পর্ব ২০ :- যে ইতিহাসটি বলা দরকার”: এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজা
রিপোর্টারের নাম
আপডেট সময় :
Thursday, August 26, 2021
243 Time View
এডভোকেট খোন্দকার সামসুল হক রেজাঃ
এরপর পটুয়াখালীতে নিচের পর্যায়ের আওয়ামী লীগের কিছু নেতা কর্মী এবং ভাসানী ন্যাপ, জাসদের লোকজন নিয়ে গঠিত হয় বি এন পি । কাজী আবুল কাশেম, আব্দুল আজিজ খন্দকার, হবিবুর রহমান মিয়া,নিজাম উদ্দিন তালুকদার , আন্দুল বারেক মিয়া, আব্দুস সালাম মিয়া,খান মোশারফ হোসেন , আব্দুল লতিফ খন্দকার,শাহজাহান ফারুকি, আব্দুল বারেক ঢালি,আব্দুল বারী এডভোকটে, জহর লাল সরকার,কাজী আলমগীর হোসেন , আব্দুল মান্নান হাওলাদার, বাদল ব্যানার্জি , গাজী আনোযার হোসেন, আব্দুল হক, ভি পি আব্দুল মান্নান, আব্দুল হক, খলিলুর রহমান মোহন, সৈয়দ বাবুল, সৈলেন চন্দ্র, সালেহ বাদল ,আদালত পাড়ার মতি,সহ অনেক নেতা কর্মী, মোস্তাক, জিয়ার সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বহু অন্দোলণ সংগ্রামে ব্যাপক ভুমিকা রাখেন । ঐ সময় আমিও মাঝে মাঝে,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পটুয়াখালী যেয়ে বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজে সময় দিতাম। আব্দুস সালাম ভাইর প্রেসেই আমরা সব সময় বসতাম।ঐ সময় আমি ” এক মুজিব লোকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে ” নাম একটি স্মরনিকাও প্রকাশ করেছিলাম। বাউফলে তখন আব্দুল আজিজ খন্দকার এর নেত্রীত্তে আব্দুল গফুর মিয়া, হেমায়েত উদ্দীন মিয়া, ডাক্তার ওয়াদুদ মিয়া, বাবু পুন্ন চন্দ্র মজুমদার,বড় নিজাম খান,ছোট নিজাম খান,কালাম খান, গিয়াস উদ্দিন মৃধা, সেকানদার তালুকদার, রফিক তালুকদার, এডভোকেট আবুল কাশেম, ইউনুস মিয়া, সামসুল আলম, জসিম উদ্দিন ফরজি,ডাক্তার আব্দুল খালেক , নবী আলি মৃধা মানিক মিয়া,সামসুল আলম,এস এম ইউসুফ সহ অনেক নেতৃবৃন্দ মোস্তাক,জিয়ার বিরূদ্ধে বহু অন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে বাউফলে আওয়ামী লীগ কে এগিয়ে নেন। এ বাউফলে মূলত: আমার পিতাই সেই ১৯৫৮ সন থেকে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছেন। ১৯৭৫ এর পূর্বে বা ৭৫ পরবর্তি সেই দুর্দিনে সাবেক চিফ হুইপ ও বর্তমান এম পি সাহেব কে কখনো দেখিনি। বিশেষ করে ১৯৭৯ সনের নির্বাচনের পূর্বে তাকে বাউফলের রাজনিতীতে কখনো দেখা যায়নি ।