জিয়া বিরোধী অন্দোলন তখন তুঙ্গে। পটুয়াখালী কেন্দ্রিক জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে সকল অন্দোলন সংগ্রামে আব্বার ভুমিকা ছিলো ব্যাপক। আমারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ও পটুয়াখালী কেন্দ্রিক ব্যাপক ভুমিকা ছিল। এরপর সামরিক স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান পতন হয়, ১৯৮১ সনে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে আরেক সামরিক ক্যুর মাধ্যমে । শুরু হয় আরেক সামরিক স্বৈরাচার লেজেহোম এরশাদ ( লেফটেন্যান্ট জেনারেল হোসেন মোহম্মদ এরশাদ) সাহেবের শাষন। সেই একই কায়দায়। তিনি জাতির উদ্দেশ্যে এক বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে অনেক কিছুর সাথে আরও বলেছিলেন, ” তিনি দেশে গণতন্ত্র দেবেন, ভোটে দেবেন এবং কেউ পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করবেন না “। অথচ উনি নিজে কোন দরজা দিয়ে, কিভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন, সেটা কিন্তু বলেননি। যদিও বাংলাদেশের মানুষ সকলেই তা জানে । এভাবেই এরশাদ সাহেব আবার সামরিক শাসন চলিয়ে যায়। আওয়ামী লীগের সংগ্রাম আবার চলতে থাকে। তবে জাতির সৌভাগ্য, ইতিমধ্যে ১৯৮১ সনে আমাদের মাঝে এসে পড়েছেন, আমাদের সেই আরাধনার ধন, সব হারিয়ে যে নিজের মাথায়, সব দায়িত্ব নিয়ে আমাদের মাঝে এসেছেন, আমাদের কালের শ্রেষ্ট কৃষকদরদী, আমাদের আস্থার ঠিকানা, শত প্রতিকুলতার মাঝেও, যিনি সত্যের পথে এগিয়ে যান, সেই বহু প্রতিক্ষিত, আমাদের সেই প্রিয়নেত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা “শেখ হসিনা ” ( প্রিয় নেত্রীর বাংলাদেশ আসার মুহূর্তটা নিয়ে ভিন্ন একটি পর্বে বিস্তারিত লেখার আশারাখি )
১৯৮১ সনে এরশাদ সাহেব ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের অন্দোলন সংগ্রাম সেই আগের মতই আবার পুরোদমে শুরু হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের এরশাদ সরকার বিরোধী বহু আন্দোলন সংগ্রামের এক পর্যায়, ১৯৮৬ সনে হোসেন মহম্মদ এরশাদ ,সংসদ নির্বাচন দেন। ঐ নির্বাচনও ছিলো নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন।যেহেতু ঐ সময় আওয়ামী লীগ জোটবদধ ভাবে এরশাদ বিরোধী অন্দোলনে ছিলো, সেহেতু এরশাদ বিরোধী নির্বাচনেও জোটগত ভাবে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন করে এবং জোটনেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা আপা ১৯৮৬ সনের ওই নির্বাচনে, পটুয়াখালীর বাউফল আসনে ন্যাপের প্রাথী, সৈয়দ আশরাফ হোসেন সাহেব কে আওয়ামী লীগ জোটের মনোনয়ন দেন। ঐ সময় জোটবদ্ধ নির্বাচন হলেও, জোটের প্রাথীরা, তাদের দলের নিজস্ব প্রতীক নিতে পারতেন। যেহেতু আশরাফ সাহেব ন্যাপের প্রবীন এবং সিনিয়র নেতা ছিলেন। তাই তিনি নৌকা মার্কা নানিয়ে নিজ দলের ” কুড়ের ঘর ” প্রতীক নেন। আর এ সুযোগ নেন আ স ম ফিরোজ সাহেব। আমাদের অঞ্চলে ” নৌকা ” বলতেই সাধারন মানুষ, আওয়ামী লীগ বোঝে। তখন ফিরোজ সাহেব, আশরাফ সাহেবের নৌকা মার্কা না নেয়ার সুযোগে, জননেত্রীর সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রাথী হয়ে যান। আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচন করলে সে আর আওয়ামী লীগে থাকে না। অথচ ফিরোজ সাহেব, তখন আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অমান্য করে,নিজেকে বাউফল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি দাবী করে, থানা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রাথী হিসেবে, পোস্টার ছেড়ে, নির্বাচনে অংশ নেন ( অথচ থানা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ার কোন এখতিযারই ছিলো না )। এমনকি তিনি বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় এ বক্তৃতাও দেন যে, “জননেত্রী শেখ হাসিনা, এবারের নির্বাচনে বিশেষ কারনে, কাউকে নৌকা মার্কা দেননি, তাই আপনারা থানা আওয়ামী লীগের প্রাথী হিসেবে এবং থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, হিসেবে আমাকে ভোট দিবেন “। এভাবেই তিনি আওয়ামী লীগ নামে নির্বাচন করেন । যেহেতু আমাদের এলাকায় কখনো ” কুড়ের ঘর ” মার্কার অবস্থান ভালো ছিলো না এবং এরশাদের পার্টির কোন অবস্থানই ছিলো না,ফলে ” কুড়ের ঘর ” মার্কার সাথে ফিরোজ সাহেব, থানা আওয়ামী লীগ প্রাথী হিসেবে ” রিক্সা মার্কায় ” পাশ করে যান। আর ঐ প্রক্রিয়ায় এম পি হয়ে তার ক্ষমতা সহ সবকিছু বেড়ে যায়। ফলে সেই ” তথাকথিত ১৯৭৯ সনের আব্বার মনোনয়ন সেক্রিফাইস বা ফিরোজ সাহেবের অঙ্গীকার রাখার আর সময় কোথায় “, সেই “উপখ্যান ” এখানেই শেষ নয়। সেটা চলতে থাকে অবিরাম গতিতে । ক্রমান্বয়ে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে ! । এটা শুধু আমার আব্বা বা আমাদের পরিবারের প্রতিই নয়, অনেক পুরাতন ও নিবেদিত আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথেও তেমনটা করা হয়েছে। (ক্রমশঃ) এডভোকেট খোন্দকার শামসুল হক রেজা, সাবেক সাধারন সম্পাদক,বাংলাদেশ কৃষক লীগ। ৩০ মে’২০২০।