনেক প্রোগ্রাম করেছি। মূলত: এরশাদ বিরোধী অন্দোলণে আমি বঙ্গবন্ধু পরিষদ মাধমেই সব অন্দোলন সংগ্রাম করেছি। এরশাদের সরকারের শেষ দিকে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। তখন বাউফলের এম পি ছিলেন,আ স ম ফিরোজ ভাই। ঐ নির্বাচনে যদিও দলীয় মনোনয়ন ভিত্তিক ছিলনা, তবুও ঐ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে,আওয়ামী লীগ সিদ্দিকুর রহমান ফরাজি কে প্রথম মনোনয়ন দেয় ( আমি যখন ১৯৭৮ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র লীগের দপ্তর সম্পাদক ছিলাম, তখন সিদ্দিক ফরাজি ভাই,ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, যার বড় ভাইর নবাবপুর রোডের বাসায় বসেই, আব্বার ১৯৭৯ সনের নমিনেশন সেক্রিফাইস এর বৈঠক হয়েছিল, তার এক ভাগিনা আলাউদ্দিন সাহেব, সোনালী ব্যাংকের জি এম।বর্তমান এম পি এবং প্রতিমন্ত্রী জনাব কামাল আহমেদ মজুমদার তখন ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন ) ৭৫ পরবর্তীতে সিদ্দিক ভাইর অবদান যে কত ছিল ,তা ঐ সময়ের সকল নেতারাই জানেন অথচ আ স ম ফিরোজ ভাই এম পি থাকার সুবাদে, কয়েক দিন পরই, তার আপন বড় ভাই,জনাব রেজা মোল্লা ভাইকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেন । ফলে ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২ জন প্রাথী থাকায়, জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রাথী শহিদুল আলম তালুকদার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। আর ঐ পরাজয়ের ক্ষোভ, দুঃখ,কষ্ট আর “তথাকথিত উপখ্যানের ” খেসারতে সিদ্দিক ফরজির মতো ,৭৫ দেখা একজন মানুষ, চিরজীবনের জন্য রাজ্নীতী ছেড়ে ঢাকার মিরপুরে সকলের অগোচরে কোন মতে বেচে আছেন।(ক্রমশঃ) এডভোকেট খোন্দকার শামসুল হক রেজা, সবেক সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক লীগ ২ জুন ‘ ২০২০