তবে জানতাম, তিনি ১৯৭৫ এর পূর্বে এবং পরে বরিশাল জেলার সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা এবং ৭৫ পরবর্ত্তিতে খন্দকার মোস্তাকের প্রতিমন্ত্রী নুরুল ইসলাম মঞ্জু সাহেবের রাজ্নীতীর সাথে জড়িত ছিলেন এবং বরিশাল কেদ্রিকই তিনি বসবাস করতেন। ৭৫ এর অনেক ঘটনাও আছে তাকে নিয়ে। এরপর সেই পার্লামেনট নির্বাচন। হা সেই ১৯৭৯ সনের জিয়াউর রহমান এর সময়, পার্লামেনট নির্বাচনের কথা বলছি ! । যে নির্বাচন আব্বার জীবনে, আমদের জীবনে পৃথিবীর “তথাকথিত বাস্তবতার” কাছে পরাজয়ের অধ্যায় শুর । ঐ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই বরিশাল থেকে বাউফলে নির্বাচনের মাঠে আসেন, সাবেক চিফ হুইপ ও বর্তমান এম পি জনাব আ স ম ফিরোজ সাহেব। তখন পর্যন্ত ফিরোজ সাহেবের বরিশাল কেন্দ্রীক সকল ঘটনা আমাদের জানা ছিলো না। শুধু জানতাম তিনি নূরুল ইসলাম মঞ্জু সাহেবের গ্রুপের লোক, যিনি খম্দ্কার মোস্তাক সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন । পরবর্তীতে জাতীয় নেতা আমির হোসেন আমু ভাই।তত্কালীন ছাত্রনেতা, ১৫ অগাস্ট এর পরে ৩৪ মাস জেল খাটা, খান আলতাফ হোসেন ভুলু ভাই, জাহাঙ্গির কবির নানক ভাই,সিনিয়র আইনজীবী জনাব কায়ুম সাহেব সাহেব সহ অনেক নেতার কাছ থেকে, বরিশালের সেই ১৫ অগাস্ট এর ঘটনার অনেক কিছু জেনেছি । ঐ সময় বরিশাল থেকে প্রকাশিত,নুরুল ইসলাম মঞ্জু সাহেবের ভাইর পত্রিকা “বিপ্লবী বাংলাদেশ “এ ১৫ অগাস্ট এর খবর গুলো বিস্তারিত ছাপা হয়েছিল। যাহাহোক ১৯৭৯ সনের নির্বাচনে আব্বা আওয়ামী লীগের নমিনেশন চাইলেন । আ স ম ফিরোজ সাহেবও নমিনেশন পেপার ফাইল করেন । ঐ সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন, জনাব আব্দুল মালেক উকিল এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন,জনাব আব্দুর রাজ্জাক সাহেব। ৯১ নং নবাবপুর রোডে তখন আওয়ামী লীগ অফিস। নির্ধারিত সময় নমিনেশন ঘোষণা হয় এবং আব্বাই ৭৯ এর নির্বাচনের আওয়ামী লীগের নমিমেশন পান । এর পরই ,জনাব আ স ম ফিরোজ সাহেব আওয়ামী লীগের নমিনেশন বদলানোর জন্য উঠেপড়ে লেগে যান। এক দিকে আব্বার হাত পা ধরতে থাকেন,অন্য দিকে এলাকার কিছু আওয়ামী লীগের নেতাদের ” দিস ওয়ে দ্যাট ওয়ে ” ম্যানেজ করেন। যার প্রধান নেতৃত্ব দেন, ছোট নিজাম খান (যার শশুর বাউফলের বড় ব্যাবসায়ী হাসন দালাল )। এছাড়াও অন্য আরো কিছু নেতাদের ম্যানেজ করেন ঐ একই কায়দায়। এছাড়া পরবর্তি বাউফল থানা আওয়ামী লিগ কাউন্সিলে ছোট নিজাম খান কে সাধারণ সম্পাদক করা হবে মর্মে অঙ্গীকার করা হয়। এরপর ফিরোজ সাহেব ও নিজাম খান সাহেবেরা একদিকে আব্বার হাত পা ধরা শুরু করে এবং অন্য দিকে বাহিরে প্রচার করতে থাকে,খম্দ্কার সাহেব ফিরোজ সাহেবের পক্ষে নমিনেশন সেক্রিফাইস না করলে, ফিরোজ সাহেব” মিজান আওয়ামী লীগ” ( মিজানুর
