বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ তালুকদারঃ
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নায়ক শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের ৯৬তম জন্মদিন গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছেন তারই ভাগিনা ঢাকা মহানগর উত্তর মোহাম্মদপুর থানার ৩১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সহ-সভাপতি, বিশিষ্ট সমাজ সেবক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ তালুকদার।
তিনি আরো জানিয়েছেন ২৩ শে জুলাই ১৯২৫ সনে যার জন্ম তিনি ছিলেন এই মাটির শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ। গ্রাম: দরদরিয়া, থানা: কাপাসিয়া মহকুমা জয়দেবপুর, জেলা : ঢাকা । পিতা মৌলবী ইয়াসিন খান। মাতা: মেহেরুন্নেসা। পিতা ছিলেন ধার্মিক আরবি শিক্ষায় শিক্ষিত ।বাড়ির পশ্চিমে শীতলক্ষা নদী, সেই নদীর চরে সোনালী আঁশ পাট শত মণ জন্মাইত। তার পাশ দিয়ে বহু পুরাতন একটা প্রাচীর প্রায় বিশ ফুট উঁচু আজও ঠাই দাড়িয়ে আছে।
বাড়ির উত্তরে পূর্বে, দক্ষিণে পুরা গ্রামটি গজারী বনে ঢাকা।কথিত আছে মোঘল আমলে এক যায়গীরদার এই গ্রামে দূর্গ নির্মাণ করতে চেয়েছিল। স্থানীয় লোকজন দৌড়িয়ে দিয়েছে তাই গ্রামের নাম দরদরিয়া হয়েছে। তার স্বাক্ষী এখনও একটা ইটের তৈরী মসজিদ ও মাটির উঁচু দেয়াল এখনও কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে।
এই গ্রামের বাঘ, বানর, সাপ কিলবিল করে। গ্রামে মাটির রং ছিলো লাল। গ্রীষ্মে মাটি শক্ত হয়ে চৌচির হয়ে যেত। বর্ষাকালে বৃষ্টিতে কাদা হয়ে যেত। বাবার কষ্টে উপার্জিত পাট বিক্রির টাকা রাতে ডাকাতরা নিয়ে যেত। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া বাঘে নিত। বাঘে ছাগলের মাথায় ধরে টানিত।
মা মেহেরুন্নেসা পা ধরে টেনে বাঘের কাছ থেকে ছাগল ছিনিয়ে আনিত।
শৈশবে তিনি এই প্রতিকূলতায় বড় হলেও মানুষের উপকার করতে কার্পণ্য করতেন না।
তখনকার ব্রিটিশ ভারতে এ বাংলায় কলেরা, বসন্ত যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া মহামারীতে যখন গ্রামকে গ্রাম মানুষ মরে উজার হয়ে যেত তখন তিনি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুকুর, নদীর পানি পান করতে নিষেধ করতেন। থানায় থানায় স্যানিটারী ইন্সপেক্টরদেরকে রোগীর বাড়ি নিয়ে যেতেন। তিনি কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন মানুষ যখন কলেরা, বসন্ত, মহামারিতে মরে গ্রামকে গ্রাম উজাড় হয়ে যেত, তখন কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশদের খুশি করতে বলতেন ” আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”।
তিনি তুখোড় ছাত্র ছিলেন। ক্লাসে তিনি ফাস্ট হতেন। তিনি অত্যন্ত সৎ মেধাবী ছিলেন। বরাবর তিনি দূর্নীতি বিরোধী ছিলেন। ফরেস্ট অফিসার ঘুষ খেতেন। সেই ফরেস্ট অফিসারকে ঢাকা থেকে দূর্নীতি দমন অফিস হতে লোক নিয়ে ফরেস্ট অফিসারকে হাতেনাতে ধরিয়ে দিয়ে তাকে চাকরিচ্যুত করেন ফরেস্ট অফিসার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নতুন আগত ফরেস্ট অফিসার কাজে যোগদান করার পর তাজউদ্দীন আহমদ ও মফিজ উদ্দিন আহমদ এর নামে ডাকাতি মামলা দেয়। ডাকাতি প্রমাণ করতে না পারায় মামলা খারিজ হয়ে যায়।
তিনি অত্যন্ত মেধাবী রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি বলতেন আজ যদি ৫ বছর পর কী হবে তা বলতে না পারি তাহলে কিসের রাজনীতিবিদ। স্বাধীনতার পর তিনি বলেছিলেন” ইতিহাস সত্য হলে আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামীরা কেউ বেঁচে থাকবোনা। প্রতি বিপ্লবীরা ক্ষমতা কেড়ে নিবে”।
আগেই বলেছিলাম ডাকাত এবং বাঘের সাথে লড়াই করতে হতো। ছোট ভাই কত বলেছে একটা বন্দুক কিনে দিন তা তিনি দেননি।
১৯৭০ সনে একদিন দুপুরে তিনি ডাকছেন লিলি, লিলি দেখো একটা বন্দুক এনেছি। ৭ টা গুলি ভরা যায় তবে কম হলে ভালো চলবে। আমি শুনে অবাক হয়ে গেলাম এখন কেনো বন্দুক কিনিলো।
তিনি সশস্ত্র বিপ্লবে বিশ্বাস করতেন সুভাষ বোস আজাদহীন ফৌজ গঠন করেছিলেন। তিনি ভারত থেকে পালিয়ে আফগানিস্তান হয়ে রাশিয়ায় যান সেখান থেকে জার্মানিতে যেয়ে হিটলারের সাথে দেখা করেন। সেখান থেকে ডুবো জাহাজে জাপান যান সেখানে তিনি পরে নিখোঁজ হন।
বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ ২৫ শে মার্চ আত্মগোপনে যান। পরে তিনি ভারতে পালিয়ে যান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা করে ১০ই এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। সেই সময়ে অনেকে সরকার গঠনে বাধা প্রদান করেন। তারা বিপ্লবী কমান্ড কাউন্সিল গঠনের পক্ষে মত দেন। তিনি তাও অগ্রাহ্য করে ১৭ই এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের শপথ নেন এবং মুক্তিবাহিনী গঠন করেন।
খন্দকার মোশতাক সহ অনেকে পাকিস্তানের সাথে আপোস করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কে মুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধ বন্ধ করার প্রস্তাব দেন। তিনি সেই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে তিনি বলেন আমরা বঙ্গবন্ধুকেও চাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাই। কোনো আপস করে নয়। ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যকে আত্মসমর্পণ করিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেন এবং বঙ্গবন্ধু কে কারাগার থেকে মুক্ত করে ১২ ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী করে তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।