পর্ব ২২: “যে ইতিহাসটি বলা দরকার”: এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজা
রিপোর্টারের নাম
আপডেট সময় :
Monday, August 30, 2021
205 Time View
এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজাঃ
অতপর আব্বাই, আব্দুর রাজ্জাক ভাইর কাছে গেলেন এবং ফিরোজ সাহেবের পক্ষে নমিনেশন সেক্রিফাইস এর কথা জানান। তখন আব্দুর রাজ্জাক ভাই, বিষয়টা ভালো ভাবে নেননি। তিনি আব্বাকে আবার ভাবতে বলেলন। আব্বা বললেন” যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি এবং ফিরোজ কে বলে দিয়েছি, সেহেতু এটা আমি আর মত বদলাতে পারবো না ।” তখনও আমাদের মনে আসেনি, “রাজ্নীতীর তথাকথিত বাস্তবতার কথাটা ” যেটা এখন আমরা বছরের পর বছর হাড়ে হাড়ে অনুভব করছি। এরপর আব্বার পরিবর্তে, ৩ দিন পর আ স ম ফিরোজ সাহেবের এর মনোনয়ন ঘোষনা হয়। অতপর নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু। ফিরোজ সাহেব বাউফলে কিছু এলাকায় জীবনে কখনো যাননি, রাজ্নীতী তো দুরের কথা । আব্বাই ঘুরে ঘুরে মিটিং করেন। অনেক জায়গায় বলতে হয়েছে কালাইয়ার ব্যাবসায়ী ইদ্রিস মোল্লার ছেলে তিনি। পটুয়াখালী অঞ্চলে ভাসানী ন্যাপ এর লোকজন দিয়েই প্রধানত বি এন পি গঠিত হয় । বাউফলে ভাসানী ন্যাপ সংগঠন না থাকায় বি এন পি সংগঠন বড় করতে পারে নি। তাছাড়া আব্বাই বাউফলে আওয়ামী লীগ সংগঠন গড়ে তুলেছেন। বলতে গেলে আব্বার সাজানো বাগানে আ স ম ফিরোজ সাহেবের ফুল তোলা। নৌকা মার্কায় ফিরোজ সাহেব এম পি হন।
আ স ম ফিরোজ সাহেব ১৯৭৯ সনে এম পি হয়েই, তার যে ” বিজয় অধ্যায় শুরু “এবং বিপরীত ভাবে তার যে ” নতুন রাজ্নীতীর উপাখ্যানও শুরু ” যে ইতিহাসটাও অনেক বড় অনেক কালিমালিপ্ত। আগেই বলেছি,১৯৭৯ সনের নির্বাচনে আ স ম ফিরোজ সাহেব বরাবরে নমিনেশন সেক্রিফাইস করা এবং তার নির্বাচনে বিজয়, আব্বার ও আমাদের পরিবারের জন্য “তথাকথিত বর্তমান সমাজের জন্য একটা পরাজয়ের অধ্যায় ” । যা আমরা বছরের পর বছর হাড়ে হাড়ে অনুভব করছি, প্রতি মুহুর্তে। যে অধ্যায়টা কাউকে শেয়ার করতে, না আব্বা পেরেছে, না আমরা পারছি । এ অধ্যায়টা এতো কষ্টের ! ! ! ।
১৯৭৯ সনে ঐ সময় আব্বা পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ- সভাপতি ছিলেন। তত্কালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম সাহেব ইতিমধ্যে মৃত্যুবরন করেন। ইতিমধ্যে মজিবর রহমান তালুকদার সাহেবও পুনরায় আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন । (মজিবর তালুকদার সাহেব ১৯৭০ সনে আওয়ামী লীগের এম পিএ ছিলেন, যিনি পাক বাহিনীর কাছে সারেনডার করায়, স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধুর সরকার তার এম পি এ পদ বাতিল করেন ) । সামনে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। আব্বা এবং মজিবর রহমান তালুকদার সভাপতি পদে প্রাথী এবং এম পি হাবিবুর রহমান মিয়া সাধারণ সম্পাদক প্রাথী। এটা সেই সন্মেলন ,যে সন্মেলনে আব্বাকে সমর্থন করার অঙ্গীকার করেছিলেন, বাউফলে ফিরোজ সাহেব বরাবরে, নমিনেশন সেক্রিফাইস করার সময়। ফিরোজ সাহেব এম পি হয়েই পটুয়াখালী জেলা সন্মেলনের আগেই, বাউফল থানা আওয়ামী লীগের সন্মেলন করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যায়। তাছাড়া ছোট নিজাম খান এর সাথেও কমিটমেন্ট, নির্বাচনের পরেই কাউন্সিল, যেখানে সে সাধারণ সম্পাদক হবে । বাউফল থানা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের বড় আয়োজন। যার বেশিরভাগ খরচই নাকি ছোট নিজাম খানের শশুর, হাসন দালাল সাহেব দিয়েছেন।