রহমান চৌধুরী তখন আওয়ামী লীগের ছোট একটা গ্রুপের নেত্রীত্তো দেন) থেকে নির্বাচন করবে এবং বি এন পির প্রার্থী কে সমর্থন দেবে।( ওই সময়ের ঘটনা গুলো পরে সেই ছোট নিজাম খান, যে আব্বাকে নানা ডাকতো, তিনি আব্বাকে বলেছেন, আমাকেও বলেছেন) এভাবে প্রতিদিন হাত পা ধরাধরি আর অন্য দিকে, “মিজান আওয়ামী লীগ”থেকে নির্বাচন করার হুমকি চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ৩ দিন পরে, নবাবপুর রোডে তৎকালিন মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিক ফরাজির বড় ভাইর ভাসায় এক বৈঠক বসে। ওখানে খ ম জাহাঙ্গীর ভাই, তত্কালীন পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিয়া , আ স ম ফিরোজ, তার বড় ভাই রেজা মোল্লা,সিদ্দিক ফরজি সহ অনেকে ছিলেন । আমার বন্ধু আতাউর রহমান ডিউকও ছিলো ( ডিউক সূর্যসেন হলের ভি পি ও জি এস ছিলো)। সভা শুরুর আগে হটাৎ ডিউক ঐ নিজাম খান কে মারতে গেলো। আমরা ডিউককে অনেক কষ্টে থামালাম। এরপর আলোচনা শুরু হল। এক পর্যায় ফিরোজ ভাই আব্বার পা ধরে বসলো । আব্বা কিছু বলছেন না । আমরাও কিছু বলছি না। হটাৎ হাবিব ভাই বলে বসলেন, চাচা, আপনি ফিরোজকে নমিনেশন ছেড়ে দেন ! (পটুয়াখালীর রাজনীতিতে আব্বা হাবিব ভাইকে খুব পছন্দ করতেন। হাবিব ভাইর বাবা,আব্বার একজন বড় মোয়ক্কেল ছিলেন। তাছাড়া পারিবারিক ভাবে, আমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক) আব্বা তখন চোক থেকে পানি ছেড়ে বললেন , ” হাবিব তুমিও বলছো !”। তখন হাবিব ভাই বললেন , চাচা ফিরোজে বিশেষ কিছু লোককে ম্যানেজ করে ফেলেছে। তাছাড়া চাচা,রাজ্নীতী আগের মতো নেই,ছেড়ে দেয়াই ভালো। তা নাহলে ফিরোজ মিজান আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করবে এবং বি এন পির প্রাথীর্কেই এম পি বানাবে। তখন আব্বা ভাবলেন, এমনিতে তখন আওয়ামী লীগের অবস্থা ভালো না, আবার বি এন পির নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন। তাই আব্বা শেষ পর্যন্ত তার এম পি মনোনয়ন, ফিরোজ সাহেব বরাবরে সেক্রিফাইস করার সিদ্ধান্ত নেন। তখন আব্বা হটাৎ দাড়িয়ে সবার সামনে বললেন, ” ফিরোজ, আমি তোমাকে এম পি নমিনেশন সেক্রিফাইস করছি। তবে তোমার কাছে একটা কথা চাচ্ছি, সামনে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল, ঐ কাউন্সিলে আমি সভাপতি প্রার্থী। আমি চাই, তুমি আমার পক্ষে থাকো এবং পরবর্তি পার্লামেনট নির্বাচনে তুমি আমাকে আওয়ামী লীগের এম পি মনোনয়নে সমর্থন করো “। তখন ফিরোজ সাথে সাথে আব্বার কাছে এসে বসলেন এবং আব্বার হাত ধরে, বললেন, ” আমি অঙ্গীকার করছি,আগামী পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ কাউন্সিলে আপনাকে সভাপতি পদে সমর্থন দেবো এবং পরবর্তি এম পি নির্বাচনে আপনাকে সমর্থন করবো ” ! ২৭ মে’২০২০