নিদ্দিষ্ট দিনে কাউন্সিল শুরু হয়। আমার আব্বা বাউফল আওয়ামী লীগের গোরাপত্তন করেন । শুরু থেকেই আব্বা পটুয়াখালী মহকুমা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং তখনও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ- সভাপতি এবং বাউফল থানা আওয়ামী লীগের ১ নং সদস্য। অথচ ঐ কাউন্শিলে আব্বাকে দাওয়াত পর্যন্ত করেননি ফিরোজ সাহেব। জনাব আব্দুল গফুর সাহেব তখন বাউফল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হেমায়েত উদ্দিন মিয়া সাধারণ সম্পাদক, তারাও আসেনি ঐ কাউন্সিলে। কাউন্সিলের নামে সভা শুরু করে, প্রথমেই আ স ম ফিরোজ সাহেব নিজেকে” সভাপতি “ঘোষনা করেন । তারপর সাধারণ সম্পাদকের পালা। ১৯৭৯ সনের নির্বাচনে আব্বাকে সেক্রিফাইস করানোর পিছনে যার ভুমিকা ছিল সব চেয়ে বেশী, সেই ছোট নিজাম খান, অপেক্ষা করছেন, কখন তার নাম” সাধারণ সম্পাদক” ঘোষণা করা হয়। এর মাঝেই ফিরোজ সাহেব দাড়ালেন। তিনি দাড়িয়ে কিছু আকর্ষণীয় বক্তৃতা দিয়েই বললেন, “ভাইসব, আমার বয়স অনেক কম, তাছাড়া আমি বাউফলের রাজ্নীতীতে একদম নতুন। তাই তার সাথে একজন সিনিয়র লোক না দিলে দল চালাতে পারবেন না “। অতপর তিনি নিজেই, তার চেয়ে অনেক অনেক বয়স্ক, জনাব ওয়াদুদ মিয়ার নাম প্রস্তাব করেন এবং ওযাদুদ মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষনা করেন। ফলে বেহেস্তে চলে যায়, ছোট নিজাম খানের অনেক অনেক অনেক আশা, যে আশা ঐ আব্বার নমিনেশন সেক্রিফাইসের সময় ফিরোজ সাহেব দিয়েছিলেন এবং যে নিজাম খান, ফিরোজ সাহেবের ” দিস অয়ে দেট ওয়ে ম্যানেজ” করার মাধ্যম ছিলেন ।( ছোট নিজাম খানের অংশটুকু তার মুখ থেকেই শোনা । অন্যগুলো সকলের জানা )। এভাবেই শুরু হয় জনাব আ স ম ফিরোজ সাহেবের ওই উত্থান । ওই সন্মেলনে আব্বাকে থানা আওয়ামী লীগের কোন সদস্যও রাখা হয়নি। এভাবেই, আব্বার আমলের পুরাতন, নিবেদিত,৭৫ এর পর কঠিন সময়ের নির্যাতিত, জেল খাটা নেতারা, গফুর সাহেব, হেমায়েত মিয়া, সেকানদার তালুকদার, পুন্ন চন্দ্র মজুমদার,এডভোকটে ইউনুস মিয়া, , মানিক মিয়া, গিয়াসউদ্দিন মৃধা ,ডাক্তার আব্দুল খালেক , সামসুল আলম, রশীদ মিয়া,বড় নিজাম খান, সিদ্দিক মিয়া, ছোট নিজাম খান,আলি আহমেদ ভাইরা এই ধরাধাম থেকে,মনে অনেক কষ্ট নিয়ে চলে গেছেন। আর সিদ্দিকুর রহমান ফরাজী, জসিমউদ্দিন ফরজি, মকবুল তালুকদার,রফিক তালুকদার, ,এস এম ইউসুফ, এ এন এম জাহাঙ্গির চেয়ারম্যান, এনামুল হক,জাহাঙ্গির উল্লাহ ,মো মোয়াজ্জেম মেম্বার ভাইরা ক্ষোভ,অভিমান আর মনের কষ্ট নিয়ে এখনো কোন রকম বেচে আছেন। অথচ যারা ১৯৭৫ দেখেনি, যারা আজিজ খন্দকার সহ ঐ সকল নেতাদের সাজানো বাগানে ফুল তুলছেন, তারাই আজ সান-শওকত নিয়ে, বগল দাবড়ীয়ে এলাকা শাষন করে যাচ্ছেন ! এটাই নাকি নিয়তি । এরপর পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সেই কাউন্সিল। জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সাথে সাথে ফিরোজ সাহেব নেমে যান, কি ভাবে আব্বা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ না পান। যেহেতু তখন তিনি এম পি, আবার বাউফল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে গেছেন, সেহেতু তার মুভমেণটটাও জোরালো ছিলো। পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ কাউন্সিলে ২ টি কমিটি দাখিল হয়। সকলের ধারনা ছিলো, আব্বা সভাপতি হবেন এবং হাবিব ভাই সাধারণ সম্পাদক হবেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তখন সভাপতি জনাব আব্দুল মালেক উকিল এবং সাধারণ সম্পাদক জনাব আব্দুর রাজ্জাক। ঢাকায় ২ কমিটি জমা হয়। তখন ঐ ফিরোজ ভাই সহ কিছূ নেত্রীবৃন্দের তদ্বিরের কারোনে আব্বা আর সভাপতি হতে পারেননি। মজিবর রহমান তালুকদার যিনি,৭১ এ সারেন্ডার করেছিলেন,যার এম পি এ পদ বঙ্গবন্ধু বাতিল লড়েছিলেন, তাকে সভাপতি করা হয়। শুনেছি রাজ্জাক ভাইর ড্রাইভারেরও হাত ছিলো ঐ কমিটি করার পিছনে। এভাবেই, একের পর এক আ স ম ফিরোজ সাহেবের ,নমিনেশন সেক্রিফাইস এর প্রতিদানের ” উপখ্যান পর্ব ” শুরু হয় !।(ক্রমশঃ) এডভোকেট খোন্দকার শামসুল হক রেজা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক লীগ ২৮ মে’ ২০২০